বাংলার মানুষের মুক্তি উদ্ভাসিত হয়েছিল ৬ দফায় : প্রধানমন্ত্রী

0
472

 ::নিজস্ব প্রতিবেদক::

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তান আমলে নিপীড়ন, নিষ্পেষণ, শোষণ, বঞ্চনা থেকে বাঁচতে বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবসে রোববার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি। করোনাভাইরাস সঙ্কটকালে অনলাইনে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘৬ দফা দাবিটা জনগণ এমনভাবে লুফে নিয়েছিল, আমি জানি না, পৃথিবীর কোনো দেশে এত দ্রুত কোনো দাবি এত বেশি জনপ্রিয়তা পেতে পারে।’ পাকিস্তান আমলে ভাষা অধিকার বঞ্চিত হওয়া থেকে শোষণ-নিপীড়নের প্রেক্ষাপটে ছয় দফা দাবিতে বাংলার মানুষের এক হওয়ার দিকটি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলার মানুষ এটা নিয়েছিল তাদের বাঁচার অধিকার হিসেবে। এই দেশের মানুষ এত দ্রুত ৬ দফাকে সমর্থনই শুধু করেনি, তারা স্বায়ত্তশাসনের এই দাবিকে নিজের দাবি হিসেবে গ্রহণ করল। বাংলার মানুষের মুক্তির দাবি হিসেবে এই ৬ দফা সকলের সামনে উদ্ভাসিত হল।’

স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ডাকা এক জাতীয় সম্মেলনে পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। তিনি ১১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন এবং বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ৬ দফার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বাংলার সর্বস্তরের জনগণ এই ৬ দফা সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করে এবং ৬ দফার প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬ দফা দাবি আদায়ে ঢাকাসহ সারা বাংলায় আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল পালিত হয়।

বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯৬৬ সালের ৭ জুন কর্মসূচি সফল করতে গিয়ে পাকিস্তানি শাসকদের হাতে নিহত শ্রমিক নেতা মনু মিয়া, আবুল হোসেন, শফিক, শামসুলসহ যারা জীবন দিয়েছিলেন তাদের স্মরণ করেন। ৬ দফা দাবির পটভূমি তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “এই দাবির মূল বক্তব্য ছিল যে প্রদেশ হিসেবে এই দেশের, আমাদের দেশের মানুষকে সুরক্ষিত করা, অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করা, বাংলাদেশের এই অঞ্চল অর্থাৎ এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নতি এবং প্রতিরক্ষার দিক থেকে এই অঞ্চলকে সুরক্ষিত করা। সেই সাথে সাথে বাঙালির যে অস্তিত্বের দাবি সে দাবিটা তুলে ধরা।”

এই দাবিটা তুলে ধরতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাধা পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হল, আমাদের বাংলাদেশেরও দুই-একজন নেতা সেখানে বাধা দিয়েছিল।’ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ফিরে ৬ দফার সমর্থনে বঙ্গবন্ধুর দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়ানোর তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাত্র ৩৫ দিনের মধ্যে ৩২টা মিটিং তিনি করেছিলেন সারা বাংলাদেশে। এর মধ্যে যখন যেখানে যেতেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হত। এভাবে ৮ বার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের আদমজিনগরে যেই জনসভাটা করেন, তারপর তিনি ঢাকায় ফিরে আসলে তাকে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আর জামিন দেওয়া হয়নি।’

ছয় দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন দমনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের নির্যাতনের বিবরণ জানতে বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটি পড়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দমন-পীড়নে ৬ দফা দাবির আন্দোলন আরও জোরালো হওয়ার তা স্তব্ধ করতে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়েনর করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৬৮ সালে ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হল। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দেওয়া হল, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে এই মামলা পরিচিতি পেয়েছিল। আসলে মামলাটা ছিল রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করা হল এবং সামরিক-অসামরিক ৩৪ জনকে মামলার আসামি করা হয়। সেই মামলার প্রধান অভিযোগটাই ছিল যে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তান থেকে এই পূর্ববঙ্গকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছে।’

ওই মামলার পর মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল, যা রূপ নিয়েছিল গণঅভ্যুত্থানে। যার ফলে মামলা তুলে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানি জান্তা সরকার। ৬ দফা দাবি বাংলাদেশকে কীভাবে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়েছিল, তাও বলেন শেখ হাসিনা। ৬ দফার ভিত্তিতে ৭০ এর নির্বাচন। যে নির্বাচনে সমগ্র পাকিস্তানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়। কাজেই ৬ দফা এবং ৭ জুন, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এই আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’র প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

ছয় দফা দাবি বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের এক দফা দাবিতে কীভাবে পরিণত হয়েছিল, মূল প্রবন্ধে তা তুলে ধরেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

আলোচনা সভার পাশাপাশি ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন ও তার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন বিষয়ে তরুণ প্রজন্মকে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে রোববার রাত ৯টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত এক ঘণ্টাব্যাপী ‘শতবর্ষে শত পুরস্কার’ শিরোনামে একটি অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য প্রায় ২ লাখ প্রতিযোগী নিবন্ধন করে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। আয়োজকরা জানান, যত দ্রুত সম্ভব ফল ঘোষণা করে কুইজ প্রতিযোগিতায় ১০০ জন বিজয়ীকে পুরস্কার প্রদান করা হবে।

১ম পুরস্কার ৩ লাখ টাকা, ২য় পুরস্কার ২ লাখ টাকা, ৩য় পুরস্কার ১ লাখ টাকা, ৪র্থ পুরস্কার ৫০ হাজার টাকা, ৫ম পুরস্কার ২৫ হাজার টাকা এবং বিশেষ পুরস্কার ৯৫টি প্রতিটি ৫ হাজার টাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here