কবিতার পোষ্টমর্টেম/ সৈয়দ রনো

0
761

কবিতার পোষ্টমর্টেম

সৈয়দ রনো

এ লেখাটি কবিতা নয়, কবিতার পোষ্টমর্টেম। আমি লিখতে বসলেই চারপাশের নির্মমতায় কলমের ডগায় হয় রক্তক্ষরন। প্রতিদিন মাথার মগজে বেড়ে ওঠে কবিতার শতশত পংক্তি। যা ব্যাকরণ প্রকরণহীন আবেগের উচ্ছাস। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, শুধু আবেগে কী জীবন চলে? হয়তো চলে হয়তো চলে না। জন্মভূমির অসময়ের গর্ভপাতে ভূমিষ্ট হয় নমরূদ কিংবা ফেরাউনের প্রেতাত্মা। তখন আমি শব্দ কিংবা ব্যাকরণের প্রতিক্ষায় তো আর বসে থাকতে পারি না। প্রলয়ংকারী তান্ডবে শান্তি প্রিয় মানুষের চোখে মুখে ভেসে ওঠে আতঙ্কের ছাপ। এ যেনো এক মগের মুল্লুক কিংবা আইয়ামে জাহিলিয়াত এর যুগ পার করছি আমরা। সুখ শান্তি বির্সজন দিয়ে ভাবতে থাকি আমার জন্মভূমি এখন বেজন্মার রাহুগ্রাসে ভিনদেশি আলেপ্প নগরি। যেখানে কারো কোন দায় নেই দায়িত্ব ও নেই।অসহনীয় ব্যর্থতায় কোথায় পালাবে আমার এ দেহ, কোথায় পালাবে আমার মন। একটু শান্তির ছায়া তলে দাঁড়িয়ে আমি, বুকের ভেতর জমে থাকা তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে গাইতে চাই শান্তির গান। কৃষ্ণ বিলাপে যোগির ধ্যানের পূর্নতায় আমোদে আল্লাদিত হোক আমার মাটি।এই যে বর্বরোচিত হামলা, এটা কার পাপের ভূমিষ্ট ফসল। আমি কি কখনো চেয়েছি তিলোত্তমা নগরি কিংবা উন্নয়নের নামে অসভ্যতার উৎকণ্ঠা। স্বার্থবাদীর ইচ্ছার তলোয়ারে দ্বিখন্ডিত যে মস্তক তাতো ক্ষমতাধরদের যতসামান্য উপহার। চতুরতার চশমা আটা চোখে দেখেও না দেখার ভান করে প্রতিদিন কৌশলী কথার জালবুনে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার কিছু কারিগর ওরা।

পরিনত সভ্যতার মস্তকে পড়াতে চায় অসভ্যতার লৌহ মুকুট। ধর্মীয় মূল্যবোধের নামে যে ফতোয়া চাপিয়ে দিতে চায় কিছু সুবিধাবাদী মুসলিম, খৃষ্টান, ইহুদি কিংবা হিন্দু, ধীক তাদের অমুনষ্য বিবেক। এই অসভ্যতার বিক্রীত মতবাদ ভেঙ্গে উদিত হোক নতুন সকাল, হযরত মুহম্মদ, যিশুখ্রিষ্ট, গৌতম বৌদ্ধের শান্তির পতাকা তলে জড়ো হয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই শান্তির পথে। আমরা কাউকে ছোট করতে চাই না। ব্যস্ত ঈশ্বর পল্লীতে আমরা বসাতে চাই প্রাণের মিলন মেলা। মানবতা বিপর্যয় এর এই চরম মূহুর্তে আমি ভাব ভাবনা নিয়ে গাম্ভীর্যপূর্ণ কবিতার চরণ সাজাতে চাই না, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই এভাবে আর চলতে পারে না, এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না, এভাবে আর চলে না, এই লেখা আমার কবিতার পোষ্টমর্টেম, এই হত্যা যজ্ঞ, এই নির্মমতার পরিধি এতো ব্যাপ্তি যে, গতানুগতিক কবিতার প্রতিবাদের ভাষায় আমি মোটেই সন্তুষ্ট নই। আমি এভাবেই প্রতিবাদের পংক্তিতে সাজাতে চাই কাব্যস্তবক।

নির্মোহ নির্লোভ কবিতাকে

নিয়ে যাওয়া হলো লাশকাটা ঘরে

চিৎহয়ে পরে আছে কবিতার শরীর

পাশে ছিন্ন ভিন্ন সব অলংকার

উপমা আর, রূপকের বাড়াবাড়িতে

কবিতা হলো দুর্গন্ধময়

চিত্র কল্পের জ্বলন্ত চিতায়

দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো কবিতা

শিল্প গুনের নির্লিপ্ততায়

ডোম, মুচি মেথর কিংবা পাঠান, শেখ, ইহুদি

হাবুডুবু খাচ্ছে কবিতার ছন্দে

গীত রসে টই টুম্বুর কবিতা এখন

নব বধুর গর্ভ ধারনের কষ্ট

অর্থ আর ব্যঞ্জনা না বুঝার আক্ষেপে, কোকিয়ে কেঁদে উঠে পৃথিবী

সবাই একত্রে বলে আমরা মানুষ

ধ্যানমগ্ন নিশ্চুপ ঈশ্বর মৃদু হেসে তখনো দাঁড়িয়ে আছে পাশে

শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করে তপ্ত হৃদয়ের আকুতি।

আমি কখনই এমন কবিতা চাইনি। যে কবিতা তৈরি করে মানুষে মানুষে বৈষম্য। আমি চেয়েছি বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে এগিয়ে যাক আগামী। এই পৃথিবীর ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, বংশ ভেদাভেদ ভুলে মানুষের হৃদয় হোক মানবিক।

ব্যাকরণ প্রকরণে শত শুদ্ধ কবি লড়াই সংগ্রামে ছিনিয়ে আনবে বাংলার শান্তি। শাহবাগ হতে মতিঝিলের প্রলয়ংকারি তান্ডব। পিলখানা ট্রাজেডি, রানা প্লাজার ধ্বংস যজ্ঞ কিংবা গুলশানের মতো হত্যাযজ্ঞে কবিতা হয়ে ওঠবে প্রতিবাদী। আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কবিতা থাকবে আপোষহীন। কবিতার সুঘ্রানে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে শান্তির আহ্বান।

দুঃখ আর হতাশার আবরণে ঢাকা পড়েছে বাংলার ভাগ্য আকাশ, কিছুটা নিবারণে শহর নয়, বিরান ভূমির সীমান্তবর্তী এলাকার আল ধরে হাঁটছিলাম। হঠাৎ ধূ ধূ প্রান্তরে চোখ আটকে গেল, দেখি ধবধবে সাদা পোষাকে দাড়িঁয়ে আছেন রাত জাগা ঈশ্বর। অবাক কা- সাথে কোন বান্দি দাসি নেই, কোন পাইক পেয়াদাও নেই। ঘোমটার ফাঁকে সলাজ বধূর হাসিতে একাই মাতিয়ে দিলেন মানব হৃদয়। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলি বাহারি মনের চমকপ্রদ কথা কিন্তু প্রসুত চিন্তা পূর্ণতা পাবার আগেই দেখি এ আমার মতিভ্রম। হয়ত ঈশ্বর পৃথিবীর পাপ পংকিলতায় স্বর্গলৌক থেকে নেমে আসেন মত্বে। পরিভ্রমণে জন্ম দেন এ রকম শত সহ¯্র কবিতার পোষ্টমর্টেম। আমি স্পষ্টত বুঝতে পাচ্ছি কালকেউটের বিষধর ছোঁবলে আমার দেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানাবার এ এক গভীর ষড়যন্ত্র। বুকটান করে যারা হাঁটে তাদের এলোমেলো কথার ফাঁক গলিয়ে ডুবে যাচ্ছে বাংলার অহমবোধের হাসি আহলাদের চিত্র।

ক্রসফায়ারই যদি হবে তাহলে হাতের নাগালে কেন? নিশানা তাক করো ভাগ্যবিধাতার বুকে। যিনি সৃষ্টি করেছেন ধনী গরিবের মধ্যে চরম বিভেদ। মতপার্থক্যের ভাসমান ¯্রােতে ভাসতে ভাসতে আমি তলিয়ে যাই অতলান্তে। পরস্পর দোষারোপের নষ্ট বাক্যব্যয়ে আজ বাংলার আকাশ হয়ে উঠেছে জঙ্গীবাদের প্রসস্ত জমিন। এ রকম পৃথিবীতো আমরা চাইনি। চেয়েছি মাত্র ক্ষুধায় এক মুটো অন্ন। বিশ্বায়নের এই সভাযুগে পড়শীদেশের পরকিয়া প্রেমের নাগর বাংলার উর্বর মাটিতে ধ্বংস লীলার এক চিত্রশালা বানিয়ে ফেলে। আইএস জঙ্গী বিশ্বমোড়লদের দেয়া সুবিধা মত নাম। এটা মৌলিক নয়, মোড়লদের খবরদারীর জন্য সৃষ্ট ফসল। বিভিন্ন দেশের গুপ্তচরদের লেলিয়ে দেয়া বিপদগামী কিছু তরুণদের মগজ ধোলাইয়ে আজকের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। ইহুদিদের সুকৌশলী ষড়যন্ত্রে আজ মুসলিমরা কলংকের বোঝা মাথায় নিয়ে কুজা হয়ে বসে আছে। নৈতিক মনোবলে চির ধরা সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিশ্ব গোয়েন্দা বাহিনী আমার উর্বর ভূমিতে আবাদ করছে অপ্রয়োজনীয় আগাছা, জঞ্জাল। একটু মাথা ঘামালেই দেখবো স্বার্থ হাসিল হচ্ছে ওদের আর অপবাদের জারজ সন্তানের বোঝা বইছি আমরা।

আমি কাকেই বা কি বলবো। নিজের বিবেক কে প্রশ্ন করি। এতো ধর্ম প্রচার নয়। এতো মুর্খতা। এতো বর্বরতা। এতো এ নৃশংসতার প্রলয়ংকারী তা-ব। একে একে সব আয়োজন শেষ। মাতব্বরদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই জঙ্গী। বিরোধী মত দমনের এ এক মোক্ষম সময়। গুম, খুন ভিন্ন ধর্মীয় মানুষ হত্যা যজ্ঞের এ যেন এক অভ্যয়রণ্য। এমনটি তো আমরা চাইনি। জঙ্গীবাদের তকমা লাগিয়ে এখন শুধু বন্দুকের নল তাক করে নির্বিচারে গুলি চালালেই স্বার্থ হাসিল। বেশ তো হিটলারী বুদ্ধিতে এখন থেকে মন গড়া মতোবাদে চলবে আমার দেশ। আর ভিন দেশীরা জঙ্গীদমনের পারঙ্গমতায় দাঁত কেলিয়ে হাসবে, উপহাসের হাসি। আর সময়ে সুযোগে গায়ে মেখে দেবে জঙ্গীবাদের তকমা।

এ হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর কাছে মুসলমানকে ছোট করার কুটকৌশল মাত্র। এ হত্যাযজ্ঞে নমরুদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয় মাত্র। আমি কারো কাছে বিচার দিতে আসিনি। আমি নিশ্চিত জানি বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে। আমি ফাঁসির দড়ি নিয়ে এসেছি; যারা পৃথিবীর মুসলমানদের শুলে চড়িয়েছে তাদেরকে গলায় রশি লাগিয়ে টেনে আনা হোক গলি থেকে রাজপথে। এরপর তারপর বিচার বসানো হোক সংক্ষুব্দ মানুষের বিবেক নামক আদালতে। যেখানে ন্যায় বিচারের স্বার্থকতায় পৃথিবী ভাসবে আলোর বণ্যায়।

এই দেশ আমাকে কাঁদিয়েছে। দেশের সরকার, সেতো ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা। আমি গণতন্ত্র চেয়েছিলাম, পাইনি। আমি সাংবিধানিক অধিকার চেয়েছিলাম, তাও পাইনি। ভাতের বদলে পেয়েছি বুলেট। তাইতো পিত্তো থলিতে গজায় পাথর।

সু-শাসন চাওয়ার প্রতিউত্তরে পেয়েছি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। এই জঙ্গীবাদ কার খামখেয়ালিপনার ফসল? এই হত্যযজ্ঞে গার্মেন্টস শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে, বিদেশি বায়াররা মুখ ফিরিয়ে নিবে, তাতে কে লাভবান হবে?

একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দাতাদের ফান্ড, শুধু টাকা আয়ের মূল সোর্স এখন পরশি দেশের নাগর। যদের কাছে বিক্রি হচ্ছে আমাদের ইজ্জত। ধীরে ধীরে আমরা সব ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের দালাল হয়ে যাচ্ছি। স্বাধীনতার ৪৬ বছরের অহংকারের সীমানার আল ভেঙ্গে ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে চায় নতুন সীমানা। এতো স্বাধীনতার মূলমন্ত্র নয়, এতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়। এতো ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার গোলামীচুক্তি মাত্র। আমি সব দেখেশুনে নির্বিকার যখন তখন আমার বুকের উপর দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক চালিয়ে তছনছ করে গুড়িয়ে দেয়া হলো আমার বুকে লালিত স্বাধীনতার মন্ত্র।

 

আলোকিত প্রতিদিন/১৬ আগস্ট’২০/এসএএইচ

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here