নিজস্ব প্রতিবেদক : বন্ধ ঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ব ২৫টি পাটকলে পাট সরবরাহ বাবদ বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) কাছে পাওনা ২৬৫ কোটি টাকা আদায়ের দাবিতে অবশেষে বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়ের সামনে আজ থেকে তিন-দিনের অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছেন দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রান্তিক পাট চাষী ও পাট ব্যবসায়ীরা। একই দাবিতে এর আগে জাতীয় সংসদে পাট মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণসহ বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের কাছে তারা ধর্না দিয়েছেন বারংবার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহৃদয় হস্তক্ষেপ চেয়ে তার কাছে স্মারকলিপি পেশসহ মানব বন্ধন ও অন্যান কর্মসূচিও পালন করেছেন। কিন্তু পাওনা টাকা পরিশোধের ব্যাপারে বিজেএমসির কাছ থেকে আজ অবধি কোনো আশ্বাস পর্যন্ত মেলেনি। বাধ্য হয়ে নিজেদের ও পরিবারের জীবন বাঁচাতে এই পাওনা টাকা আদায়ে আজ মঙ্গলবার থেকে এই অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছেন তারা। কর্মসূচি আগামীকাল বুধবার এবং এবং পরশু বৃহস্পতিবার ও অব্যাহত থাকবে। এতেও সুরাহা না হলে এরপর আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানান তারা। কেননা, এই টাকার ওপরই এখন আমাদের জীবন-মরণ নির্ভর করছে, জানান পাট ব্যবসায়ী নেতারা।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির এই কঠিন দুঃসময়ে পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে পড়ায় অকস্মাৎ ব্যবসা হারিয়ে এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছেন পাট ব্যবসায়ীরা। তার ওপর বিজেএমসির কাছে টাকা আটকা পড়ায় একমাত্র সম্বল সামান্য যে পুঁজি নিয়ে তারা ব্যবসা করেন, হারিয়েছেন সেটুকুও। ফলত পুঁজিশূন্য সর্বশান্ত হয়ে তারা আজ পথে বসার মুখে। অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা ‘পাট ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধে বিজেএমসি নীরব কেন?’ ‘পাওনা টাকা আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই’ সহ বিভিন্ন শ্লোগান দেন।
চলমান দুঃসহ পরিস্থিতির কথা জানিয়ে নিজেদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ী নেতারা। এ সময় বিজেএমসির কাছে পাওনা টাকা আদায়ে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে পাট ব্যবসায়ী নেতারা জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিজেএমসির ২৫টি পাটকলে পাট সরবরাহ করে আসছি। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত চার বছরের পাট সরবরাহ বাবদ বিজেএমসির কাছে ২৬৫ টাকা পাওনা হয়েছে আমাদের। অথচ সেই পাওনা টাকা পরিশোধ না করেই ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের আগে পাটকলের শ্রমিক নেতাসহ অন্যান্য অংশীদারদের সাথে এ বিষয়ে দফায় দফায় আলোচনা করা হলেও আমাদের সাথে কোনোরূপ আলোচনা করা হয়নি। অথচ আমাদের সরবরাহ করা পাট দিয়ে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করেই বিজেএমসির কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতন পরিশোধ ও অন্যান্য দায় মেটানো হচ্ছে। বিজেএমসির এই অমানবিক নির্লিপ্ততা এবং আমাদের টাকা পরিশোধের ব্যাপারে বিক্রয় করে ঔদাসীনতা দেখে আমরা মর্মাহত। উপরন্তু মাথার ওপর ব্যাংক ঋণ আর সুদের বোঝার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দেনার চাপে আজ আমরা দিশেহারা। আমাদের ছেলেমেয়েরা ও পড়াশুনা থেমে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় পড়ে গেছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎতের মুখে। গভীর দুর্দশার মধ্যে আমাদের অনেক ব্যবসায়ী মৃত্যু বরণও করেছেন ইতোমধ্যে। ফলে দুর্বিষহ অন্ধকারের মধ্যে পড়ে গেছে তাদের পরিবার। এই মানুষ ̧লোকে বাঁচাতে আজ আমরা তাই আর কোনো উপায় না পেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা হয়েছি। অথচ নির্মম সত্য হচ্ছে, এই আমরাই কিন্তু চিরকাল পাট উৎপাদন ও সরবরাহের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ব এসব পাটকল এতোকাল বাঁচিয়ে এসেছি। দেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ সুগম রেখেছি। ব্যবসায়ীক নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- খন্দকার মাহমুদুর রহমান, স্বপন কুমার সাহা প্রমূখ।
চলমান এই সংকটকালে এর আগে জাতীয় সংসদে মাননীয় পাটমন্ত্রী নিজেও অঙ্গীকার করে বলেছিলেন, পাটকলগুলোর কাছে পর্যাপ্ত পাটপণ্য মজুত রয়েছে। সেগুলো বিক্রি করেই পাট ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ করা হবে। আমরা জানি, সম্প্রতি ৩৩২ কোটি টাকায় মজুত থাকা এসব পাটপণ্য বিক্রিও করেছে বিজেএমসি। কিন্তু মহান সংসদে পাটমন্ত্রীর দেয়া সেই অঙ্গীকারের পরও পণ্য বিক্রি মাধ্যমে অর্জিত এই অর্থ দিয়ে পাট ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা পরিশোধ করেনি বিজেএমসি। সেই টাকা পরিশোধে আদৌ কোনো আশ্বাস কিংবা উদ্বোগ নিতেও দেখা যাচ্ছে না তাদের মধ্যে। অমানবিক এ পরিস্থিতির অবসানে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে পাট্য ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এই টাকার ওপর আমাদের জীবন-মরণ নির্ভর করছে। সহৃদয় প্রধানমন্ত্রী যাতে এ ব্যাপারে তার মানবিক নির্দেশনা দিয়ে বিজেএমসির কাছে পাওনা এই ২৬৫ কোটি টাকা পরিশোধের ব্যাবস্থা নেন, সেদিকে আকুল আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে দেশের দুই হাজারের বেশি প্রান্তিক চাষী ও পাট ব্যবসায়ী ও তাদের অসহায় পরিবারের সদস্যরা।
আলোকিত প্রতিদিন/১৮ আগস্ট-২০২০/জেডএন