বিষ মুক্ত আসল স্বাদে ফিরেছে মধুপুরের আনারস

0
640

সবুজ সরকার, টাঙ্গাইল : বিষাক্ত রাসায়নিক আর হরমোনের ব্যবহারের কারণে টাঙ্গাইলের মধুপরের ঐতিহ্যবাহী আনারসের উপর থেকে দিন দিন ভোক্তাদের আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় কয়েকজন শিক্ষিত ও সমাজের উপর প্রতিশ্রæতিশীল যুবক এগিয়ে এসে রাসায়নিক ও হরমোনবিহীন আনারস চাষ করে আনারসের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চেষ্টারত আছেন। ফলে মধুপুরের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু জলডুগি ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারস চাষে এক বিপ্লব শুরু হতে যাচ্ছে। দাম একটু বেশি হলেও ক্রেতারা এখন সচেতন। উৎপাদক-ভোক্তা সচেতনায় মধুপুরের আনারস তার হারোনো গৌরব ফিরে পেতে যাচ্ছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সমাজের সচেতন মহল।

আর এই বিপ্লবের অগ্রদূত হলেন, মধুপুর উপজেলার গারোবাজারের ছানোয়ার হোসেন ও মহিষমারা ইউনিয়নের হলদিয়া গ্রামের আনারস চাষী মো. নজরুল ইসলাম। তারা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় পৌঁছে দিচ্ছেন বিষ ও রাসায়নিক মুক্ত আনারস।  আনারস চাষী নজরুল ইসলাম মনে করেন, এই ধরনের চাষাবাদ অনৈতিক, জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকী এবং পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংসকারী। তাই চাকুরির পাশাপাশি নিজের জমিতে তিনি চাষ করেছেন জৈব সার প্রয়োগ করে দুই জাতের আনারস। তিনি আনারসের অকাল বৃদ্ধি ও অতি মুনাফার লোভে হরমোনের প্রয়োগ করেন নাই, আবার দ্রæত পাকানো ও ভাল রঙের জন্য রাইপেন নামক বিষাক্ত কেমিক্যালও ব্যবহার করেন নাই। তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরেই মধুপুরের আনারস চাষীরা কখনও লোভে বা অসাধু ব্যবসায়ী বেপারীদের খপ্পরে পড়ে একাধিক জাতের আনারস চাষে বিবিধ রাসায়নিক ব্যবহার করে আসছেন।

তিনি আরো জানান, এবছর কেমিকেল বিহীন আনারস চাষে বিনিয়োগ করেছেন তিন লাখ টাকা। আশা করছেন তার বাগানের ফল ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবেন। আগামী বছরে আনারসের এই চাষ আরও বৃদ্ধি করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান। মধুপুরে কেমিকেল মুক্ত আনারস চাষের অগ্রদূত ছানোয়ার হোসেন। তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত আনারস চাষী। তিনি বলেন, আমার চাষাবাদ দেখে ও চাহিদার কারণে স্থানীয়ভাবে অনেকেই এ আবাদে উৎসাহিত হয়েছে। এতে ভাল দামও পাচ্ছেন তারা।  নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের তরুণ শিক্ষিত কর্মী ও নিরাপদ খাদ্য বিপণনের পথিকৃৎ টাঙ্গাইলের আওয়াল মাহমুদ জানান, কেমিকেল মুক্ত আনারসের চাহিদা ব্যাপক। এতে আমি যেমন লাভবান হচ্ছি, তেমনি অন্যান্য চাষীরাও লাভবান হচ্ছেন। আর ভোক্তারা পাচ্ছেন নিরাপদ ফল। তিনি আরো জানান, আমি এবার ৫০ হাজার জলডুগি এবং ২০ হাজার ক্যালেন্ডার জাতের আনারস ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করেছি। হরমোন ও রাইপেন মুক্ত আনারস যেখানে ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হয়, সেখানে বিষমুক্ত জলডুগি আনারস ৫০ টাকা এবং ক্যালেন্ডার আনারস ৭০-৮০ টাকায় নির্দ্ধিধায় বিক্রি করা যায়।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, মধুপুর অঞ্চলে প্রায় দুই লাখ টন বিভিন্ন জাতের আনারস চাষ হয়। সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে প্রতি বৎসর আনারস চাষ হয়। এছাড়া পাশর্^বর্তী উপজেলা ঘাটাইলের কিছু এলাকায় আনারস চাষ হয়। তিনি বলেন, আগের চেয়ে বর্তমানে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহার অনেক কমে আসছে। মধুপুর অঞ্চলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের উদ্যোগে আনারস ভিত্তিক খাদ্য শিল্প স্থাপনের কার্যক্রম গৃহীত হলে চাষী এবং জনগন ব্যাপক উপকৃত হবে। এছাড়াও অবকাঠামোমূলক উন্নয়ন আনারস চাষে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

 

দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন/২৪আগস্ট-২০২০ইং/জেডএন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here