সুনামগঞ্জ সীমান্তে চালু হয়েছে রাজস্ব বিহীন বাংলা কয়লা

0
563

মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া, হাওরাঞ্চল (সুনামগঞ্জ) : সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আবার চালু হয়েছে সরকারের রাজস্ব বিহীন বাংলা কয়লা। প্রায় ৬ মাস এই কয়লা বিক্রি বন্ধ থাকার পর আবার শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টা থেকে চাঁরাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের পাশে অবস্থিত সমসার হাওর ও পার্শ্ববর্তী কলাগাঁও নদীতে ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করা শুরু হয়। আগামী ৩ দিন যাবত চলবে এই বাংলা কয়লা পরিবহণ। তারপর আবার বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে। কিন্তু বাংলা কয়লা আসলে কী? কেন এই কয়লা এতদিন বন্ধ ছিলো? আবার কেনই বা হঠাৎ করে চালু হলো? এ নিয়ে বৈধ কয়লা ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর মাঝে প্রশ্ন উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- আইনগত জটিলতার কারণে জেলার তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া, বাগলী ও চাঁরাগাঁও শুল্ক স্টেশন দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ভারত থেকে বৈধ পথে কয়লা আমদানী বন্ধ রয়েছে। আর এই সুযোগে সীমান্তের চাঁরাগাঁও ও কলাগাঁও সীমান্ত এলাকাতে প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা গত ৬ মাসে মজুত করেছে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। কিন্তু সরকারের রাজস্ব বঞ্চিত ও আইনগত বৈধতা না থাকার কারণে বিজিবি কয়লাগুলো আটক করে রাখে। প্রথমত- এই কয়লা সংগ্রহ করা হয় ভারত থেকে ট্রাক দিয়ে পরিবহণের সময়, রাস্তায় পরে যাওয়া কয়লা শ্রমিকরা কুড়িয়ে জমা করে। কিন্তু ভারত থেকে বৈধ পথে কয়লা আমদানী বন্ধ রয়েছে ১ বছর যাবৎ। দ্বিতীয়ত- ভারতে অবস্থিত কয়লার ডিপোতে মজুত রাখা কয়লা বৃষ্টির পানির সাথে পাহাড়ী ছড়া দিয়ে ভেসে আসে। আর সেই কয়লা বালির মাঝ থেকে ঠেলা জাল ও বাঁশের তৈরি চালুন দিয়ে উত্তোলন করে শ্রমিকরা। তৃতীয়ত- নৌকায় পরিবহণের সময় ও শুল্ক স্টেশনের ডিপো থেকে একদল চোর কয়লা চুরি করে চোরাচালানীদের কাছে বিক্রি করে। চতুর্থত- সীমান্তের চিহ্নিত চোরাচালানীরা অবৈধভাবে প্রতি রাতে ভারত থেকে কয়লা পাঁচার করে। এই ৪ পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা কয়লাগুলোকে একত্রে মিশ্রণ করা হয়। তাই স্থানীয়ভাবে এই কয়লাকে বাংলা কয়লা বলা হয়। তবে মূলত বাংলা কয়লা হচ্ছে- নদী ও ছড়া থেকে শ্রমিকদের উত্তোলনকৃত কয়লা। কিন্তু সারা বছরে ৫শ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করতে পারে না এলাকার শ্রমিকরা। তাহলে হাজার হাজার মেট্রিক টন কয়লা আসে কোথায় থেকে? এছাড়া বাংলা কয়লা বৈধ কয়লার তুলনায় মূল্য কম এবং তার গুণগত মানও খুবই নিম্ন মানের। কারণ বাংলা কয়লায় থাকে বালি, পাথর ও কাল মাটির মিশ্রণ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড়ছড়া ও চাঁরাগাঁও শুল্ক স্টেশনের বৈধ কয়লা ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর অবৈধ বাংলা কয়লা থেকে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের নামে ১ মেট্রিক টন বাংলা কয়লা থেকে ৩শত টাকা করে চাঁদা নেওয়া হতো। আর চাঁদার টাকা উত্তোলন করার জন্য নিয়োজিত করা হতো কয়েকজন সোর্স। এসব বিষয় নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর চাঁরাগাঁও, বাগলী ও বড়ছড়া শুল্কস্টেশন এলাকায় বাংলা কয়লা বিক্রি বন্ধ করে দেয় বিজিবি। এরপর থেকে চাঁরাগাঁও শুল্ক স্টেশন ও কলাগাঁওসহ বাগলী ও বড়ছড়া শুল্ক স্টেশনের এলাকার আশেপাশে স্তুপ আকারে হাজার হাজার মেট্রিক টন অবৈধ বাংলা কয়লা মজুত করে রাখা হয়। গত বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়কের কাছ থেকে ৩ দিনের অনুমতি নিয়ে শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টা থেকে কলাগাঁও ও চাঁরাগাঁও সীমান্তে আটক থাকা প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন অবৈধ বাংলা কয়লা আবার চালু করা হয়। তবে আগের মতো প্রকাশে চাঁদা নেওয়া হবে না। কিন্তু বাংলা কয়লাগুলো এলাকা ছড়া হওয়ার পর বিজিবি সোর্স পরিচয়ধারী কয়েকজন লোক দিয়ে গোপনে বাংলা কয়লা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিটন কয়লা থেকে ৫শত টাকা করে চাঁদা নেওয়া হবে বলে আলোচনা হচ্ছে। ১ মেট্রিক টন বাংলা কয়লার বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে ৮ হাজার টাকা। আর বৈধ কয়লার মূল্য সাড়ে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু অবৈধ বাংলা কয়লা থেকে কখনোই সরকারের রাজস্ব নেওয়া হয় না। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সিন্ডিকেড তৈরি করে এবং অবৈধ বাংলা কয়লার ব্যবসা করে প্রত্যেককেই হয়ে গেছে কোটিপতি।

বাংলা কয়লার ব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাকসুদুল আলমের বক্তব্য জানার জন্য তার সরকারীর মোবাইল নাম্বারে কল করার পর প্রথমে ব্যস্ত তারপর নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে চাঁরাগাঁও বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার নির্মল বলেন, ‘বাংলা কয়লার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এ বিয়ষে কিছু বলতে পারবো না’। সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যারা অবৈধ ভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতা কামনা করছেন তাহিপুর উপজেলার সর্বস্থরের জনসাধারণ।

 

আলোকিত প্রতিদিন/২৬ সেপ্টেম্বর-২০২০/জেডএন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here