আলী হোসেন, সাভার : ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দিনটি। টানা ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এসেছে এই স্বাধীনতা। স্বাধীনতার স্বাদ নিতে ৩০ লাখ শহীদের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে হয়েছে। এই স্বাদ নিতেই লাখ লাখ মায়ের খালি হয়েছে কোল ও বুক। বাবা হারিয়েছেন সন্তান, সন্তান হারিয়েছেন বাবা-মামা। সেই বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ধুয়ে মুছে রঙ তুলির আঁচরে প্রস্তুত করা হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত বিজয়কে ৪৯তম বারের মতো বরণ করবে সমগ্র জাতি।
বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর কারণে এ বছর ২৬ মার্চে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ কেউই। এ বছর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে না এলে তাদের পক্ষ থেকে তাদের সামরিক বাহিনীর সচিবরা শ্রদ্ধা জানাবেন বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক বাহিনীর সচিবসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
করোনার প্রভাব একটু কমে আসায় সাধারণ মানুষের জন্য সীমিত আকারে খোলা থাকবে বীর শহীদদের রক্তে গাঁথা এই স্মৃতিস্তম্ভ। ভিআইপিরা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে চলে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ২০০ জনকে গ্রুপ করে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য নিবেদনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে সাধারণ জনগণ।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (এসআই) হারুনুর রশিদ বলেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদারের জন্য আশপাশের সব বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করছি। সেই সঙ্গে নতুন করে কেউ স্মৃতিসৌধের আশপাশ এলাকায় আশ্রয় নিতে পারবে না। নিরাপত্তার জন্য এবার স্মৃতিসৌধ এলাকার ৩২টি পয়েন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা যুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ গণপূর্ত বিভাগের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন বলেন, মহান বিজয় উদযাপনের জন্য দুই সপ্তাহ ধরে অর্ধ শতাধিক পরিছন্নকর্মী স্মৃতিসৌধে নিয়োজিত রয়েছে। ধোয়া মোছা থেকে শুরু করে এখন সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। এজন্য ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছিল। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করা হচ্ছে। এখন শুধুই মূল আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা।
ঢাকার জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে অন্যবারের তুলনায় এবার দ্বিগুণ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও এর আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বাড়ানো হয়েছে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি। সাভারের আমিনবাজার থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত কয়েকটি স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সৌধ এলাকায় নিরাপত্তা চৌকি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ বসানোর পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাদের সামরিক বাহিনীর সচিবরা শ্রদ্ধা জানানোর পর সকাল পৌনে ৭টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
আলোকিত প্রতিদিন/১৫ ডিসেম্বর ২০২০/জেডএন