কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাঁসের খামার করে হাঁসপালন করে অনেকেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও প্রচুর লাভবান হয়েছেন। তেমনি কলাপাড়ায় হাঁসের খামার করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ার পাশাপাশি পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভালভাবেই দিনযাপন করছেন নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মো: হাসান। হাঁস পালন করে তিনি তার ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করছেন অনায়াসেই ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহামারি করোনার প্রথম দিকে ঘরবন্দি হওয়ার পর অভাব-অনটনের দেখা দিলে হ্যাচারি থেকে ২৫০টি হাঁস ক্রয় করে শুরু করেন হাঁস পালন শুরু করে হাসান। অর্থনৈতিক পিছুটানের মধ্যেও পিছপা হননি তিনি। করোনা দুর্যোগের সময় হাতে কোন কাজ না থাকায় নগদ টাকার সংকট দেখা দিলে ধার-দেনা করে হাঁসের খাবার ক্রয় করে। অনেক বাকি ছিল স্থানীয় দোকানে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, শুরু হয় হাসানের পথ চলা। এখন খামারে প্রায় ৫শত হাঁস। হাঁসগুলো প্রতিদিন গড়ে ডিম দেয় ১৫০টি। প্রতিটি ডিম ১০টাকা দরে বিক্রি করে আয় করেন ১৫০০টাকা। এ ছাড়া ৩মাস পর প্রতিটি হাঁস বিক্রি করতে পারেন ৩০০/৩৫০ টাকা করে। হ্যাচারি থেকে প্রতিটি হাঁস ক্রয় করে আনেন ২৫/২৮ টাকা দরে। পরিপক্ক হতে খাদ্য ও ঔষধ বাবদ মোট খরচ হয় ১৫০টাকা। মহামারি করোনার প্রভাবে হাঁসের ওষুধ ও খাবারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় হাঁসপালন করে প্রথম দিকে তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
খামারি হাসান এ প্রতিবেদককে বলেন, করোনার সময় সংসারে অভাব দিলে কোন কাজও খুজে পাইনা। চিন্তা-ভাবনা করে কিছু হাঁস পালন করার সিদ্ধান্ত নেই। নিজে না খেয়ে সন্তানের মত হাঁসগুলোকে লালন-পালন করি। আল্লাহর ইচ্ছায় এখন প্রতিদিন লাভের মুখ দেখছি। হাঁসের খাবারের পিছনে খুব একটা বেশি খরচ হয় না। খোলামেলা বিলে হাঁসগুলো ছেড়ে দেই আবার সন্ধ্যার দিকে বিল থেকে নিয়ে আসি। প্রতিমাসে ডিম ও হাঁস বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় ৩৫/৪০ হাজার টাকা দিয়ে ভালোভাবে সংসার চলছে বলে দাবি হাসানের। খামারের প্রসার ঘটাতে সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: ফারুক খাঁন জানান, হাসানের হাঁসের খামারটি দেখে অনেকেই হাঁসের খামার করার উদ্দ্যেগ গ্রহন করেন। গ্রামের মানুষের ডিম বা হাঁস কিনতে বাজারে যেতে হয় না। আরেক যুবক মো: ফতে আলী জানান, হাসান ভাইর হাঁসের খামার দেখে ইচ্ছে আছে এ এরকম একটি খামার গড়ার।
নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, হাসান হাঁসের খামার করে নিজে স্বাবলম্বী হয়ে বেকারত্ব দুর করেছেন। ইউপি সদস্য জগৎ জীবন রায় বলেন, খোলা বিলে হাঁসের খামার করে বেকারত্ব দূর করে হাসান আর্থিক সংকট দূর করেছেন।
এ বিষয় পটুয়াখালী জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এ জেলায় অনেক হাওড় ও বিল রয়েছে, যেখানে স্বল্প খরচে হাঁসের খামার করে বেকারত্ব দূর করে প্রচুর আয় করা সম্ভব। ডিম ও হাসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভবান হচ্ছেন খামারের মালিকরা। প্রাণীসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে হাঁস পালনকারীদের সবসময়ই পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।
আলোকিত প্রতিদিন/২ জানুয়ারি ২০২১/জেডএন