কক্সবাজার জেলা কারাগারকে মাদকমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত মডেল কারাগার হিসেবে উপহার দিয়ে যাবো : জেল সুপার নেছার আলম

0
457

আবু সায়েম, কক্সবাজার : কক্সবাজার জেলা কারাগারকে মাদকমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত মডেল কারাগার হিসেবে বাস্তবে রূপদানে বদ্ধপরিকর কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহা: নেছার আলম। জেল সুপার হিসেবে কারাগারে যোগদান করেছেন প্রায় ৩ মাস। এরইমধ্যে তিনি স্বপ্ন দেখেছেন ৬৪ জেলার মধ্যে কক্সবাজার জেলা কারাগার হবে বাংলাদেশের রুল মডেল। কক্সবাজার কারাগারকে বাংলাদেশের অন্যান্য কারাগার মাদকমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, মডেল কারাগারের প্রতীক মনে করবে।
সুত্র জানায়, কক্সবাজার কারাগারে বর্তমানে বন্দী রয়েছে সাড়ে ৩ হাজারের উপর। গত ১৭ ডিসেম্বর কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মুমিনুর রহমান মামুন কক্সবাজার কারাগারে বন্দীদের জন্য তৈরিকৃত ৬তলা ভবনের শুভ উদ্বোধন করেন। এর ফলে বন্দীদের জন্য এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে মনে করেন কারা সংশ্লিষ্টরা। বন্দীদের থাকার যে সমস্যা পোহাতে হতো তা ওই ভবন উদ্বোধন হওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে সামর্থ অনুযায়ী প্রায় ১০০০ বন্দী স্থানান্তর করা হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, ৬তলা ভবনের নিচ তলায় বৃদ্ধ কয়েদিদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। আর অন্যান্য তলায় কারাবিধি অনুযায়ী স্থানান্তর করা হয়েছে। কারাগারে সিট ও ওয়ার্ড বাণিজ্য রোধে একজন ডেপুটি জেলারের উপস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে বন্দীদের স্থানান্তর করা হয়। নবাগত বন্দী কারাগারে আগমন করলে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে তাদের ১৪দিন কোয়ারান্টাইনে রাখার পর স্বাভাবিক নিয়ম মোতাবেক ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।
কারা সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দীদের খাবারের মান উন্নত করা হয়েছে। সরকারি বিধি মোতাবেক বন্দীদের প্রাপ্য অংশ যথাযথ প্রদান করা হচ্ছে। কারাগারে বিকাশ অথবা নগদ লেনদেনের ব্যাপারে জেল সুপার সজাগ রয়েছে। মাসিক তদারকি এবং দরবার অনুষ্ঠানে কারারক্ষী এবং কর্মচারীদের অবৈধ লেনদেনের ব্যাপারে হুশিয়ারী প্রদান করে যথাযথ সেবামূলক দায়িত্ব পালনের নির্দেশ প্রদান করেন জেল সুপার। কারা সূত্র আরো জানায়, অবৈধ লেনদেন এবং নানাধরণের দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় সর্বপ্রধান কারারক্ষী এবং সাহায্যকারী কিছু কারারক্ষীদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহত দিয়ে নতুন সর্বপ্রধান কারারক্ষী পদায়ন করা হয়েছে। দুর্নীতি এবং মাদকের বিরুদ্ধে সজাগ থেকে মডেল কারাগার রুপান্তরে অবিচল আছেন কারা কর্মকর্তারা। বিকাশ অথবা নগদে যাতে অবৈধ লেনদেন না হয় সেজন্য লেনদেন সনাক্তকরণে কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর জাতীয় পরিচয়পত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস সংরক্ষণ করা হয়েছে। কারা ফটকের সামনে যে সকল বিকাশের দোকান রয়েছে কোনো কারা কর্মকর্তা অথবা কর্মচারী বন্দীর আত্মীয়স্বজন থেকে অবৈধ লেনদেন করলে জেল সুপার তাদেরকে মৌখিকভাবে ডেকে ওই ব্যাপারে অবহিত করার নির্দেশ প্রদান করেন।
সদ্য জামিনপ্রাপ্ত টেকনাফের আবদুল মোতালেব আলোকিত প্রতিদিন-কে জানান, কারাগারের পরিবেশ বেশ চমৎকার। কারাগারে নেই কোনো আর্থিক লেনদেন। ওয়ার্ড ও সিট বাণিজ্যের প্রচলন ও নেই। লটারির মাধ্যমে রোটেশন অনুযায়ী ডেপুটি জেলারের উপস্থিতিতে স্থানান্তর করা হয়। জামিনপ্রাপ্ত উখিয়ার নুরুল আমিন জানান, কারাগারে খাবারের মান উন্নত করা হয়েছে। ক্যান্টিনে ন্যায্য মূল্যে জীবনউপকরণের সবকিছু বিক্রি করা হচ্ছে। আর্থিক লেনদেন কারাগারে নেই বললেই চলে। সদ্য জামিনপ্রাপ্ত মহেশখালীর মোক্তার আহমেদ জানান, বিগত ২০১৫ সালেও কারাগারে ছিলাম। তখনকার পরিবেশ আর এখনকার পরিবেশ আকাশ পাতাল ব্যবধান। সময়ের পরিক্রমায় কারাগারে ‘সেবার মান উন্নত করে রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ’ এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে বাস্তবে রুপান্তর করা হয়েছে।
কারা কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং কারারক্ষীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বর্তমানে বন্দীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারা কর্মকর্তা জানানÑ মাদক, ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবিচল আছেন বর্তমান জেল সুপার স্যার। তিনি মাসিক তদারকি এবং দরবার অনুষ্ঠানে প্রাত্যহিক পরিদর্শনে বন্দীদের নিরাপদ সহ সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে কারারক্ষীদের পরামর্শসহ কাজের প্রতি আন্তরিক, অনুপ্রেরণা, উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টিতে কারারক্ষীদের প্রেষণা দান করেন।
কক্সবাজার জেলা কারাগারের চৌকস জেল সুপার মোহা: নেছার আলম জানানÑ মাদক, দুর্নীতি, ঘুষ ও অবৈধ লেনদেনের বিরুদ্ধে সজাগসহ সতর্ক রয়েছি। সামগ্রিক পরিবেশে শৃঙ্খলা ফেরাতে ন্যায় নীতিকথাকে সামনে রেখে যাবতীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ওয়ার্ড ও সিট বাণিজ্য রোধে ডেপুটি জেলারের উপস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে বন্দীদের স্থানান্তর করা হয়। তিনি আরো জানান, বর্তমানে কারাগারের ক্যান্টিনে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটি পণ্যের মধ্যে মূল্য নির্ধারণ করে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। খাবারের মান উন্নত করা হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ও মিশন বাস্তবায়নে কারাগারে বন্দীদের যেভাবে রাখার নির্দেশ প্রদান করেছেন আমরা সেভাবে রাখতে যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। গত ১৭ ডিভেম্বর কক্সবাজার কারাগারে ৬তলা ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কারা মহাপরিদর্শক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মুমিনুর রহমান মামুন স্যার কারারক্ষী এবং কারাকর্মকর্তাদের দরবার হলে বন্দীদের সেবার মান বৃদ্ধির প্রয়াসে অনুপ্রেরণাএবং বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। আমরা তা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। সুষ্ঠু ও সৃজনশীল পরিকল্পনার মাধ্যমে কক্সবাজার কারাগারকে মাদকমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত মডেল কারাগার উপহার দিয়ে যাবো। কক্সবাজার ছেড়ে অন্য স্টেশনে বদলী হলে সাধারণ মানুষ এবং বন্দীরা যাতে তা উপলব্ধি করতে পারেন।

আলোকিত প্রতিদিন/৪ জানুয়ারি’২১/এমজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here