আদালত না বসলেও আসামির জামিন,আসামি পক্ষের আইনজীবি বহিষ্কার

0
459

সবুজ সরকার, টাঙ্গাইলঃ টাঙ্গাইলে আদালত না বসলেও শিশু ধর্ষণ মামলার এক আসামিকে রহস্যজনকভাবে জামিন দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি এই জামিনের আদেশ দেন। আদালত না বসলেও আসামির জামিন হওয়ার খবরটি বুধবার সকালে আদালত চত্বরে ছড়িয়ে পড়লে আইনজীবিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।

আইনজীবীদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনসহ আসামি পক্ষের আইনজীবিকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের দাবি উঠে। পরে টাঙ্গাইল জেলা এডভোকেট বার সমিতির এক জরুরি সভায় আসামি পক্ষের আইনজীবীকে একমাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম মঙ্গলবার ইন্তেকাল করেন। নিয়ম অনুযায়ী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের মৃত্যুতে মঙ্গলবার সকালে জেলা জজ আদালতে ডেথ রেফারেন্স অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ওই দিনের জন্য জেলার সকল আদালতের যাবতীয় কার্যক্রম মূলতবী ঘোষণা করেন জেলা জজ ফাহমিদা কাদের। অথচ আদালত না বসলেও মঙ্গলবার বিকেলে চাঞ্চল্যকর এক ধর্ষণ মামলার আসামিকে শিশু আদালতের বিচারক হিসেবে জামিন দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন।

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপিকেও জামিন শুনানির বিষয়টি জানানো হয়নি। আসামির জন্য জামিনের আবেদন করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাইফুল আলম টিটু। আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকার দিনে এভাবে আসামী পক্ষে জামিনের আবেদন করে তিনি নিজেও এখন তোপের মুখে পড়েছেন।জামিনপ্রাপ্ত আসামির নাম মোহাম্মদ রকিব (১৬)। সে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে এবং স্থানীয় কালামাঝি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ৩ জানুয়ারি রোববার বিকেলে মধুপুরের রক্তিপাড়া গ্রামের চার বছরের এক শিশু কন্যাকে ফুসলিয়ে বাড়ির পাশের একটি ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে রকিব। এ ঘটনায় পরদিন সোমবার সকালে ভিকটিমের পিতা বাদি হয়ে মধুপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। মামলা দায়েরের পরই আসামি রকিবকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে মধুপুর থানা পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে রকিবকে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (মধুপুর থানা আমলী আদালত) আদালতে হাজির করা হয়। আসামি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট আকরামুল ইসলাম তাকে নথিসহ শিশু আদালতে প্রেরন করেন। কিন্তু আদালত না বসলেও সেখান থেকে আসামি জামিন পাওয়ায় দেখা দেয় বিপত্তি।
অন্যদিকে ধর্ষণের শিকার শিশুকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভিকটিম মঙ্গলবার আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে সে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়। তবে রহস্যজনকভাবে ধর্ষণ মামলার আসামিকে এভাবে জামিন দেয়ায় সঠিক বিচার পাওয়া নিয়ে বাদি পক্ষের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। আসামির ফাঁসির দাবি জানিয়েছে ভিকটিমের পরিবার।

এ বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট আলী আহমেদ জানান, মামলাটির জামিন শুনানীর বিষয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী বা কোর্ট থেকে তাকে অবহিত না করেই এই জামিন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা এডভোকেট বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম নাছিমুল আক্তার জানান, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বুধবার বিকেলে বার সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি সভায় সংশ্লিষ্ট মামলার আসামীপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ সাইফুল আলম টিটুকে একমাসের জন্য বহিস্কার করা হয়েছে। একই সাথে বৃহস্পতিবার বার সমিতির পক্ষ থেকে জেলা ও দায়রা জজের সাথে সাক্ষাত করে শিশু আদালতের বিচারকের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

আলোকিত প্রতিদিন/৬ জানুয়ারি’২১/এমজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here