পুলিশের প্রচেষ্টায় বাক প্রতিবন্ধী কিশোরী উদ্ধার

0
344

পটুয়াখালী প্রতিনিধি : পুলিশের কঠোর প্রচেষ্টায় পটুয়াখালীতে এক কিশোরীকে উদ্ধার পূর্বক পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, মির্জাগঞ্জ থানাধীন ছৈলাবুনিয়া গ্রামের জনৈক নুরুজ্জামান শিকদার এর বাড়ীতে গত বৃহস্পতিবার রাত অনুমানিক ৮ টার সময় একজন বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ে এসে উপস্থিত হন। উপায়ান্তর না পেয়ে জনাব নুরুজ্জামান শিকদার পরেরদিন ভোরবেলা অফিসার ইনচার্জ মির্জাগঞ্জ থানাকে অবহিত করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গঠিত নারী,শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্কের ইনচার্জ এসআই রিমা আক্তার কে তৎক্ষণাৎ অফিসার ইনচার্জ মির্জাগঞ্জ থানা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাসহ ছৈলাবুনিয়া গ্রামে প্রেরন করেন। কাল বিলম্ব না করে মির্জাগঞ্জ থানার এসআই রিমা আক্তার সরকারি গাড়িযোগে প্রতিবন্ধী মেয়েকে থানায় নিয়ে আসেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, একদিকে প্রতিবন্ধী মেয়েটির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরিচর্যা অন্যদিকে শুরু হয় তার প্রকৃত ঠিকানার খোঁজে দিনরাত অহর্নিশ পরিশ্রম। অতি সযত্নে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় নাম,ঠিকানা ইত্যাদি। বার বার তিনি মুর্ছা যান। কোন কিছুই বলতে পারছিলেন না। শুধুমাত্র আলতো আলতো করে একটি অস্পষ্ট উচ্চারণ করেছিলেন। আর সেটি হল ‘ওপাড়’। এই ‘ওপাড়’ শব্দটি ছাড়া নিষ্পাপ মেয়েটি আর কিছুই বলতে পারছিলেন না। শুরু হলো এই ‘ওপাড়’ শব্দ থেকেই তার নিরুদ্দেশ ঠিকানার অজানা আবিষ্কারের প্রকৃত উন্মোচন। মির্জাগঞ্জ থানা থেকে পায়রা নদী পার হয়ে পটুয়াখালীর সদর থানা ‘ওপাড়ে’ যাওয়া যায় বিধায় সদর থানার মাধ্যমে বিস্তারিত খোঁজ নেয়া হলো। কিন্তু বিধি বাম। প্রচেষ্টা হলো নিষ্ফল।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ থানার সীমান্তবর্তী বরগুনা জেলার বেতাগী নদী পার হয়ে ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানার অবস্থান। সেই ‘ওপাড়’ কথাটি চিন্তা করেই এবার শুরু হলো কাঠালিয়া থানা এলাকায় অবিরাম গোয়েন্দাবৃত্তি। অবশেষে জানা গেল যে, উক্ত থানা এলাকায় ঝুমুর আক্তার (১৭) নামক এক প্রতিবন্ধী মেয়ের (পিতা-আব্দুল জলিল হাওলাদার গ্রাম-কচুয়া,থানা-কাঠালিয়া,জেলা- ঝালকাঠি) হারানো সংবাদে এলাকায় মাইকিং হয়েছে। কাল বিলম্ব না করে ঝালকাঠি জেলা পরিষদের সদস্য এবং কাঠালিয়ার কচুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব এস এম আমিনুল ইসলাম লিটন শিকদারের মাধ্যমে উক্ত প্রতিবন্ধী মেয়েটির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়।
অবশেষে গতকাল ৯ জানুয়ারি অফিসার ইনচার্জ মির্জাগঞ্জ থানার আহ্বানে ঝালকাঠি জেলা পরিষদের সদস্য জনাব এস এম আমিরুল ইসলাম লিটন শিকদার এবং বাক প্রতিবন্ধী মেয়ের মামা জনাব মোঃ কামাল হোসেন (পিতা- হাবিবুর রহমান, গ্রাম- কচুয়া, থানা-কাঠালিয়া,জেলা- ঝালকাঠি) দ্বয় মির্জাগঞ্জ থানায় উপস্থিত হন।অতি আদরের প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে পেয়ে মামা কামাল হোসেনের চোখে মুখে আনন্দের অশ্রু ধারা বয়ে আসে। নারী,শিশু,বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্কের মাধ্যমে অফিসার ইনচার্জ ও ডেস্ক ইনচার্জ মেয়েটিকে প্রকৃত অভিভাবকের নিকট হস্তান্তর করেন। থানায় অনাবিল আনন্দের এক ফল্গুধারা প্রবাহিত হয়। আনন্দে আত্মহারা হয়ে তারা বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জেলা পুলিশ পটুয়াখালীর প্রতি তাদের শ্রদ্ধা, আস্থা,বিশ্বাস ও ভালোবাসা শতগুনে বেড়ে যায়।

আলোকিত প্রতিদিন/১০ জানুয়ারি’২১/এমজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here