সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ নির্দিষ্ট সময়ের (আড়াই মাস) এর মধ্যে দেড় মাস পেরিয়ে গেছে কিন্তু সুনামগঞ্জের অনেক হাওরে বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ এখনও শুরু হয়নি। এতে সময়মত বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার আশংকা করছেন হাওরপাড়ের স্থানীয় কৃষকেরা। তবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তার দাবি- অধিকাংশ বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ের (২৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
পাউবো’র আওতাধীন সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় ৫২ টি হাওরের দুই লাখ ২৩ হাজার ৩০০ হেক্টর বোরো জমির ফসলরক্ষায় ৬১২ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও মেরামতে ১২৬ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ৭৮৭ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) বাঁধের কাজ করবে। যার অনুকূলে প্রাথমিকভাবে ৬২ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে।
পাউবো’র কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) নীতিমালা অনুযায়ী জমির মালিক ও প্রকৃত কৃষকদের দিয়ে পিআইসি’র মাধ্যমে বাঁধের কাজ করা হয়। ১৫ ডিসেম্বরের পর হাওরে বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজ শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। বোরো চাষাবাদ শেষ পর্যায়ে হলেও অনেক হাওরে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজ এখনও শুরু হয়নি। ফলে নির্ধারিত সময়সীমা (২৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ হওয়া ও আগাম বন্যায় ফসলহানীর শঙ্কায় রয়েছেন বোরো চাষিরা। কৃষকদের দাবি- বাঁধ নির্মাণের সময় দ্রুত গড়িয়ে গেলেও বাঁধ নির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছেন না পানি উন্নয়ন বোর্ড। যার ফলে ৭৮৭ টি পিআইসি’র অধিকাংশ বাঁধে এখনও কাজ শুরু হয়নি। যথা সময় ৬১২ কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা। কৃষক আব্দুল হালিম জানান, অনেক এলাকায় প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে প্রভাবশালীদের দিয়ে পিআইসি গঠন করা হয়েছে। অতচ বাধেঁর কাজ এখনও শুরু হয়নি। আমরা কতৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই দ্রুত বাধের কাজ শুরু করা হোক। কৃষক মনোয়ার হোসেন জানান, আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি, এখন হাওরের ধান রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি, বিশ্বাস করেন এই কথা চিন্তা করে রাতে আমার ঘুম আাসেনা যদি ধান তলিয়ে যায় তাহলে আমি মরে যাবো। কৃষক হামিদ মিয়া জানান, ২০১৭ সালে এই রকম হাওরের বাধেঁর কাজ শুরু হয়েছিল বলে আমাদের সব ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। কতৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই আপনারা হাওর ধান রক্ষার জন্য হাওরের বাধঁ দ্রুত নির্মাণ করেন। হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতা বিন্দু তালুকদার জানান, বাঁধের নামে হরিলুট চলছে। প্রতিটি বাঁধের দুর্নীতি ও প্রভাবশালী লোকের হস্তক্ষেপ রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। পানি ও আগাম বন্যার আগে বাঁধের কাজ শেষ হবে বলে বিশ্বাস হয় না। গণশুনানীর মাধ্যমে প্রকৃত জমির মালিক ও কৃষকদের দিয়ে পিআইসি গঠন করা হয়নি। বাঁধের কাজে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে করে হাওরের পানি সময়মত নিষ্কাশন না হওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিবুর রহমান জানান, ৫০০ টির অধিক পিআইসির কাজ চলমান রয়েছে। বন্যার পানি নামতে দেরী হওয়ায় পিআইসি গঠন ও বাঁধের কাজে কিছু বিলম্ব হয়েছে। তবে আশা করছি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারব। পিআইসি গঠনে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ /এম.জে