শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করলেই পুত্রবধূদের উপহার!

0
318

এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন টাঙ্গাইল থানার ওসি
প্রতিনিধি টাঙ্গাইল: শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করলেই উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা। এমন ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন। তিনি নিজে গিয়ে উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন শ্বশুর-শাশুড়িদের সেবা করা পুত্রবধূদের হাতে । উপহারের মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ী, পোড়াবাড়ির চমচম ও ক্রেস্ট। সেইসাথে পরিবারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তার এমন উদ্যোগের কারণে চারদিক থেকে ফোন আসছে, শুভেচ্ছা, অভিনন্দন আর প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তাকে। থানার ভিতরে ফেস্টুনে লেখা আছে ‘বৃদ্ধাশ্রম নয়, পরিবারই হোক বাবা-মায়ের নিরাপদ আবাস’। পুত্রবধূ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করে আল্লাহ তাকে আখিরাতে পুরস্কার প্রদান করবেন। সেখানে আরো লেখা আছে- শ্বশুর-শাশুড়িকে যে সেবা যত্ন করবে ও একসাথে বসবাস করবে সেই ভাগ্যবতিকে পুরস্কৃত করা হবে। যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর উল্লেখ্য করাও আছে। উদ্যোগটি ভালো লাগায় বিষয়টি মানুষ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে ও মুহুর্তেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। কলেজ পাড়ার শিউলি জানান, আমি টাঙ্গাইল জেলা সংবাদে একটি পোস্ট দেখতে পাই। সেটি দেখে আমার খুব ভালো লাগে। আমিও আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের মা-বাবার মতো ভালোবাসি ও তাদের সেবা যত্ন করি। তাদের সেবা করে আমি আত্মতৃপ্তি পাই। বিষয়টি অবগত করার জন্য আমি পোস্টে উল্লেখিত নম্বরে ফোন করি। পরবর্তীতে বিকেল বেলায় দেখি ওসি স্যার নিজে এসে আমাকে উপহারগুলো তুলে দেন। মাহমুদা আক্তার জানান, আমি পুরস্কার পেয়েছি। পুরস্কার পেয়ে নিজের প্রতি আরো আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আমি আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে এমনিতেই দেখাশুনা করি। ভবিষ্যতেও একইরকম তাদের সেবা করে যাবো। শ্বশুর কাজী মুজিবুর রহমান জানান, আমার মেয়ে আমাকে যেমন ভালোবাসে, আমার ছেলের বউও ঠিক তেমনি ভালোবাসে। আমাদের দেখভাল ও সেবাযত্নে কোনো ত্রুটি করে না। এমন ছেলের বউ পেয়ে আমরা সত্যিই ভাগ্যবান। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন জানান, আমার ছেলে ও ছেলের বউ আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সেবা করে। একজন পুলিশ অফিসার আমার বউমাকে পুরস্কৃত করেছে। পুরস্কার পেয়ে সে তো আত্মহারা। টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন জানান, আমি লক্ষ্য করেছি বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের অবহেলায় মা-বাবা অযত্নে জীবনযাপন করেন। অনেকেই ঠিকমত খাবারও দেয় না। আর্থিক অবস্থা ভালো সন্তানেরা মা-বাবাকে ছেড়ে বউ বাচ্চা নিয়ে আলাদা বসবাস করে। অনেক সন্তানরাই ভুলে যায় এই মা-বাবা দিনরাত পরিশ্রম করে এই সন্তানের মুখে আহার তুলে দেন ও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেন। তারা এও ভুলে যায় তাদের একদিন বৃদ্ধ হতে হবে। অনেক সন্তানরা কাজের প্রয়োজনে বাইরে ব্যস্ত থাকে। তাদের মা-বাবা পুত্রবধূর কাছে বেশি সময় কাটায়। আমার উদ্দেশ্য ওই পুত্রবধূদের উৎসাহিত করা। তিনি আরো বলেন, যারা মা-বাবাকে ছেড়ে দূরে চলে যায় ও অনেকের একাধিক সন্তান থাকার পরও মা-বাবাকে কাছে রাখা নিয়ে ঠেলাঠেলি করে দূরে সরিয়ে দেয়, সেই সব সন্তান ও পুত্রবধূর প্রতি প্রতিবাদ স্বরূপ এই আয়োজন করেছি। যাতে কোনো মা-বাবাকে অবহেলা ও বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়।

 

 

 

আলোকিত প্রতিদিন/১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ /এম.জে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here