ফরিদপুর চন্দনা নদীটি একজন কিনে নিয়েছে বলে দাবী করছে। কৃষকদের হাহাকার কে শুনবে

0
516
ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার বাগাট ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের মধ্যে একেবেকে যাওয়া একটি নদী যার নাম চন্দনা। এই নদীটিকে বিভিন্ন ভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পানি প্রবেশের পথ আটকে দিয়ে সেখানে ছোট ছোট পুকুর তৈরী করা হয়েছে। কোথায়ও আবার মাটি দিয়ে ভরাট করে সেখানে মার্কেট নির্মান করা হয়েছে। আর বেশ কয়েক একর জায়গায় ফসলী জমির মাঠে রূপান্তর করা হয়েছে। ধীরে ধীরে এই নদীটিকে মেরে ফেলা হচ্ছে।  বর্তমান নদীর রূপ এমন হয়েছে যে এখানে কোনো নদীই ছিলো না। এই চন্দনা নদীর পাশে ৭টি গ্রামের কৃষকসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষ তাদের কৃষি কাজে মারাত্বকভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে। থমকে যাচ্ছে কৃষি কাজ। এলাকার ব্যাপক উৎপাদিত পাট ঝাক না দেওয়ার কারনে দিশেহারা কৃষক। একাধীকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চন্দনা নদী দখলের বিষয়ে অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের এ বিষয়ে নিরব ভুমিকা বাগাটবাসীর কাছে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নস্থ চন্দনা নদীর শাখার অনেকাংশ দখল করে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। এই নদী দখলের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের পানি নিষ্কাশন, কৃষি ক্ষেত্রে সেচ ব্যবস্থায় বাধাগ্রস্তসহ নানা সমস্যা তৈরী করেছে। নদীর মধ্যে এলাকার মশিউর হোসেন বাকা ও লাল খান সহ কয়েক ব্যক্তি ৫ তলা ফাউন্ডেশন করে ভবন করছে। দেখা যায়, মধুখালী উপজেলাধীন কামারখালী নামক স্থানে প্রবাহিত গড়াই নদী থেকে সৃষ্ট শাখা নদী চন্দনা বয়ে গেছে আড় পাড়া, উজানদিয়া, বাগ বাড়ি, কাটাখালী, চর বাঁশপুর ও বাগাট বাজারের পাশ দিয়ে। রাজবাড়ী জেলার কালুখালী থেকে মূল পদ্মা নদী থেকে প্রবাহিত হয়ে গড়াই হয়ে তৈরী হয় চন্দনা নদী। এই নদীর  ধারা কামারখালী ও আড়কান্দি অংশে নাব্যতা হারিয়ে কয়েকটি স্থানে জলাশয় সৃষ্টি করেছে। এলাকার সার্থন্বেশী প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি উজানদিয়া, বাগবাড়ি, কাটাখালী, চর বাঁশপুর ও বাগাট এলাকার বিভিন্ন অংশে দখলদাররা ক্ষমতার বলয়ে দখল করে নিয়েছে। নামে বেনামে ইজারা নিয়েও বিভিন্ন স্থানে পুকুর খনন, বাধ নির্মাণ, পাকা ঘরবাড়ি, বাণিজ্য কেন্দ্র নির্মাণসহ নানা ভাবে নদীর অংশ দখল করেছে। এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদ্বয় ইতিপূর্বে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে বিষয়টি অভিযোগ করে অবগত করেছে। কিন্তু একাধিকবার প্রশাসনকে বলেও এই বিষয়ে কোন সুফল পাওয়া যায়নি বলে জানান ভূক্তভোগি এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানান চন্দনা নদীর আপন প্রাকৃতিক ধারা অব্যাহক থাকলে দৈনন্দিন পানির প্রয়োজন ও কৃষি সেচ ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এই নদী দখল মুক্ত করে খননের মাধ্যমে স্বাভাবিক ধারা ফিরিয়ে আনতে পারলে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মানুষ উপকার পেত। মধুখালী উপজেলার বাগাট মৌজার ০১নং সীট এর এস.এ (জলা)-১৮৪৩ নং দাগের প্রায় ২৫ একর জমি বিভিন্ন জনের দখলে রয়েছে। এলাকার কথিত ভুমিদশ্যু খ্যাত মতিয়ার রহমান খান, বাকা খান, মোঃ লাল খান, মোঃ কুদ্দুস খান, সাম খানসহ বিভিন্ন ব্যক্তিরা কৌশলে এই জমি দখল করে নিয়েছে।
এ বিষয়ে নব গঠিত কোরকদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুকুল হোসেন রিক্ত জানান আমার ইউনিয়নের ৬-৭টি গ্রাম এই নদীর তীরে অবস্থিত । তারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতির সম্মক্ষিণ, পাট পচানোসহ কৃষি সেচ ও দৈনন্দিন পানি সমস্যার ভোগান্তিতে রয়েছে। যারা নদী দখল করে আছে তারা কেউই মানছেনা নদী আইন।নদীর বর্তমান অবস্থা দেখলে কেউই বলবে না এঁটা একটা নদী।অথচ জনসাধারনের জন্য দৈনন্দিন পানি ব্যবহারের একমাত্র সম্বল এই চন্দনা নদী। প্রশাসননের বিভিন্ন মহলে এলাকাবাসী আবেদন করেছে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা মনোয়ারের সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান, চন্দনা নদীর একটি অংশ কেউ দখল করে সেখানে বাধ দিয়েছে বলে আমি জানি, তবে সে ক্ষেত্রে জনসাধারনের দেয়া একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মামলার নির্দেশ পেলে আমি ব্যবস্থা নিবো।
চন্দনা নদী দখল করে বাধ ও মার্কেট নির্মানের বিষয়ে বাগাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান খানের সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমরা সরকারের কাছ থেকে নদীটি কিনে নিয়েছি। এখন এই জায়গা আমাদের নামে রেকর্ড করা। এখানে আমরা যেমন খুশি ব্যবহার করবো।
আলোকিত প্রতিদিন/২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ /এম.জে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here