লুটপাটের সয়লাব চট্টগ্রাম ওয়াসা

0
329

প্রতিনিধি,চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রাম শহরের নাগরিকদের টাকাকে নিজের মনে করে ইচ্ছে মতো খরচ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ যার একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা যায় বোর্ড সভা। একটি বোর্ড সভায় চা-নাস্তাসহ আপ্যায়ণ ও আনুসাঙ্গিক ব্যয় ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত দেখিয়েছে সেবমুলক এই প্রতিষ্ঠানটি। এভাবে ৫৫ টি বোর্ড সভায় ৮০ লাখ টাকা খরচ করেছে তারা। আর ৩ টি বিশেষ সভায় খরচ দেখিয়েছেন সাড়ে ৪ লাখ টাকারও বেশি। এই পরিমান টাকা দিয়ে রীতিমত মেজবানের আয়োজন করা যেতে পারতো।এমনকি সদল বলে কক্সবাজারে গিয়েও জনগণ তথা সরকরের টাকার হরিলুট চালিয়ে এসেছেন এই বোর্ড তবে সেখানে কি পরিমান টাকা খরচ করেছেন তার হিসাব জানাতে নারাজ এই কর্তৃপক্ষ। একটি সেবামুলক কর্তৃপক্ষের এমন বিলাসিতা দেখে রীতিমত অবাক হয়েছেন সচেতন মহল।

বিভিন্ন প্রকল্পে নিম্ন মানের কাজ করে অসৎ ঠিকাদারের সাথে আতাত করে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে সরকারি টাকার অপচয় করার অভিযোগ অনেক পুরোনো এর সাথে যুক্ত আছে নগদ টাকায় পানি বিক্রি করে ব্যাংকে জমা না করে নিজেদের পকেট ভারী করেও মন ভরেনি তাদের। এবার ভাগ বসিয়েছেন বোর্ড সভার আপ্যায়নের টাকায়।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সুত্রে জানা যায় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখে একটি বোর্ড সভায় ৭১ হাজার ৮৮৫ টাকা খরচ হয় একই মাসের ২৯ তারিখে আরেকটি সভায় ওই খরচ দাঁড়ায় ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা এবং ২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল একটি বোর্ড সভার খরচ দেখানো হয়েছে ৩ লাখ ৫৬৫ টাকা। এভাবে বাড়তেই থাকে বোর্ড সভার খরচ। ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বর মাসের ২৬ তারিখে বোর্ডের সকল সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজার গিয়ে একটি সভা করে সেই সভার নামে ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ থাকলেও আবার ওয়াসার একাউন্ট থেকেও মোটা অংকের টাকার খরচ দেখানো হয়েছে তবে টাকার অংকটা এত বড় যে তা প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছেনা খোদ কর্তৃপক্ষও।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি বিশেষ সভার খরচ করা হয়েছে ৮১ হাজার ৭ শ টাকা কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে আরেকটি বিশেষ সভায় খরচ দেখানো হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৯২ টাকা ২০ সালের তুলনায় ১৯ সালের খরচ প্রায় ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালের একটি বিশেষ সভার খরচ ১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৫০ টাকা দেখানো হয়েছে।
ওয়াসা সুত্র জানায় স্থানীয় সরকার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন করে ২ জন এবং চট্টগ্রামের ১১ জনসহ মোট ১৩ জন বোর্ড মেম্বার রয়েছে। প্রত্যেক সভায় প্রতি সদস্যকে সম্মানী হিসেবে নগদ ৮ হাজার টাকা এবং ঢাকা থেকে যে ২ জন আসে তাদের আসা যাওয়ার বিমান ভাড়া বরাদ্দ রাখতে হয়। তার সাথে আপ্যায়নের খরচ যোগ হলে টাকার অংকটা বড় হয়ে যায়।

এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি এস.এম.নাজের হোছাইন বলেন ওয়াসার মতো একটা সেবামুলক প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সভার সর্বোচ্চ খরচ ৫০/৬০ হাজার টাকার বেশি হওয়া উচিৎ নয়। কারন এদের সাড়া বছরের খরচ পানির উৎপাদন খরচের সাথে হিসেব করে পানির মুল্য নির্ধারণ করা হলে গ্রাহকের উপর জুলুম করা হবে। একই সাথে বাড়বে ভোক্তাদের জীবিকা ব্যয়। তিনি বলেন চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় চোরাভাবে পানি বিক্রি করেও টাকা আত্মসাৎ করা হয় অথচ এরা বোর্ড সভাটাই যদি শৃঙ্খলায় আনতে না পারে তাহলে এই বোর্ড প্রকল্পের অনিয়ম কিভাবে ঠেকাবে প্রশ্ন রেখে বলেন এই বোর্ডের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়মের অভিযোগ আছে। হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত করার কথা বলেছে কিন্তু তবু টনক নড়েনি কারো। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে যদি এসব অনিয়ম রোধ করার উদ্যোগ নেওয়া না হয় তাহলে তাদের অপরাধের মাত্রা দিনকে দিন বাড়তেই থাকবে।

এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহর মোবাইলে কল এবং ক্ষুদে বার্তা দিয়েও যোগাযোগ করা হলেও শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

 

 

 

আলোকিত প্রতিদিন/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ /এম.জে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here