চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ও জেলারের বিরুদ্ধে মামলা

0
331
:: প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ::
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপম কান্তি নাথ নামের এক হাজতিকে বৈদ্যুতিক শক এবং বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করার অভিযোগে জেল সুপারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের কারা হয়েছে।
সোমবার (১ মার্চ) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম হোসাইন মোহাম্মদ রেজার আদালতে মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী ঝর্ণা রানী দেবী। মামলায় সাতকানিয়ার মৌলবীর দোকান এলাকার রতন ভট্টাচার্য, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার, জেলার ও জেলখানায় কর্তব্যরত সহকারী সার্জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় আরও বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামিও করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী ভুলন লাল ভৌমিক। তিনি বলেন, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ১৩ (১) (২) এর (ক) (খ) (গ) ধারায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে আদেশের জন্য রেখেছেন। আজ (মঙ্গলবার) আদেশ হতে পারে।
মামলার এজাহারে বাদী ঝর্ণা রানী উল্লেখ করেন, এজাহারভুক্ত আসামি রতন ভট্টাচার্যের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত একটি মামলায় (জিআর মামলা নম্বর ৩৩২/১৮) গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কারাগারে যান ভুক্তভোগী রূপম কান্তি দেবনাথ। চলতি বছরের ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে রূপমকে (বাদীর স্বামী) অন্যায়ভাবে বিচারাধীন মামলায় জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য এবং স্থায়ীভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন করার জন্য শারীরিক নির্যাতন, বিষাক্ত নেশা জাতীয় দ্রব্য পুশ ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করেন।
 ওই হাজতি বর্তমানে চমেক হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। রবিবার রাতে সরেজমিনে চমেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের এমএক্স ১২ শয্যায় গিয়ে এ প্রতিবেদক ভুক্তভোগীর মুখ, হাতসহ সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। রূপমের অন্ডকোষে আগুনের ছ্যাঁকা দেয়ার মতো চিহ্ন পাওয়া গেছে। পুরো অন্ডকোষ, পুরুষাঙ্গসহ বিভিন্ন স্থান আগুনে ঝলসে গিয়ে মাংসপিন্ড খসে পড়ার মতো চিহ্ন দেখা যায় খালি চোখে। ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি পূর্বকোণকে বলেন, অ-কোষে গুরুতর আঘাতের ফলে সেখানে রক্তজমাট বেঁধে যায়। এরপর অন্ডকোষ গ্যাংগ্রিনে আক্রান্ত হয়ে গেছে। তাছাড়া রোগীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে রূপমকে হাসপাতালে ভর্তি ফাইলের একটি মেডিকেল নোটে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে, মাল্টিপল ব্রুইস ইন হোল বডি।  আদালতসূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল কোতোয়ালী থানায়  রতন ভট্টাচার্য নামের এক ব্যবসায়ীর দায়ের করা জালিয়াতি ও আত্মসাতের (৪০৬/৪২০) মামলায় রূপম ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে কারাগারে রয়েছেন। আত্মসাতের মামলায় তিনি চুক্তিমতো টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ওইদিন আদালত তাঁর জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১০ টায় তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কারাগার থেকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করেন কারা কর্তৃপক্ষ।
গত রবিবার রাতে হাসপাতালের শয্যায় রূপমের কাছে  কারাগারে কী ঘটেছিল  জানতে চাইলে তিনি চোখ খুলতে পারছিলেন না। বার বার জিজ্ঞেস করার পর অনেক কষ্টে মৃদু চোখ খুলে বলেন, তাঁরা আমাকে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়েছে। এতটুকু বলেই তিনি আবারও চোখ মুদেন।  ভুক্তভোগীর স্ত্রী ঝর্ণারানী দেবী গত শনিবার এ প্রতিবেদককে জানান, আমার স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করার একদিন পর তাঁর অসুস্থ হওয়ার সংবাদ জানানো হয়। তিনি বলেন, গুরুতর আহত আমার স্বামীকে পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়েই হাসপাতালে আনা হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, নির্যাতনের খবর পেয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বন্দি রূপম কান্তি নাথের উন্নত চিকিৎসার জন্য আদালতে আবেদন করেন মামলার 1110বাদী। আদালত আবেদনটি মঞ্জুরও করেন। বর্তমানে রূপম কান্তি নাথ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেল সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মামলা হয়েছে শুনেছি। তবে আদেশ হয়নি। আদেশ কী হয় দেখে আইনিভাবে মোকাবিলা করবো।’
আলোকিত প্রতিদিন/২ মার্চ-২০২১/জেডএন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here