কৃষকের হাহাকার শোনার কেউ নেই

0
353

প্রতিনিধি, নোয়াখলী:

নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত মোস্তফা বাজার কৃষি শষ্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত।এখানে শীতকালীন সবজি শীম ও বীচি অন্যদিকে বর্ষাকালীন সবজি শশা আবাদের ফলে জেলার শ্রেষ্ঠ কৃষি বাজার হিসাবে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। এখানকার উৎপাদিত শীম ও শীমের বীচির কদর দেশজোড়া বলে জানালেন কৃষকেরা। বাংলাদেশে উৎপাদিত শীমের বীজের যত জাত আছে তন্মধ্যে সুবর্ণচরের বীজ সেরা। যে কারণে শীমের বীচি বেচাকেনার হাট হিসাবে মোস্তফা বাজারের নাম ইতোমধ্যে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পৌঁছেছে। সকাল থেকে রাত অবদি চলে বেচাকেনা। অন্যদিকে যখন শীমের বীচি শেষ শেষ তখন উঠে আসে শশা। মূলত রবি শষ্য উৎপাদনের পাশাপাশি মাছ চাষের সাথে জড়িত হাজার খানিক কৃষক। বলা যায় শতকরা নব্বই শতাংশ মানুষ সরাসরি কৃষি কাজের সাথে জড়িত। প্রতিবছর উৎপাদিত রবি শষ্য শীম ও বীচি এবং মাছ বিক্রির পরিমাণ ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা হলেও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য নেই কোন সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তাই এখানকার কৃষকেরা দাদনের উপরে নির্ভরশীল। তবুও তাতে তাদের আক্ষেপ নেই। জনতার নেত্রী শাহিদা, কাশেম সর্দার, ছানা উল্যাহ সহ শতাধিক কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মূল সড়ক থেকে এ বাজারের দূরত্ব প্রায় ২ কিঃমিঃ। এ রাস্তাটি দীর্ঘ দিন অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকার দরুন চলাচলে সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বাহির থেকে ব্যাপারিরা গাড়ি নিয়ে আসতে চায় না। যদিও তারা আসে কিন্তুু পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় না। শুষ্ক মৌসুমে কোনমতে গাড়ি আসলেও বর্ষা মৌসুমে একেবারেই আসে না। তখন আমরা বাধ্য হয়ে শশা গুলো মাথায় অথবা পাওয়ার টিলার করে মূল সড়কে নিয়ে যায়। শতশত টন শশা শুধু মাত্র এ কারণে নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকেরা জানালেন, বর্ষা মৌসুমে কাঁদা মাটির এ রাস্তা কোমড় অবদি ডুবে যায়। এ ভাবে কত শত মেট্রিক টন শশা বিগত ২০ বছরে নষ্ট হয়েছে তার কোন নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই।

এইসব বিষয় নিয়ে কখনও কোথায় যোগাযোগ করেননি এমন প্রশ্নে তারা বলেছিলেন বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে অনেকবারই বলা হয়েছে। কয়েকজন কৃষক ও আড়ৎদার মিলে এখানকার সাংসদ ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি রাস্তাটি করে দেয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু সাংসদের এমন নির্দেশনার ২বছর পার হলেও কোন এক অজানা কারণে সেটা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।বাস্তবায়নের বিষয় জানতে গেলে বলা হতো ফান্ড নেই। ফান্ড আসলে করে দেয়া হবে। এ কথা গুলো যখন কৃষকেরা বলেছিল তখন অনেকে কেঁদে ফেলেন। উপস্থিত আলোকিত প্রতিদিনের এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নীতি নির্দারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। স্থানীয় কৃষক জয়নাল, হাবীব, আড়ৎদার জামাল মেম্বার, হাজী সামছুল হক মেম্বারের দেয়া তথ্যে জানা যায় গত অর্থ বছর কৃষকদের থেকে তোলা ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে রাস্তাটির কিছু অংশে সংস্কার করা হয়। কিন্তু সেটাও অতি বৃষ্টির কারণে ভেসে যায়। তাই তাঁরা প্রশ্ন করেন বর্ষার আগে এ বছর কী তাদের নিজেদের অর্থ খরচ করে রাস্তা সংস্কার করতে হবে? কৃষকদের এ প্রশ্নটি তুলেছিলাম নোয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী একরামুল হক এর কাছে। তিনি জানালেন জরুরি মেরামতের জন্য তাদের কাছে কোন ফান্ড নেই। তবে আগামী অর্থবছরে এ রাস্তাটি পাকা করে দেয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানান ।

কৃষকদের দূর্দশা নিয়ে কথা হয় সুবর্ণচর উপজেলার চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিমের সাথে। তিনি রাস্তাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করে দিবেন। কিন্তু কোনমতেই জুনের আগে সম্ভব নয়। তাহলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কৃষকদের কী হবে? এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খান এর সাথে মুঠোফোন জানিয়ে তার মন্তব্য চাইলে তিনি বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে আমাদের জানান। সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের হাজার কৃষক, ছাত্র-ছাত্রী, সহ প্রায় ৫ হাজার মানুষের যোগাযোগের একটি মাত্র রাস্তাটি আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগে সংস্কারের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, কৃষিমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট উদ্ধর্তন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আলোকিত প্রতিদিন/ ৭ মার্চ-২০২১/দ.ম.দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here