বুধবার টাইগারদের কোয়ারেন্টাইন পর্ব শেষ হয়েছে। এর মধ্যে তাদের ৪ বার করোনা টেস্ট করা হয়। সর্বশেষ টেস্টেও সফরে থাকা বাংলাদেশ দলের সবার ফল নেগেটিভ এসেছে।
সকল শর্ত শেষ করেই এখন একসঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ পাবেন তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। ক্রিকেটারদের মুখে মাস্কও পরতে হবে না বলে জানা গেছে।
এদিকে বাংলাদেশ দল বুধবার ক্রাইস্টচার্চের কোয়ারেন্টিন সেন্টার ছেড়ে যাবে কুইন্সটাউন। তার আগে সাময়িক বিশ্রামের জন্য ক্রাইস্টচার্চের নভোটেলউঠবে হোটেলে। সেখান থেকে সন্ধ্যায় কুইন্সটাউনের উড়োজাহাজ ধরার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
নিউজিল্যান্ডের মুক্ত বাতাসে পা দিয়েই স্বস্তির নিঃশ্বাস তামিম ইকবালের। তিনি বলেন, এখন ভালো দিক হচ্ছে আমরা বাইরে বের হয়েছি। পরিষ্কার বাতাসে আছি। এখন গত দুই সপ্তাহর মতো না। যখন আমাদের একটু সময় দেওয়া হতো বের হওয়ার। এখন সব ভালো।
খুশি দলের আরেক ক্রিকেটার সৌম্য সরকারও। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জানিয়েছেন ভালো লাগার অনুভূতি। সতীর্থ মুস্তাফিজুর রহমান, আল আমিন হোসেন ও রুবেল হোসেনকে পাশে নিয়ে একটি ছবি পোষ্ট করে ক্যাপশনে লিখলেন, ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষ। এখন ক্রিকেট আর মুক্ত বাতাসের প্রতীক্ষায়। আপনাদের শুভ কামনায় রাখুন আমাদের।
এদিকে, ১১ মার্চ থেকে কুইন্সটাউনেই চলবে মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালদের অনুশীলন। চলবে ৫ দিনের ক্যাম্প। ২০ মার্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরু। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজের পরের দুই ওয়ানডে ২৩ ও ২৬ মার্চ।
আগামী ২৮ মার্চ টি-টুয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ। সিরিজের শেষ দুটি টি-টুয়েন্টি ৩০ মার্চ ও ১ এপ্রিল।
তামিমের খুব ইচ্ছে, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করারও। তিনি বলেন, ‘আমি এই নিয়ে চতুর্থ বা পঞ্চমবার এলাম নিউজিল্যান্ডে। সবসময়ই এই দেশে আসতে মুখিয়ে থাকি আমরা। খুবই সুন্দর একটি দেশ। এখানকার মানুষরা ভালো। এখানকার প্রধানমন্ত্রীর কথাও বলতে চাই, ওই কঠিন সময় তিনি যেভাবে সামলেছেন, বাংলাদেশের সবাই বাহবা দিয়েছে। তিনি দারুণ কাজ করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে কখনও তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হলে আমি তাকে ধন্যবাদ জানাব।’
আবার সেই নিউজিল্যান্ড সফর। সেই ক্রাইস্টচার্চেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ‘সেই ক্রাইস্টচার্চ’ বলা এই কারণে, এখানেই যে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের ভয়ংকরতম ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিল টাইগাররা।
২০১৯ সালের ১৫ মার্চ। নিউজিল্যান্ড সফরে সেবার একটুর জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। শুক্রবার জুমার দিনে তারা সবাই যাচ্ছিলেন ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে।
সেই মসজিদেই গুলি করে পাখির মতো মুসুল্লিদের হত্যা করে বর্বরতম ঘটনার জন্ম দেন ব্রেন্টন টারান্ট নামের এক সন্ত্রাসী। তামিম ইকবালরা খুব কাছে থেকে দেখেন সেই হত্যাযজ্ঞ। সেদিন কয়েক মিনিট এদিক সেদিক হলেই তারাও পড়তে পারতেন বিপদে।
এমনই রোমহর্ষক এক ঘটনা, চাইলেই কি ভোলা যায়? অনেকটা সময় পেরুলেও বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সেই স্মৃতি এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকারসহ সে সফরের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার আছেন এবারের দলেও।
বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম সেই স্মৃতি নিয়ে বলেন, ‘আমাদের সবার জন্যই সময়টা ছিল কঠিন। বিশেষ করে যে পরিবারগুলো তাদের আপনজনকে হারিয়েছে। আমরা শুধু তাদের জন্য প্রার্থনাই করতে পারি এবং আমরা প্রার্থনা করতে পারি, ইশ্বর যেন তাদের সহ্য করার শক্তি দেন। খুব ভালো সময় ছিল না। তবে আমাদের সামনে তাকাতে হবে।’
ক্রাইস্টচার্চ হামলার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডের্ন যেভাবে পুরো পরিস্থিতি সামলেছেন, আহত-নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সমব্যথী হয়েছেন, তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসাই করলেন তামিম।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১০ মার্চ -২১ /এম.জে