পত্রিকা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখছে দুখী রাম। স্বভাবটা তাঁর অনেক দিনের পুরনো। পত্রিকার প্রতিটি পাতা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন না পড়েন এ বিষয়ে মন্তব্য করা কঠিন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি দুখী রামের বাবা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রিকশা চালান। রিকশার প্যাডেলের সাথে ঘুরতে থাকে স্বপ্ন, ছেলে লেখাপড়া শিখে কর্মক্ষম হবে। সংসারের দায়িত্ব ছেলের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে দুখী রামের বাবা কৃষ্ণ গোপাল অবসরে যাবেন।
বিধিবাম চেহারার আভিজাত্য আকর্ষণীয় হলেও পকেটের অবস্থা নাকাল। বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে উদাস মনে ভাবে দুখিরাম। আনমনে বিড় বিড় করে বলে বাবার বয়স বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্লান্তি। দুখী রাম লেখা পড়ার পাঠ অনেক কষ্টে চুকাতে পারলেও চাকরি কপালে জুটছে না। চাকুরির জন্য আবেদন আর ইন্টারভিউ দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠেছে। এদিকে সরকারি চাকুরির নির্ধারিত বয়সও শেষ। বেসরকারি চাকরির বাজারেও লেগেছে আগুন। পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে চোখ আটকে যায় চটক দারী একটি বিজ্ঞাপনে। অবিবাহিত বেকার পাত্র চাই। দুখী রামের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। বেকার পাত্র চাই, এরকম বিজ্ঞাপন তার কোন দিন চোখে পড়েনি। অনেক বড় বিজ্ঞাপন। পাত্রী নিজে পাত্র চেয়ে নিচে তার নাম ঠিকানা মোবাইল নম্বর, ইমেইল নাম্বার দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছেন। এ রকম ঘটনা শুধু আকর্ষণীয় নয়, বিরল ও বটে। আগ্রহী প্রার্থী গণকে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটি নিম্নরূপ: বেকার শিক্ষিত পাত্র চাই আমি রুমা সাহা নিন্মে আমার বিস্তারিত ঠিকানা উল্লেখ করা হলো। আমার ইতি পূর্বে বিবাহ হয়েছিল কিন্তু স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় আমি নিজে ডিভোর্স করেছি। এখন আমি বিয়ে বসতে নয়, বিয়ে করতে চাই। আমার গায়ের রঙ ফর্সা। লম্বা পাঁচ ফিট চার ইঞ্চি। আমার ওয়েট ৬৮ কেজি। আমার বাবা মৃত্যুর পূর্বে আমাকে শহরে দু’টি বাড়ি ও দুটি গাড়ি লিখে দিয়ে গেছেন। বাড়ি ভাড়া দিয়ে মাসিক দশ লক্ষ টাকা আমার আয় আছে। কাজেই আমি নিম্ন বর্ণিত শর্তে বিয়ে করতে চাই। শর্তাবলি : (১) আগ্রহী ছেলেকে ঘর জামাই থাকার জন্য রাজি থাকতে হবে। (২) বিবাহ প্রার্থীকে যে কোন বিষয়ে স্নাতক উত্তর পাশ হতে হবে। (৩) দেখতে সুদর্শন ও হাইট পাঁচ ফিট ৬ ইঞ্চি হতে হবে। (৪) আগ্রহী প্রার্থীকে বাসার কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অর্থাৎ রান্না বান্না, ঘর ধুয়া মুছায় পারদর্শী হতে হবে। বিয়ে হলে স্বামী নিজ হাতে ভাত রান্না করে স্ত্রীকে খাওয়াতে হবে। (৫) নারী স্বাধীনতা দিতে হবে অর্থাৎ বিয়ের পর স্ত্রী অন্য কোন পছন্দ মতো ছেলের সাথে ঘুরতে চাইলে কিংবা বয়ফেন্ডকে বাসায় নিয়ে এসে রাত্রি যাপন করতে চাইলে স্বামীর অজর আপত্তি করা চলবে না। (৬) বিবাহ আগ্রহী প্রার্থীকে দশ লক্ষ টাকা এককালীন প্রদান পূর্বক কিনে নেয়া হবে বিধায় তার ইচ্ছে, বা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কোন গুরুত্ব দেয়া হবে না। বরং মেয়ের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটবে। (৭) বিবাহে আগ্রহী পরিবার পরিজন বলতে কেউ যদি থাকে তাদের ভরণপোষণের জন্য মাসিক পঞ্চাশ হাজার টাকা হাত খরচ দেয়া হবে। কিন্তু তাদের সাথে স্বশরীরে যোগাযোগ রাখতে পারবে না। (৮) বিজ্ঞাপন দাতা কোন কারণে রাগান্বিত হয়ে যদি ছেলের সহিত কোন ধরনের উগ্রতার আশ্রয় নেয় তাহলে আইনের আশ্রয় নেয়া যাবে না মর্মে রিটেন দিতে হবে। (৯) অত্র বিবাহের বিজ্ঞাপন দাতা কোন কারণ ছাড়াই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবেন কিন্তু ছেলের পক্ষ হতে কখনোই কোন কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবেন না। দুখী রাম পুরো বিজ্ঞপ্তি পড়তে পারে না, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। হারিয়ে ফেলে বিজ্ঞাপন পড়ার আগ্রহ ভাবতে থাকে আকাশ পাতাল। এক দিকে চাবুক হাতে তাড়া করা একটি নারী মূর্তি অপর দিকে মায়ের অসুস্থ মায়াময় মুখ আর বাবার বয়োবৃদ্ধ চেহারা মানসপটে ভেসে উঠে। ভাবতে ভাবতে আর কিছুই ভাবতে পারে না, দুখী রাম অতিক্রম করে ভাবনার সীমানা। সূর্যের কিরণ মা মাটির বুকে জ্বালিয়েছে উওপ্ত আগুন। দ্রুত পায়ে হেটে যায় দুখী। বাজারে গিয়ে কম্পিউটারের দোকানে হাজির। দোকানে উপচে পড়া ভীড় ঠেলে হন্তদন্ত হয়ে লিখতে বসে আবেদন। আবেদনের সাথে ছবি যুক্ত করে পোস্ট বক্সে ফেলে ক্ষিপ্রতার সাথে বাড়ীতে আসে। দুখী রাম বাড়িতে ফিরে দেখেন মা অঞ্জলি দেবী পেটের ব্যথায় চিৎকার করছেন। বাবা কৃষ্ণ গোপাল এখনো বাড়িতে ফিরেননি। এদিকে দুখী রামের পকেটে টাকা নেই। বলের ভেতর ঠান্ডা পানি মায়ের পেটের উপর রাখে তবু পেটের ব্যথা কমে না। নরম মাটি কলার পাতার উপর রেখে পেটের মধ্যে জাবদেয় কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, খাবারের ছোটা খাওয়ানোর পর পেটের ব্যথা কিছুটা কমলে দৌঁড়ে যান ডাক্তারের নিকট। ডাক্তারকে বাড়ীতে এনে মায়ের চিকিৎসা করান। পকেটে টাকা নেই হাতের ঘড়িটি একটি মুদি দোকানে বন্ধক রেখে ডাক্তার সাহেবের ভিজিট দিয়ে সসম্মানে বিদায় দেন। দুখী রাম খুব ভাল করেই জানে মায়ের অসুস্থতার জন্য পুনরায় দ্বারস্থ হতে হবে এই ডাক্তারের নিকট। গ্রামীণ জনপদে এম.বি.বি.এস ডাক্তার পাওয়াই প্রায় দুুুরুহ। গ্রামীণ ডাক্তারগণ ছুটছেন শহরের দিকে আর শহরের ডাক্তারগণ ছুটছেন বিদেশের দিকে। এ যেন এক ঊর্ধ্বমুখী ছোটাছুটির প্রতিযোগিতায় সবাই লিপ্ত হয়েছেন। সারারাত অসুস্থ মায়ের শিয়রে বসে কাটিয়েছেন দুখী রাম। মায়ের পেট ব্যথা শুরু হলে দুই তিন দিনের আগে সারতে চায় না। ভালো চিকিৎসাও করাতে পারছে না টাকার অভাবে। কয়েকদিন ধরে কৃষ্ণ গোপাল বাড়ি ফিরেই ছেলের দিকে ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কি যেন বলতে চায় কিন্তু বলতে পারেনা সে। একমাত্র ছেলে অনেক আদর স্নেহে কাদামাটির মধ্যে গড়াগড়ি খেয়ে বড় করেছে। সকালে দুখীরামের ঘুম ভাঙলো ডাক পিয়নের ডাকে। ইন্টারভিউ কার্ড হাতে ডাক পিয়ন। ক্ষণিকেই উঠোনে জড়ো হয় কৃষ্ণ গোপাল, অঞ্জলি দেবী ও দুখী রাম। পিয়ন দুখীর হাতে ইন্টারভিউ কার্ড দিতেই মা-বাবার একসাথে প্রশ্ন এটা কিরে দুখী রাম। মৃদু কন্ঠে দুখী বলে ইন্টারভিউ কার্ড। অসুস্থ মা ও বাবা দুখীরামের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে কৃষ্ণ গোপাল স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলে দেখে নিও দুখীর মা এবার তোমার ছেলের চাকরিটা হবে। দুখীর মাও হাউমাউ করে কেঁদে সৃষ্টিকর্তার নিকট হাত তুলে ফরিয়াদ করেন। ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলেন বাবা যে করেই হোক চাকরিটা যেন হাতছাড়া না হয়। ভালো করে ইন্টারভিউ দিবি। যা যা প্রশ্ন করে চাকরি হবার মতো করে উত্তর দিবি। দুখী রাম মাথা নিচু করে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মাটি খুঁড়তে থাকে। এক ঝাঁক দমকা হাওয়া ভাসিয়ে নেয় দুখীর অগোছালো চিন্তা। দুখী রামের বেশ ভূষাই আজ অন্যরকম। দেখতে দিব্বি যেন রাজপুত্র । হাতে কাগজপত্রের ফাইল। অনেক সময় ওয়েটিং রুমে বসে আছে । অনেক চাকরি প্রার্থী সেখানে উপস্থিত। দুখী রাম মনে মনে ভাবে বেকারের সংখ্যাও অনেক। সব জায়গায় প্রতিযোগিতা। এ যেন পাবলিক টয়লেটের লাইন ধরা ভীড়। কে কার আগে প্রবেশ করবে। আমার মত অধম অস্বচ্ছল তাহলে এখনো অনেক। এই ভেবে বুকের ভেতর একটি দীর্ঘশ্বাস চেপে যায়। গেটের সামনে অপেক্ষমান দারোয়ান দুখী রামের নাম ধরে ডাকে। চিন্তা বাধাগ্রস্ত হয়ে নিমিষেই মিলিয়ে গেল মাথার ওপর ঘূর্ণিয়মান ফ্যানের ঘ্যাঁস ঘ্যাঁস আওয়াজে। তড়িঘড়ি করে দুখী রাম উঠিতো পড়ি অবস্থায় দরজায় হাজির। ভেতরে প্রবেশ করে ভালো ভাবে দেখে সাক্ষাত দেবী বসে আছেন। একটি ফাইল এর দিকে ঝুঁকে মনোযোগ সহকারে কি যেন পড়ছেন। দুখী রাম দাঁড়িয়ে আছেন টেবিলের অপর প্রান্তে। বসার জন্য যদিও দুটি চেয়ার আছে কিন্তু দুখী রাম কাগজপত্রের ফাইল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। বসার অনুমতিটুকু চাওয়ার শক্তিও হারিয়ে ফেেেল্ছ সে। অনেক সময় পর মেয়েটি সোজা হয়ে বসে সরাসরি দুখী রামের চোখে চোখ রাখলেন। সেই চোখের গতি এত তীক্ষ্ণ যে দুখী রাম চোখ সরিয়ে নিয়ে মাথা নিচু করে লজ্জায় কাঁপছে। মেয়েটি আপন-মনে চেয়ারে কয়েকবার চক্কর দিয়ে আবার সোজা হয়ে বসলেন। দুখীরামের গলা শুকিয়ে একেবারে কাঠ। পানির পিপাসায় ওষ্ঠাগত প্রাণ। এভাবেই গরাতে লাগল সেকেন্ড মিনিট ঘন্টা। কেউ কিছু বলছেন না। মেয়েটি এবার রাগত কণ্ঠে বললেন আপনি কি কিছু বলবেন। দুখী রাম বলল হ্যাঁ ১ গ্লাস পানি হবে। মেয়েটি টেবিলে রাখা একটি পানির বোতলের দিকে ইঙ্গিত করলেন। দুখী রাম এবার বোতলের মুখ খুলতে গিয়ে থর থর করে কাঁপছে। হাবভাব দেখে মেয়েটি বোতলের মুখ খুলে পানির বোতল এগিয়ে দিলেন। দাঁড়িয়ে পানি খেতে গিয়ে দুখী শার্ট প্যান্ট ভিজিয়ে ফেললো। মেয়েটি এবার বললেন, বসে পানি পান করুন। দুখী রাম খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে একটি চেয়ারে বসলেন। পানি পান শেষে টেবিলের দিকে ঝুঁকে আছে দুখী রাম। মেয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন দুখীরামের আচরণ। মৃদু কণ্ঠে বললেন আপনার কিছু বলার আছে। এবার দুখী রাম খানিকটা নড়েচড়ে বসে বললেন আমি সব শর্তে রাজি। মেয়েটি বলল সেটা তো আবেদনে লিখেছেন আর কোনো বক্তব্য আছে আপনার ?
না।
মেয়েটি রাগান্বিত কন্ঠে বললো- এই পেপার ওয়েটটা আপনার মাথায় ভাঙবো। দুখী রাম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন। মেয়েটি বলল এবার চেয়ার হতে উঠে এই রুমের ভেতর কিছু সময় হাঁটুন। দুখী রাম ধীরে ধীরে রুমের ভেতর হাঁটতে লাগলো। এর মধ্যে মেয়েটি অর্থাৎ রুমা সাহা একটি ব্যাগের ভেতর ৫ লাখ টাকা ভরে টেবিলের উপর রাখলেন। দুখীকে ডেকে বললেন – শুনুন এই ব্যাগে ৫ লক্ষ টাকা আছে আমার গালে যদি একটি থাপ্পর দিতে পারেন তাহলে আপনাকে টাকাগুলো দিয়ে দিব, আপনি রাজি? দুখী রাম বলল আমার টাকা লাগবে না ম্যাডাম । আমার ইন্টারভিউ কি শেষ ? না, শেষ হয়নি, ঠিক আছে আপনি দরজার মধ্যে একটি লাথি মারলেও টাকা পাবেন কিন্তু আপনার চাকরি হবে না। কারণ আপনি হ্যান্ডসাম হলেও স্মার্ট নন। আপনি গ্রাম্য ভূত। মৃদু কণ্ঠে দুখী রাম বলল আমি দরজায় লাথি মেরে আপনার ৫ লক্ষ টাকা দান গ্রহণ করতে পারব না। ওকে তাহলে আরাম করে আমার চেয়ারে বসুন বলে চেয়ার হতে উঠে দাঁড়া্লাে রুমা সাহা। এবার ও অনেক কষ্টে বলল ম্যাডাম আপনার চেয়ারে আপনি বসুন আমাকে ক্ষমা করবেন।
– তাহলে তো আপনার চাকরি হবে না।
-ঠিক আছে ম্যাডাম অনুমতি দিলে আমি এবার আসি।
দুখী রামের কথা শুনে না শুনার ভান করে রুমা সাহা কলিংবেল চাপ দিলো। দরজা খুলে দারোয়ান এসে হাজির। শোনে হাদারাম সাক্ষাত প্রার্থী উপস্থিত সবাইকে জানিয়ে দাও, আজকে আর কোন সাক্ষাতকার নেয়া হবে না। পরবর্তী তারিখ ফোনে জানিয়ে দেওয়া হবে। হাদারাম ম্যাডামের নির্দেশ মতো সবাইকে জানিয়ে দিতে বাইরে গেল। এ ফাঁকে দ্রুততার সাথে রুমা সাহা ভেতর হতে দরজায় তালা লাগিয়ে দিলো। দরর্শনার্থীদের দুটো চেয়ার মুখোমুখি করে একটিতে ধপাস করে বসলো। দুখী রাম অবশ্য অন্য চেয়ারে বসা ছিলো।
এবার ধমকের স্বরে বললো, টেবিলের উপর কাপড়ের যে ব্যাগটি আছে ওতে টাকা আছে টেবিলে ঢালুন। দুখীরাম টাকা গুলো টেবিলে ঢাললো, এবার গুনুন। দুখীরাম ভয়ে ভয়ে গুনতে লাগলো। টাকা গুনতে গিয়ে বড় বড় ভুল হচ্ছে দুখী রামের। রুমা সাহা হাতে একটি বেত নিয়ে দু’হাতে কচলাচ্ছেন। দুখী রাম ভর্কে গিয়ে বার বার ঢোক গিলছে। ঘেমে শার্ট প্যান্ট ভিজে একাকার। রুমা সাহা দৃশ্য দেখে মৃদু হাসছে। এক পর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে রুমা বললো-বাড়ী মেরে মাথা ফাটিয়ে দেব।
দুখী রাম বললো-ম্যাডাম মাথায় না মেরে শরীরে মারুন।
রুমা সাহা টাকা গুলো পুনরায় নিজ হাতে গুনে দুখী রামের হাতে ব্যাগটি ধরিয়ে দিয়ে বললো, আমি আপনার সম্পর্কে খোজ খবর নিয়েছি ঘরে আপনার অসুস্থ মা, বাবা রিক্সা চালক। টাকা গুলো নিয়ে গিয়ে আপনার মায়ের চিকিৎসা করান আর বাবাকে একটি মুদি দোকান করে দিবেন। আর হ্যাঁ, বাড়ী পৌঁছে আমাকে একটি ফোন দিয়ে জানাবেন ভালো ভাবে পৌঁছাতে পারলেন কি না? দুখী রাম মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করলেন ম্যাডাম তাহলে কী ধরে নিবো চাকরীটা আমার হবে।
চাকরী বিষয়ে না হয় পরে আলাপ করবো। খারাপ ভাববে আর চাকুরি না হলে আমি টাকাই বা নিবো কেন? তাওতো ঠিক। আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করছি বলে বদ্ধ ঘরের দরজা খুলে দিয়ে হাদারাম কে ডাকলেন। শোন হাদারাম তুমি দুখী রাম এর সাথে ওদের বাড়িতে যাবে।
আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি তুমি আমার গাড়ি নিয়ে যাবে। দুখী রাম এর বাবা মায়ের হাতে এই পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে বলবে, দুখী রামের আমাদ্রে কোম্পানীতে চাকরী হয়েছে। অফিস তাকে পাঁচ লক্ষ টাকা অগ্রীম প্রদান করেছে। দুই মাস পর জয়েন্ট। আর হ্যাঁ, যদি জিজ্ঞেস করে কী পদে চাকরি হয়েছে তাহলে বলবে আমাদের কোম্পানীর জি.এম পদে। ওকে।
হাদারাম টাকার ব্যাগ হাতে নিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে রুম হতে বেরিয়ে এলো।
দুখী রাম কী যেনো বলতে চেয়েছিলো রুমা সাহার ধমকে চুপসে গিয়ে ভাবা চেকা খেয়ে রুম হতে বেরিয়ে আসলো।
রুমা রুমের ভেতর কিছুক্ষণ পায়চারী করে কী যেনো মনে মনে ভেবে নিজের অজান্তেই মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো ইউরেকা।
গল্প: চটকদারী বিজ্ঞাপন
লেখক: সৈয়দ রনো
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৫ মার্চ-২১/ দ ম দ