প্রতিনিধি,শরীয়তপুর:
শরীয়তপুরে পিপি হাবিবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেন হত্যা মামলায় ৬ জনের ফাঁসি, ৪ জনের যাবজ্জীবন, ৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও বাকিদের খালাস দিয়েছে আদালত। রাষ্ট্র ও আসামী পক্ষের যুক্তিতর্ক ও শুনানি শেষে রবিবার (২১ মার্চ) অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইন তার বেঞ্চে এ রায় প্রদান করেন। ৩০২ ধারায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, শাহীন কোতোয়াল, শহীদ কোতোয়াল, শফিক কোতোয়াল, শহীদ তালুকদার, সোলায়মান সরদার, মজিবুর তালুকদার। একই ধারায় যাবজ্জীবন প্রাপ্তরা হলেন, সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদার, বাবুল খান, ডাবলু তালুকদার, টোকাই রশিদ। এছাড়াও মঞ্জুর হোসেন মন্টু তালুকদার, মজনু তালুকদার, জাকির হোসেন আসলামকে ১৪৭ ধারায় ২ বছরের সাজা দিয়েছে আদালত। বাকি ৪০ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলার এজহার ও বাদীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (পালং-জাজিরা) শরীয়তপুর-০১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন জাজিরা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার। আর আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন কে এম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেব। ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ঐ নির্বাচনে জাজিরা উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়। স্থগিত হওয়া সেই নির্বাচন নিয়ে শরীয়তপুর শহরের নিজ বাসভবনে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি পিপি এ্যাড. হাবিবুর রহমান আওয়ামীগের প্রার্থী মোবারক আলী সিকদারের পক্ষে সভা করছিলেন।
ঐ সভায় হামলা চালান আওরঙ্গজেব সমর্থক যুবলীগের সাবেক নেতা সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদারের লোকজন। তার ভাই মঞ্জুর হোসেন মন্টু তালুকদার সেখানে গুলিবিদ্ধ হোন। কিছুক্ষণ পরে ঐ বাসভবনে আবার হামলা হয়, তখন পিপি হাবিবুর রহমান ও তার ভাই পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন খুন হোন। পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, হাবিবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত রহমানের করা মামলায় আওরঙ্গজেবকে প্রধান করে আসামী করা হয় মোট ৫৫ ব্যক্তিকে। পুলিশ তদন্ত শেষে আওরঙ্গজেবের নাম বাদ দিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এতে বাদী জিন্নাত তখন নারাজি দিলে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করলে জিন্নাত রহমান তখন উচ্চ আদালতে রিট করেন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে আওরঙ্গজেব বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। এরপর ২০১৩ সালের ৩ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন আওরঙ্গজেব। এরপর উচ্চ আদালত পুলিশকে মামলাটি পুনঃরায় তদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন।পুলিশ ২০১৩ সালের অক্টোবরে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল আওরঙ্গজেব ছাড়াও মামলাটির এজহারভুক্ত আসামী শাহজাহান মাঝি ও স্বপন কোতোয়াল মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়াও মামলাটির ৪ জন আসামী বিদেশ চলে গেছেন। হাবিবুর রহমানের ছেলে শরীয়তপুর জজ কোর্টের এপিপি ও শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র এ্যাড. পারভেজ রহমান জন বলেন, ‘এ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু আসামী যাদের ফাঁসির আদেশ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি এবং যাদের বিরুদ্ধে সরাসরি খুনের অভিযোগ রয়েছে, সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে আদালতে আমরা তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি, তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বলতে চাই যাদেরকে খালাস দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
এ চাঞ্চল্যকর মামলাটির রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শরীয়তপুর কোর্টের পিপি এ্যাড. মীর্জা হযরত আলী বলেন, ‘আপনারা শুনেছেন নিহতের পরিবার মামলার রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। আমি তার সাথে একমত, আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।’ আসামী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আদালত যে রায় দিয়েছে আমার আসামী পক্ষ এ রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি, প্রকৃত যারা এ হত্যাকারী ছিলেন তাদেরকে আড়াল করে রাষ্ট্র পক্ষ যে মামলার সাক্ষ্য প্রদান করেছেন, আমরা আশা করি রাষ্ট্র পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন, তারপরও বিজ্ঞ আদালত আমাদের এই সাজা প্রদান করেছেন। আসামী পক্ষ থেকে খুব শীগ্রই প্রতিকারের জন্য উচ্চ আদালতে যাবে এবং উচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করব।’ আলোচিত এ মামলাটির রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে জেলা উপজেলা ছাত্রলীগ, আওয়ামীলীগ ও সাধারণ জনগণ।
আলকিত প্রতিদিন/ ২১ মার্চ-২১/ দ ম দ