প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের নিরাপত্তা অফিসে হামলা ও সাধু সন্ন্যাসীদের উচ্ছেদের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। সোমবার (১৫ মার্চ) দুপুরে প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম ইসকনের বিভাগীয় সম্পাদক শ্রীপাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী আধ্যাত্নিক প্রতিষ্ঠান প্রবর্তক সংঘ তার গঠনতন্ত্রের মৌলিক নীতি ও উদ্দেশ্য সাধু সন্ন্যাসীদের দ্বারা সনাতন ধর্ম প্রচার ও প্রসারকে ধরে রাখার জন্য ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ(ইসকন) কে শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরটি দৈনন্দিন সেবাপূজা, উন্নয়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করেন। পরবর্তীকালে বৃহৎ মন্দির নির্মাণ, সাধুনিবাস নির্মাণ, পাহাড় সংরক্ষণ ও ধর্মীয় প্রচারের জন্য অন্যান্য আনুষাঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ ও ব্যবহারের জন্য মৌখিক ও লিখিত অনুমতি প্রদান করেন।দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ প্রবর্তক সংঘের নেতৃবৃন্দ ইসকনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে (রথযাত্রা, জন্মাষ্টমী, অন্নকুট ইত্যাদি) যোগদান করেছেন এবং সভাপতিত্ব করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বৃহৎ মন্দিরটি উদ্বোধনের ঠিক দুই মাস পূর্বে প্রবর্তক সংঘের কর্মকর্তাদের আচরণে আমরা ভিন্নতা লক্ষ্য করি। হঠাৎ করে তারা মন্দির দৈনন্দিন সেবা পূজা পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে এবং বিভিন্ন অযৌক্তিক প্রস্তাব উপস্থাপন করে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা তাদেরকে আলোচনার প্রস্তাব দিলে তারা আলোচনায় না বসে ১৪ই মার্চ বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে অতর্কিতভাবে বাবু তিনকড়ি চক্রবর্তী বিভিন্ন সরঞ্জামসহ ২০/২৫ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে মন্দিরের প্রধান নিরাপত্তা অফিস ভাংচুর করে এবং মন্দিরের ২ নং প্রবেশ গেইট তুলে ফেলে দেয়।
এসময় মন্দিরে অবস্থানকারী নিরীহ সাধু সন্ন্যাসীরা বাবু তিনকড়ি চক্রবর্তীকে নিরাপত্তা অফিস ভাংচুর না করার জন্য হাত জোর করে বিনীত অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি তাতে কোন রকম কর্ণপাত না করে সাধুদের বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং মন্দির ও সাধুনিবাস উচ্ছেদ করার হুমকি প্রদান করেন। এ কার্যক্রমে উনাকে বাধা দেয়া হলে উনি সাধুদের নামে মিথ্যা মামলা করে জেল খাটানোর হুমকিও দেয়। লিখিত বক্তব্যে তিনে আরো বলেন, প্রবর্তক সংঘ এ পবিত্র ভূমির অমর্যাদা করে হিন্দুদের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে এ ভূমির বিভিন্ন অংশের মালিকানা ছেড়ে দিয়েছে। আমাদের প্রশ্ন-বিগত ১৭ বছরে সনাতনীদের অর্থব্যয়ে ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণে তারা সহযোগিতা করে আজকে কেন ইসকনকে উচ্ছেদ করতে চাচ্ছে ? আমাদের আশংকা বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে কোটি কোটি টাকা মূল্যে হস্তান্তর করে দেয়া ভূমির মত এ মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন এলাকাও বরাদ্দ দিয়ে দিতে পারে। যেখানে শেভরণ, বেলভিউ,প্রাইম ব্যাংক, চক্ষু হাসপাতাল, কয়েকটি গাড়ির ওয়ার্কশপ, কবরস্থান, চায়ের দোকান,পেট্রোল পাম্পের,ফলের দোকানের মত স্থাপনা নির্মাণে জায়গা বরাদ্দ দিতে পারে, সেখানে ধর্মীয় কাজে এ ভূমি ব্যবহারে তাদের আপত্তি সাধারণ হিন্দু সমাজের কাছেও প্রশ্নবিদ্ধ। ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের সভাপতি শ্রীপাদ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সর্বদা পরিস্কার। আমরা দ্বিধাহীন কণ্ঠে সমগ্র সনাতনী সমাজকে আশ^স্থ করতে চাই যে, সাধু সন্ন্যাসীরা সনাতন ধর্ম ও জাতি গোষ্ঠির কাছে দায়বদ্ধ। ইসকন এ পবিত্র ভূমির প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা সনাতনীদের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করছে। আপনাদের কষ্টার্জিত অর্থে নির্মিত এ ভূমিতে কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করতে দেয়া হবে না। মহান মুনি ঋষি পরম্পরায় চলে আসা আমাদের পূর্বজদের সংস্কৃতি আমরা জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করব।সকলে এগিয়ে আসুন। বিলুপ্তির পথে চলে যাওয়া আমাদের শেষ অবলম্বনটুকু রক্ষা করুন। এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- চট্টগ্রাম ইসকনের বিভাগীয় সম্পাদক শ্রীপাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শ্রীপাদ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, শ্রীপাদ দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দাস ব্রহ্মচারী, দিব্যনিমাই দাস ব্রহ্মচারী, স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের শ্রী শচীনন্দন গোস্বামী, মুকুন্দভক্তি দাস ব্রহ্মচারী, অপূর্ব মনোহর দাস ব্রহ্মচারী,রুপেশ^র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী প্রমূখ।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২১ মার্চ-২১/ দ ম দ