কথায় নয়, কাজে নিশ্চিত হোক বইপ্রেমীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা

0
646

অনেক জল্পনা কল্পনার মধ্য দিয়ে ১৮ মার্চ শুরু হলো বাংলা একাডেমি বইমেলা। বাঙালি জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম অংশ একুশে বই মেলার জন্য লেখক,পাঠক, প্রকাশক বছর জুড়ে অপেক্ষা করেন অধীর আগ্রহ নিয়ে। সাধারণত ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকে বইমেলা শুরু হয়। যা এবার ব্যতিক্রম ঘটেছে করোনা মহামারীর কারণে। গত বইমেলার পরপরই এদেশে শুরু হয় করোনা তান্ডব। যার ফলে আমরা হারিয়েছি বাংলা সাহিত্যের দিকপাল কতকগুলো নিবেদিত প্রাণ। দীর্ঘসময় প্রাণঘাতী করোনা মহামারীর বেড়াজালে থাকার পর প্রথম কোথাও বড় সংখ্যার জনসমাগম হতে যাচ্ছে এই মেলার মধ্য দিয়ে। যেখানে বই প্রেমীরা দলে দলে আসবে নতুন বইয়ের খুঁজে। মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াবে মেলা চত্বরে এক স্টল থেকে অন্য স্টলে। দীর্ঘ গৃহবন্দী জীবনের অবসান ঘটিয়ে অনেক ছাত্রছাত্রীরাও যোগ দিতে যাবে লেখক, প্রকাশক ও অন্যান্য বইপ্রেমীদের এ মিলনমেলায়। এটা একদিক থেকে বেশ আনন্দের।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন এখনো করোনা মোকাবেলায় লকডাউন চলছে সেখানে আমরা এমন একটা মেলার আয়োজন করতে পেরেছি। তবে এ আনন্দের মাঝেও কিছুটা শঙ্কা ধরিয়ে দেয় করোনা সংক্রমণের ঊর্ধগতি। কিছুদিন করোনার সংক্রমণ কম থাকলেও মানুষের অসচেতন চলাচলের কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে সংক্রমণ, যার হার প্রায় ১০ শতাংশে চলে আসছে। ইতোমধ্যে আমাদের দেশে করোনার ২য় স্রোত ঠেকাতে ১২ দফা সুপারিশ প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই সবের মধ্যে একটা প্রস্তাব, “কাঁচাবাজার,পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, শপিংমল, মসজিদ, রাজনৈতিক সমাগম, ভোট অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, রমজান মাসের ইফতার মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান সীমিত করতে হবে”। তাছাড়াও সুপারিশ এ আছে সম্ভব হলে সম্পূর্ণ লকডাউনে যেতে হবে। না হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় রেখে যেকোনো জনসমাগম বন্ধ করার। করোনা সংক্রমণ বাড়লে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে এবং মেলা স্থগিত করা হতে পারে। কিন্তু এ মেলা মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেলে বেশ লোকসানই গুনতে হবে প্রকাশকদের। এসবকিছু অবশ্যই মাথায় আছে আয়োজকদের। আমরা বইপ্রেমীরা কেউ চাইনা আমাদের প্রাণের মেলা বন্ধ হয়ে যাক। অন্যান্য বছরের মত এবারো মেলা চলুক মাসব্যাপী। লেখক, পাঠকরা মেলায় আসুক, মন ভরে নিশ্বাস নিক, ঘ্রাণ নিক নতুন বইয়ের। কিন্তু নিশ্বাসেও যে মিশে থাকতে পারে মরণঘাতী ভাইরাস, সেদিকে সপ্ত ইন্দ্রিয় খোলা রাখতে হবে। কেননা জীবনকে প্রাধান্য দিতে হবে আগে। বেঁচেই যদি না থাকি মনোবিকাশ, আত্মতুষ্টি নিয়ে চিন্তা করে কি হবে!আবার কেউ ভাববেন না ভয় দেখাচ্ছি। সব কথার মূল কথা হচ্ছে বইমেলা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চালিয়ে নিতে পুরোদেশের পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যনীতি মানার ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যেমনটি বলে যাচ্ছেন মেলা আয়োজক কমিটি, লেখক, প্রকাশক, বুদ্ধিজীবী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সে অনুযায়ী ব্যাবস্থাও নেয়া হয়েছে মোটামুটি। অন্যান্য বছরের তুলনায় মেলার পরিসরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। মেলায় ঢুকতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মাস্ক, ব্যাবস্থা করা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের। বলতে পারেন তাহলে মেলায় যেতে আর সমস্যা কোথায়?সমস্যা আছে, কারণ আমরা মুখে মুখে বিশ্ব জয় করতে পারি সময় শেষে ঘরই জয় হয়না। মেলা শুরু হবার আগে থেকেই আয়োজক, প্রকাশক, লেখক এমনকি টিভি চ্যানেল, পত্রিকা সকল মাধ্যমের লোকেরা গভীর চিন্তা করছেন, কথা বলছেন স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে। শেষে কথাগুলো কতটা কার্যকর হচ্ছে সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত।

মেলার প্রথম দুইদিনে খুব বেশি পাঠক সমাগম না হলেও দেখা গেছে স্বাস্থ্যনীতির ব্যাপারে খামখেয়ালিপনা। যেখানে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যায়। মেলায় ঢুকার সময় ঠিকই মাস্ক এবং স্যানিটাইজার নিশ্চিত করা হচ্ছে। কিন্তু ভিতরে ঢুকেই অধিকাংশ মানুষ খুলে ফেলছে মাস্ক, কেউ কেউ মাস্ক নামিয়ে রাখছে থুতনিতে। স্টলের বিক্রয়কর্মীদের একজনের মুখে মাস্ক থাকলে নাই চারজনের মুখে। মেলায় চলমান লাইভ অনুষ্ঠানের উপস্থাপকরা বারবার বলছেন স্বাস্থ্যনীতি মেনে মেলায় আসতে অথচ তাদের অনেকের মুখেই মাস্ক থাকেনা অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে। লেখক, পাঠকরা কথা বলছেন মাস্ক খুলে। লেকপাড়ে দর্শনার্থীরা পাশাপাশি বসে গল্পে মাতেন মাস্কবিহীন অবস্থায়। পাঠকরা এক স্টল থেকে অন্য স্টলে গিয়ে বই উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখছেন আবার অন্যরা এসে বই ধরছেন। স্যানিটাইজড না করে সেই হাত দিয়েই আবার নাক মুখ চুলকাচ্ছেন, মাস্ক একবার পকেটে রাখছেন আবার মুখে পড়ছেন। কে জানে কোথায় লেগে আছে সেই ভাইরাস? এমনি যদি হয় মূলচিত্র, তাহলে স্বাস্থ্যনীতি কিভাবে মানা হচ্ছে সেটা আসলে বোধগম্য নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে বাড়তে কখন ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় সেটাই চিন্তার বিষয়। করোনা এমন একটা ভাইরাস সামান্য ছোঁয়াতেই ছড়িয়ে পড়ে। এটি প্রতিরোধের মূল বিষয় হচ্ছে ব্যক্তি সচেতনতা যা গত একবছরে সকলেই জেনে গেছি। আমরা এটাও জানি মানুষ হিসেবে আমরা কতটা সচেতন। বই মেলায় যারা প্রবেশ করেন তারা সাধারণত সকলেই শিক্ষিত সচেতন। সবকিছু বুঝেও সামান্য গাফিলতির কারণে আমি কেনো অন্যের প্রাণ নাশের হুমকি হয়ে দাঁড়াবো? সকলে নিজ থেকে সচেতন হোন, মেলায় যাবার আগে মেলায় কি ব্যাবস্থা আছে না আছে চিন্তা না করে নিজেরা মাস্ক পড়ে যান, পারলে ডাবল মাস্ক পরেন তবে ডাক্তারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেসপাইরেটরি সমস্যা থাকলে ডাবল মাস্ক পড়বেন না, সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখেন যেনো কিছুক্ষণ পরপর অর্থাৎ নাকে মুখে হাত দেয়ার আগে হাত স্যানিটাইজ করে নেয়া যায়, যদি পারেন ওয়ানটাইম গ্লাভস পড়ে যান। নিজে সুস্থ থাকেন,আশেপাশের মানুষজনকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করেন। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে মেলার ভিতরে স্বাস্থ্যনীতি কঠোর ভাবে বজায় রাখতে উদ্যোগ নেন। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিন। শুধু কথা নয় শতভাগ কাজের মাধ্যমে নিশ্চিত করুন বই প্রেমীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা। তবেই হয়তো আমরা পুরো সময় উপভোগ করতে পারবো প্রাণের বইমেলার আনন্দ।

– ইমরান আকন্দ , লেখক ও গবেষক।

আলোকিত প্রতিদিন/ ২৩ মার্চ-২১/ দুখু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here