টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরীর বুকে সবুজের সমারোহ

0
468

প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল:

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধলেশ্বরী নদী এক সময়ে ছিলো খরস্রোতা। সেই ধলেশ্বরীতে এখন সবুজের সমারোহ। সাধারণ মানুষ এই নদী দেখে বুঝতেই পারবেন না এটা নদী। ধলেশ্বরীর বুকে এখন আবাদ হচ্ছে বোরো ধান ও সবজি। এক যুগেরও আগে থেকেই এ নদীর বেশিরভাগ অংশে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করছেন কৃষক। এ নদীর বুকে বন্যার মৌসুম ছাড়া বাকি সময় বিভিন্ন ফসলের চাষ হয়ে থাকে। সদর উপজেলার কাকুয়া, কাতুলী, বাঘিল, পোড়াবাড়ি, ছিলিমপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০ কিলোমিটার নদীতে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা) এর উর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র চন্দ জানান, টাঙ্গাইলের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যমুনা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর সৃষ্টি হয়েছে। নদীটির দুটি শাখা রয়েছে। একটি শাখা পার্শ্ববর্তী জেলা মানিকগঞ্জের উত্তর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মানিকগঞ্জের দক্ষিণে গিয়ে শেষ হয়েছে। সরেজমিন ধলেশ্বরী নদীর সদর উপজেলার চারবাড়ি, চর পাকুল্লা, কান পাকুল্লা, ঝিনাই পাড়া, তোরাপগঞ্জসহ বিভিন্ন অংশে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তৃৃত সবুজ আর সবুজ। কৃষকেরা বোরোধানসহ সবজি চাষ করছেন।

আবার অনেকেই গরু ছাগলও চরাচ্ছেন। চর পাকুল্লা গ্রামের ফরিদা বেগম (৫০) বলেন, ‘৩৫ বছর আগে আমার এই গ্রামে বিয়ে হয়েছে। ওই সময়ে নদী আমাদের বাড়ি থেকে কয়েকশ’ মিটার দূরে ছিলো। ওই সময়ে নদী অনেক গভীর থাকতো। চৈত্র মাসেও নদী দিয়ে নৌকা চালানো যাইতো। আগে এই নদী দিয়ে বড় বড় লঞ্চ, স্টিমার চলাচল করতো।’ একই গ্রামের মনতাজ আলী বলেন, ‘এ নদী দিয়ে নৌকা, স্টিমার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলতো। এখন আর আগের মতো পানি থাকেও না। বন্যার সময় তিন থেকে চার মাস নদীতে পানি থাকে। বছরের বাকি সময়টা শুকনো থাকে। জমিটি নদীতে পড়লেও আমার বাবার নামে রেকর্ড করা দেড় বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছি। ফলন আল্লাহর রহমতে ভাল হয়েছে। নদীর পাড়ে আগে কাশফুল ফুটতো। এখন আর ফুটে না।’ ৮৫ বছরের বৃদ্ধা রেজিয়া বলেন, ‘৭০ বছর আগে এই গ্রামে আমার বিয়ে হয়েছে। ওই সময়ের নদী আর বর্তমান সময়ের নদী আকাশ পাতাল পার্থক্য। তখন নদী দেখে নদীই মনে হতো। এখন নদী দেখে খালও মনে হয় না। এ বছরও আমি এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি।’ রহম আলী (৭৫) বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন চৈত্র-বৈশাখ মাসেও নদীতে গোসল করেছি। সাঁতার কাটছি।’ স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আমিন বলেন, ‘ধলেশ্বরী নদী বর্তমানে ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। বালুর পরিবর্তে উর্বর মাটিতে ভরে গেছে পুরো নদী। এ নদীতে ধানসহ যেকোন ফসল চাষ করলে ফলনও ভাল হয়।’ কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ওমরপুর, দেলদা, রাঙ্গাচিড়া ও চরপৌলি গ্রামের পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী নদী বয়ে গেছে। আমার ইউনিয়নের ৫ কিলোমিটার নদীতে ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে।’ বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের লোহাজানি, গোপালপুর গ্রামের পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী নদীর সীমানা প্রায় ৫ কিলোমিটার। প্রত্যেক জায়গাতে ধানসহ নানা ফসলের চাষ হচ্ছে।’ সিলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেক আলী বলেন, ‘পাকুল্লা, তেজপুর, সুবর্ণতলী গ্রামে পাশ দিয়ে ৪ কিলোমিটার নদী বয়ে গেছে। আগে নদীতে বালু আর বালু থাকতো। এখন উর্বর মাটি হওয়ায় ফসল চাষাবাদ করা হয়।’ পোড়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজমত আলী বলেন, ‘খারজানা, বাউশা, নন্দিপাড়া, ঝিনাই গ্রামের পাশ দিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার নদীর সীমানা। এখন নদী নাই বললেই চলে। নদীর জায়গায় বন্যার সময় ব্যতিত বাকি সময় ফসল চাষ হচ্ছে।’ কাতুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ঘোষপাড়া, চকদই গ্রাম দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার ধলেশ্বরী নদী বয়ে গেছে। প্রত্যেক জায়গাতেই ধান চাষ হচ্ছে।’

আলোকিত প্রতিদিন/ ২৩ মার্চ-২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here