রুয়েটের সিনিয়র প্রফেসরকে অপমানের অভিযোগ!

0
673

প্রতিনিধি, রাজশাহী:

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে পাঠানো প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বিশ^বিদ্যালয়টি সিনিয়র এক প্রফেসরকে অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার (২৬ মার্চ) বিকালে পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারি ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের নামের পরে ওই শিক্ষকের নাম জুড়ে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়; জনসংযোগ দপ্তরের জুনিয়র সেকশন অফিসার আ.ফ.ম. মাহমুদুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে পুরকৌশল বিভাগের ওই প্রফেসর (প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আলীম) একজন ডক্টরেট ডিগ্রীধারী হওয়া সত্ত্বেও বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে ‘পুরকৌশল বিভাগের মো. আব্দুল আলীম’ (তিনি যে একজন শিক্ষক তা উল্লেখ করা হয়নি)। এদিকে বিজ্ঞপ্তিতে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মিয়া মো. জগলুল সাদত এর নামের বানানও (জগলুল এর স্থলে জসলুল) ভুল করা হয়েছে। এছাড়া রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাধীনতা দিবসের ওই কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকলেও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ না করার অভিযোগ উঠেছে। এতে সাধারণ সম্পাদক সমর্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মাহফুজুর রহমান তপু বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচির যখন উদ্বোধন করা হয় তখন আমি মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের ঠিক বামপাশে অবস্থান করছিলাম। অথচ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। জনসংযোগের জুনিয়র সেকশন অফিসারের এমন হঠকারিতা আমরা সহ্য করবো না। প্রয়োজনে জনসংযোগ দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করে দেয়া হবে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ^বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, জনসংযোগ দপ্তরের জুনিয়র সেকশন অফিসার আ.ফ.ম মাহমুদুর রহমান ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুরকৌশল বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আলীমের নামের পূর্বে তার পদবি উল্লেখ করেনি। এতেই সে থেমে থাকেনি বিশ^বিদ্যালয় সিনিয়র একজন প্রফেসরের নাম কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নামের পরে দিয়ে তাকে তথা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজকে অপমান করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সঙ্গে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক এভাবে হেয় করায় আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। অপমানের বিষয়ে ভুক্তভোগী পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, ‘আমি বিষয়টি শোনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এ সম্পর্কে জানিয়েছি। আসলে এটি নিয়ে আমার অভিযোগের তেমন কিছু নেই। কারণ, সম্মান পাওয়া কিংবা না পাওয়ার বিষয়টি সৃষ্টিকর্তার ওপর নির্ভর করে। তিনি যদি কাউকে কারও সম্মান রাখতে চান তাহলে রাখেন আবার যদি ছিনিয়ে নিতে চান তাও তিনি করতে পারেন।’ এসব বিষয়ে জানার জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম সেখ এর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অপরদিকে বিশ^বিদ্যালয়টির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে আরও জানান, সেকশন অফিসার পদে ৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে মর্মে ২০১৯ সালের ২২ মে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই পদের আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত ছিল এমন যে, ‘প্রার্থীর কোনো অনুমোদিত বিশ^বিদ্যালয়/প্রতিষ্ঠান হইতে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রীসহ প্রশাসনিক কাজে জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৫ (পাঁচ) বৎসরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু জনসংযোগ দপ্তরের জুনিয়র সেকশন অফিসার মাহমুদুর রহমান ২০১৭ সালে ২৪ জুলাই রুয়েটে জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে যোগদান করেন। ২০১৯ সালের ২২ মে সেকশন অফিসার পদের জন্য বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ হয়। অথচ ওই সময়ে তার জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে যোগদানের চাকরিও স্থায়ীকরণ হয়নি (নিয়ম অনুযায়ী চাকরির স্থায়ীকরণ হতে যোগদানের পর ২ বছর সময় লাগে)। অথচ চাকরি স্থায়ীকরণ না হওয়া এবং সেকশন অফিসার পদে আবেদনের জন্য ন্যূনতম জুনিয়র সেকশন অফিসার পদে ৫ বছরের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ থাকলেও তিনি সেকশন অফিসার পদের জন্য আবেদন করেন। শুধু তাই নয়, যোগ্যতা না থাকার পরও তিনি ভাইভার জন্য কার্ড পান এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। আমরা জানতে পেরেছি- তাকে নাকি সেকশন অফিসার পদে নিয়োগও দেয়া হবে।’ স্বাধীনতা দিবসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও তার সেকশন অফিসার পদের এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে রুয়েটের জনসংযোগ বিভাগের জুনিয়র সেকশন অফিসার আ.ফ.ম. মাহমুদুর রহমানের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য শনিবার অফিস চলকালীন প্রায় দুই ঘণ্টা তার দপ্তরের সামনে অপেক্ষা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আলোকিত প্রতিদিন/ ২৮ মার্চ-২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here