যোগ্যতা না থাকায়ও রুয়েটে নিয়োগ পাচ্ছেন জঙ্গী মদতদাতা আমিনুলের আত্মীয়

0
545

প্রতিনিধি, রাজশাহী:

জঙ্গি মদতদাতা হিসেবে পরিচিত বিএনপি নেতা মৃত ব্যারিস্টার আমিনুল হকের নিকটাত্মীয় হয়েও যোগ্যতা না থাকার পরও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) সহকারী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি মোসা. রাজেফা খাতুন নামে ওই চাকরিপ্রার্থী সহকারী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উৎকোচের মাধ্যমে চাকরিও বাগিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে। রুয়েটের অভিযোগ সূত্র ও নথিপত্র ঘেটে জানা গেছে, রাজেফা ২০০২ সালের ২৪ ডিসেম্বর পিএবিএক্স অপারেট পদে (তৃতীয় শ্রেণির পদ) রুয়েটে চাকরিতে যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে- তিনি বিএনপি সরকারের আমলে বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের সুপারিশে চাকরি পান। বর্তমানে রাজেফা সহকারী রেজিস্ট্রার আপগ্রেডেশন পদে চাকরি করছেন (যা মূলে তৃতীয় শ্রেণির পদ)। অথচ গত ২১ মার্চ সহকারী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। যেই নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদনে ন্যূনতম যোগ্যতার কথা উল্লেখ ছিল এমন যে- সরকারী/আধা সরকারী/ কিংবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে প্রশাসনিক/একাডেমিক/পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ৫ (পাঁচ) বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যা সহকারী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী রাজেফার ছিল না অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে রুয়েট ক্যাম্পাসজুড়ে চাউর রয়েছে- সহকারী রেজিস্ট্রার পদে মাত্র একজন প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। আর সেই পদে রাজেফাকেই নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে বলে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন। এমনকি চাকরিপ্রত্যাশী রাজেফা এই পদে নিজের চাকরি হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে সহকর্মীদের মাঝে মিষ্টিও বিতরণ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুয়েটের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, সহকারী রেজিস্ট্রার পদে উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে রাজেফাকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার মূল ভূমিকায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) ও রুয়েট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিলীপ কুমার ঘোষ। এছাড়া তাকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার পেছনে সহকারী রেজিস্ট্রার (রেজিস্ট্রার দপ্তর) ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মো. রোকনুজ্জামান, আরিফ আহমেদ চৌধুরী, মো. সদর উদ্দীন এমনকি রুয়েটের রেজিস্ট্রার ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনেরও হাত রয়েছে বলে অভিযোগ একাধিক কর্মকর্তার।

তারা আরও অভিযোগ করেন, রাজেফা খাতুন একজন বিএনপির কর্মী। এইচএসপি পাসের যোগ্যতা বলে পিএবিএক্স অপারেট পদে ওই সময় নিয়োগ পান তিনি। তারা বলেন, তিনি যে বিএনপির কর্মী তার প্রমাণ মেলে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় ফাঁসির রায়ের খবর শুনে অফিসে থাকা অবস্থায়ই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন রাজেফা। অথচ যোগ্যতা না থাকার পরও তাকে এই পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এমনটা হলে অভিযোগকারী কর্মকর্তা আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও প্রতিবেদককে জানান। এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরিপ্রত্যাশী মোসা. রাজেফা খাতুন বলেন, ‘আমি মাস্টার্স পাস করেছি। সুতরাং আমার ওই পদে চাকরিতে যোগদানের যোগ্যতা রয়েছে। যোগ্যতা না থাকলে আমি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম কীভাবে? ব্যারিস্টার আমিনুল হকের আত্মীয় প্রশ্নে তিনি বলেন, তিনি আমার কোনো আত্মীয় নন। আপনারা সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ-খবর নিতে পারেন।’ উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে চাকরি পাইয়ের দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাওয়া হলে বিশ^বিদ্যালয়টির ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) ও রুয়েট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিলীপ কুমার ঘোষ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তার সবকিছুই মিথ্যা। এসময় প্রতিবেদককে অভিযোগের সত্যতা নিয়ে সরাসরি দেখা করতে বলেন।’  এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নিয়োগবোর্ডের বহিঃসদস্য ও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আফজাল হোসেন হোসেন বলেন, ‘কে কার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে সেই বিষয়টি তো আমার জানার কথা নয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে রুয়েটের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি রুয়েট উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলামকে সেখকে কল করা হলে তার ব্যবহৃত সিম নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

আলোকিত প্রতিদিন/ ৩০ মার্চ-২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here