সালথায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুর

0
479
 প্রতিনিধি, ফরিদপুর:
ফরিদপুর জেলার সালথায় এসিল্যান্ড ও থানা চত্বরে অগ্নিসংযোগের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার কার্যালয়েও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে , সে সময় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালও ভাংচুর করা হয়েছে। হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে রাত গভীরেও থেমে থেমে চলছে গুলিবর্ষণ। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছেন।
এখনো হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে গুলি চলছে। উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়ন রয়েছে। হামলায় পুলিশ ও র‌্যাবও আক্রান্ত হয়েছে। তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। সরেজমিন থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, রাত ৮টার পর হতে এখন পর্যন্ত উপজেলা সদরের পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। হামলায় প্রথম পর্যায়ে সালথা নবনির্মিত সালথা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়, থানা চত্বর ও ফটকের চারপাশে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়। জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ ওই ভবনে অবস্থিত কয়েকটি সরকারি কার্যালয়ে হামলা হয়। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়, ত্রাণ কর্মকর্তার কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুটি সরকারি প্রাডো গাড়িসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়। এসময় সংবাদ সংগ্রহ করতে যেয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওই কার্যালয়ে আটকা পড়েন। পুরো এলাকায় এখনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) সুমিনুর এই প্রতিবেদককে জানান, স্থানীয় পুলিশের সাথে ফরিদপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে পুলিশের অতিরিক্ত দল ঘটনাস্থলে এসেছে। আমরা এখনো (রাত পৌনে ১২টার দিকে) পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। তিনি বলেন, পুলিশের সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এসে র‌্যাবও আক্রান্ত হয়েছে। তবে এখনই কতজন আহত হয়েছেন তা বলতে পারছি না। পরিস্থিতি চলমান রয়েছে। ঘটনার সময় থানায় নারী ও শিশুসহ সাধারণ মানুষ আটকা পরার বিষয়ে তিনি বলেন, আটকা পরা মানুষেরাও আতঙ্কজনক পরিস্থিতির মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, উপজেলা অফিস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানায় হামলা চালানো হয়েছে। এসব স্থানে অগ্নিসংযোগ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুর করা হয়েছে। ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী পৌঁছানোর পর এখন (রাত ১১টা ১৫ মিনিট) পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
আহতদের সংখ্যা সম্বন্ধে তিনি বলেন, অনেকেই আহত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আহতদের সঠিক তথ্য পাইনি। আমরা সহনশীলতার চূড়ান্ত  রূপ প্রদর্শন করেছি। আশা করছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো। এই মুহূর্তে এরচেয়ে বেশি আর কিছু বলা যাচ্ছে না। উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর গাড়ি থেকে নেমে একজন সরকারি কর্মচারী একজন গ্রামবাসীকে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তিনি আহত হন। এর জের ধরে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করতে গিয়ে সেখানে এসআই মিজান নামে একজন পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন আহত হন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ড মারুফা সুলতানা হীরামনি বলেন, লকডাউন কার্যকর হচ্ছে কিনা সেটি দেখার জন্য ফুকরা বাজারে যাই। এরপর তারা আমার গাড়ি ধাওয়া করলে আমি বিষয়টি থানা পুলিশকে বিষয়টি জানাই। এরপর তারা থানা ঘেরাও করে তাণ্ডব চালায়। তবে তিনি তার কোনো সহকর্মী কাউকে আঘাত করেনি বলে জানান। তিনি বলেন, স্থানীয় একজন হুজুরকে মেরে ফেলা হয়েছে এই গুজব ছড়িয়ে গ্রামবাসীকে একত্রিত করে এই হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, এটি পুলিশের সাথে হামলাকারীদের সংঘর্ষ। এখানে সরকারি কোনো কর্মকর্তা জড়িত নন। ফুকরা বাজারে জাকির হোসেন মোল্যা (৪০) নামে একজন গ্রামবাসীকে এসিল্যান্ডের গাড়ি থেকে নেমে একজন কর্মচারী লাঠি দিয়ে পিটিয়ে কোমড় ভেঙ্গে দেয়ার খবরে রাত সাড়ে সাতটার দিকে একদল উত্তেজিত গ্রামবাসী প্রথমে থানা ঘেরাও করে। পরে এসব হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ মুহুর্মুহু গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় আহতদের সঠিক সংখ্যা রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
আলোকিত প্রতিদিন/ ৬ এপ্রিল, ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here