উন্নত চিকিৎসার নামে রোগীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়, গ্রেপ্তার ১৬

0
313
প্রতিনিধি, রাজশাহী: 
করোনাকালীন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ’ এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভালো চিকিৎসার দেয়ার প্রলোভন পরবর্তীতে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে রোগীদের জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের ১৬ সদস্যকে গেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০৮ এপ্রিল) বেলা ১১ থেকে দুপুর পর্যন্ত রামেক হাসপাতালের বহিঃবিভাগসহ নগরীর লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- নগরীর হেতেমখাঁ লিচু বাগান এলাকার মৃত আনছার আলীর ছেলে প্রতারণা চত্রের মূলহোতা মো. ফজলুর রহমান পলাশ (৪৮), সাগরপাড়া এলাকার খোকন শেখের ছেলে সজীব শেখ (২৫), সাধুর মোড় এলাকার মনসুর রহমানের ছেলে মো. মুন্না (৩২), আবুল হোসেনের ছেলে মো. বাদল হোসেন (৩৮), চণ্ডিপুর এলাকার আজিম উদ্দিনের ছেলে মো. লালন মিয়া (৩৮), বহরমপুর এলাকার মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম (৫০), মৃত এলাহী বক্সের ছেলে মো. আনারুল ইসলাম (৫০), দাসপুকুর এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মো. মাসুদ রানা (৩০), ভাটাপাড়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. জাহিদ হাসান রাকিব (২৫), লক্ষ্মীপুর ঝাউতলা এলাকার মৃত ছগির উদ্দিনের ছেলে মো. আনিছুর রহমান আনিছ (৫৫) , লক্ষ্মীপুর কাঁচা বাজার এলাকার সেলিম রেজার ছেলে মো. মনোয়ার হোসেন (২৮), আব্দুল হামিদের ছেলে মো. নাসির বিন আল-নাদিম (২২), মৃত লক্ষণ দাসের ছেলে শ্রী প্রসাদ দাস (২৪), কাজিহাটা এলাকার আব্দস সুবরের ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন মাসুদ (৩২), কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার মৃত সজর আলীর ছেলে মো. আরব আলী (৬৫) এবং জেলার পুঠিয়া উপজেলার রঘুরামপুর গ্রামের মৃত সইজুদ্দিনের ছেলে মো. আবু সাঈদ (৫৯)।

মহানগর ডিবি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে চিকিৎসা নিতে রামেক হাসপাতালের বহিঃবিভাগে গিয়েছিলেন রাজশাহী মহানগরীর সিরাজুল ইসলাম (২৮) নামের এক ব্যক্তি। রামেক হাসপাতালে করোনার সময়ে ভালো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না বলে কৌশলে গ্রেপ্তারকৃত এই প্রতারক চক্র তাকে লক্ষ্মীপুর এলাকার এশিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানে ভালো ডাক্তার দেখানোর নাম করে তার নিকট থেকে প্রথমে ৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় এই প্রতারক চক্র। পরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলে ভুক্তভোগীর নিকট ওই প্রতারক চক্র আরও ২ হাজার টাকা দাবি করলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে প্রতারক চক্রের সদস্যরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে আটকে রেখে মারধর এমনকি প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। ভুক্তভোগী সিরাজুল পরে কৌশলে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নগরীর লক্ষ্মীপুরে অবস্থিত মহানগর ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ করলে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতারক চক্রের মূলহোতা বজলুর রহমান পলাশসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকীদেরকেও আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর ভুক্তভোগী সিরাজুল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতারক চক্রের ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অর্থ আত্মসাৎ, চাঁদা দাবি, চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪১৯, ৪০৬, ৩৮৫, ৩৮৬ ও ৫০৬ (২/৩৪) ধারায় নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। তবে পলাতক থাকায় নগরীর বহরমপুর এলাকার আসামি মো. রুবেলকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

ভুক্তভোগী সিরাজুল বলেন, ‘আমি সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রামেক হাসপাতালে এসে বহিঃবিভাগে টিকেট কাটি। এমন সময় ৩ জন লোক এসে আমাকে বলেন যে, করোনার সময় রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। তারা আমাকে একটি ক্লিনিকে ভালো ডাক্তারের নিকট উন্নত চিকিৎসা দেয়ার কথা বলে কৌশলে সেখান থেকে এশিয়ান ডায়াগনস্টিকে নিয়ে আসে। সরল বিশ্বাসে আমি সেখানে এসে বুঝতে পারি, আমি প্রতারণার স্বীকার হয়েছি। এভাবেই এই প্রতারক চক্র অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে সহজ-সরল মানুষকে দিনের পর দিন স্বর্বশান্ত করে আসছিলো।’

মহানগর ডিবি পুলিশের উপ-কমিশার আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘ভুক্তভোগীর মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল ও এর আশেপাশে অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে আটক করা হয়। পরে ভুক্তভোগী নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করে। আটককৃতদের ডিবি হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা করা হয়। পরে ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ৯ এপ্রিল, ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here