১০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি জনস্বাস্থ্যের পৌনে ২ কোটি টাকার প্রকল্প   

0
312
প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটি:
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত পৌরসভা সদরে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পটি ১০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। ফলে ২২.৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে বসবাস করা ৬৮ হাজার মানুষ চরম নিরাপদ পানির সংকটে পড়েছে। দীর্ঘ ১০ বছরেও কাজ শেষ না হওয়ায় এরই মধ্যে অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি ইলেকট্রিক ট্রাসফরমার, লোহার পাইপ নষ্ট হয়ে গেছে। আশপাশে ঘন জঙ্গলে আচ্ছাদিত হয়ে এক ভুতুরে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পৌরসভার জনসাধারনের বিশুদ্ধ পানির চাহিদার কথা মাথায় রেখে ২০১১ সালে সরকারী এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান রাঙ্গামাটি আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার (এমপি) এই প্রকল্পটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ওই বছরেই টেন্ডারের মাধ্যমে রাঙ্গামাটির স্থানীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউ এম ট্রেডার্স কাজটি শুরু করে। উপজেলা সদর ও মুসলিম ব্লক এলাকায় দুইটি পাকা ভবন, দুইটি গভীর নলকূপ এবং পৌর এলাকায় মাটির নিচে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করে।
বিদ্যুৎ সংযোগ সহ কিছু কাজ বাকী থাকতেই থমকে যায় প্রকল্পের কাজ। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের প্রতিনিধি সঞ্জয় ধর অভিযোগ করেন, কাজ চলাকালীন রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধ্বস সংঘটিত হয়। এতে করে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। ফলে মালামাল পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে নির্ধারিত সময় শেষ হলেও কাজ শেষ হয়নি। যার ফলে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বেকে বসেন এবং ঠিকাদারের প্রতিনিধি সঞ্জয় ধরের নিকট ২ লক্ষ টাকা কমিশন দাবী করেন। ঠিকাদার ৫০ হাজার টাকা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করে বাকি টাকা দিতে অপারগ হলে প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক উক্ত কাজের ফান্ডটি বাজেয়াপ্ত করে টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেন মন্ত্রনালয়ে। জেলা পরিষদ ও মন্ত্রনালয়ে বার বার তদবির করেও মন গলাতে ব্যর্থ হয়ে এখন বিশাল ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বিভিন্ন জনের দারে দারে ঘুরছেন। কিন্তু কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছেননা বলে দাবী করেন সঞ্জয় ধর। ফলে ১০ বছর আগে সরকারী ভাবে বরাদ্দ ১ কোটি  ৮০ লক্ষ টাকা জনগনের কোন কাজেই আসছে না।
 এদিকে, বিশুদ্ধ পানির সংকট দিন দিন তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে। তাই বাঘাইছড়িবাসী তথা সচেতন মহলের একটাই দাবী অতিদ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে নিরাপদ পানির ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়। বিষয়টি নিয়ে বাঘাইছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক দাবী করেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা দাবী এবং ৫০ হাজার টাকা গ্রহণের বিষয় সঠিক নয়। কাজটি ঠিকাদারের অবহেলায় নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় তিনি সরকারী অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত পাঠান বলে দাবী করেন। এছাড়াও ঠিকাদার নিজে সুবিধে নিতেই এই অযৌক্তিক কথা বলছে। ৫০ হাজার টাকা নিয়ে থাকলে ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট দেখাতে বলেন আব্দুর রাজ্জাক।
 তিনি দাবী করেন, দীর্ঘ ৫ বছরেও ৩ জন ঠিকাদার পরিবর্তন করে কাজ শেষ করতে না পারায় আমি সরকারী কোষাগারে ৩৩ লক্ষ টাকা ফেরত পাঠিয়েছি। এখানে আমার কোন অবহেলা নেই, থাকলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের রয়েছে। প্রকল্পটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন এমন প্রশ্নে প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি আমি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কে অবহিত করেছি। এখন প্রকল্প আবার চালু করা ওনার এখতিয়ার।
আলোকিত প্রতিদিন/  ৯ এপ্রিল, ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here