প্রতিনিধি, বান্দরবান:
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মাতামুহুরী নদীর অববাহিকা ঘিরে গড়ে উঠা মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্টে ২০১৪ সালে গেজেট প্রকাশ করে সরকার ‘কুরুকপাতা ইউনিয়ন পরিষদ’ সৃষ্টি করে। খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়ে গঠিত এ ইউনিয়নটির জনগণ অর্ধযুগ পরও ভূমির নিশ্চয়তা পায়নি। ডিফরেস্ট ঘোষণা ছাড়াই গঠিত হয় এ ইউনিয়ন পরিষদ! ফলে পরিষদের উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে বন বিভাগের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন চেয়ারম্যান-মেম্বারগণ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৮৭৮ সালের ভারতীয় বন আইনে ব্রিটিশ সরকারের ‘দ্যা গভর্মেন্ট অব বেঙ্গল’ ১৮৮০ সালের ১৭ নভেম্বর মাতামুহুরী নদীর অববাহিকা ঘিরে ১ লক্ষ প্রায় ৩ হাজার পাহাড়ি ভূমিকে ‘মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্ট’ ঘোষণা করে। অপরদিকে, বর্তমান সরকার ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই একই এলাকায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৮৮৫ একর পাহাড়ি ভূমিকে ‘কুরুকপাতা ইউনিয়ন’ ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। যার আয়তন মাতামুহুরী রিজার্ভ থেকেও বড়! গেজেটে দেওয়া তথ্যমতে জানা যায়, এ ইউনিয়নের দক্ষিণ এবং পশ্চিম অংশে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। প্রশাসনিক তদন্তের সময় ইউনিয়নটির আয়তন দেখানো হয় ৭০২.০৫ বর্গ কিলোমিটার। এতে জমির পরিমাণ ধরা হয় ৭৫ হাজার ৬৩০ হেক্টর। বর্তমানে এ ইউনিয়নের জনসংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। একদিকে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ১৮৮০ সালের ১৭ নভেম্বরের গেজেটে ‘মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্ট’ ঘোষণা অপরদিকে একই এলাকাকে ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ‘ইউনিয়ন পরিষদ’ ঘোষণার গ্যাড়াকলে পড়েছে মুরুং জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত কুরুকপাতা ইউনিয়ন পরিষদ। গেজেট বিজ্ঞপ্তির সময় এ ইউনিয়নের জনসংখ্যা ছিলো ১৩ হাজার ৫৭০ জন। ১৪২টি পাড়া নিয়ে দুর্গম পাহাড়ে ১ হাজার ৯৫৩ টি পরিবারের বসবাস সেখানে।
কুরুকপাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই দুর্গম পাহাড়ি জনপদ কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী এলাকার জনগণ সরকারি পরিসেবা থেকে প্রায় বঞ্চিত থাকতো। বর্তমান সরকার পরিসেবার সুষম বন্টন নিশ্চিত করতে এ কুরুকপাতা ইউনিয়ন গঠন করে। এতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়ই ছিলো মূখ্য। তিনি জানান, এ ইউনিয়নের পুরো জায়গা মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্টের আওতাভূক্ত। ইউনিয়ন সৃষ্টির সময় ‘ডিফরেস্ট’ ঘোষণা করেনি সরকার। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লামা বন বিভাগ আমার ইউনিয়নের সরকারি প্রকল্পের কাজে বাধা দিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি প্রকল্পের কাজে বন বিভাগ বাধা কাম্য নয়। এরমধ্যে ২০১৯-’২০ অর্থবছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি ব্রিজের দুই সাইডে বন বিভাগের বাধার কারণে মাটি দেওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে, গতবছর লোকাল গভর্মেন্ট সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি-৩) একটি প্রকল্পের কাজ চলমান অবস্থায় বন বিভাগ কর্তৃক ভেঙ্গে দেওয়া হয়। এতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতিসাধন হয়। কুরুকপাতা ইউনিয়নের প্রকল্পের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে স্বীকার করে মাতামুহুরী রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, রিজার্ভ ভূমিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া স্থাপনা কিংবা কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দিবেন বন বিভাগ।
বন বিভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে এভাবে টানাপোড়েনের ফলে কুরুকপাতা ইউনিয়নের সামগ্রীক উন্নয়নে কাজ বিঘ্নিত হবে বলে মনে করেন ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো। এ বিষয়ে রবিবার সকালে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম কায়চারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি জানান, রিজার্ভ ফরেস্টে সকল প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর পূর্বানুমোদন ছাড়া কোন প্রকল্পের কাজ করা যাবে না। ‘ডিফরেস্ট ঘোষণা ছাড়া কিভাবে মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্টকে ইউনিয়ন করা হলো’ তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন ডিএফও। তিনি বলেন, রিজার্ভ ভূমিতে ২০১৪ সালে ইউনিয়ন গঠনের সময়ে বন বিভাগ থেকে লিখিত আপত্তি জানানো হয়েছিল।
এখনো বন বিভাগ রিজার্ভ ভূমিতে যেকোন ধরণের স্থায়ী স্থাপনা সৃষ্টির বিপক্ষে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ইউএনও এবং জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১১ এপ্রিল, ২০২১/ দ ম দ
