প্রতিনিধি, পঞ্চগড় :
মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সারাদেশে ডাকা দ্বিতীয়বারের মতো সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের প্রথম দিনে পহেলা বৈশাখ হওয়ায় পঞ্চগড়ের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অভিমুখে এবারো বসবে না দুই বাংলার মিলনমেলা। এতে করে প্রতি বছরের মতো পহেলা বৈশাখে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চগড়ের সীমান্ত অভিমুখে মানুষের ছুটে যাওয়ার সেই চিরচেনা দৃশ্য চোখে পড়বে না। করোনা রোধে সরকারি ১৩ দফা নির্দেশনার পাশপাশি সীমান্তে অবৈধ প্রবেশ নিষিদ্ধসহ সব আইন মেনে এ ঘোষণা দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) বিষয়টি নিশ্চিত করেন পঞ্চগড়-১৮ বিজিবির লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার আনিছুর রহমান ও নীলফামারীর অধীনস্থ ৫৬ বিজিবির লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-মামুন।
পঞ্চগড়-১৮ ও নীলফামারী-৫৬ বিজিবির লেফটেন্যান্ট কর্নেলরা জানান, করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রথম দফায় মানুষের চলাচল ও কার্যক্রমে বিধি-নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এই লকডাউন মেনে মানুষের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে এবারো বসানো হবে না পঞ্চগড়ের দুই বাংলার মিলনমেলা। সাধারণত পহেলা বৈশাখে ও দুই বৈশাখে এই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ পঞ্চগড়ের অমরখানা, শুকানি, মাগুরমারি ও ভূতিপুকুর সীমান্তসহ বেশ কয়েকটি কাঁটাতারে বাইরে দুই বাংলার এই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দু’দেশের হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়ে একে অন্যের সঙ্গে কথা ও ভাব বিনিময় করেন। কারণ বছরের মাত্র এই একটি সময় আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা হয়। কাঁটাতারের দুই পাড় থেকে কথা বলেন। উপহার বিনিময় করেন। চোখের জলে বিদায় দেন। কয়েক ঘণ্টার জন্য সেখানে যেন মানুষের মেলা বসে যায়। অনেকে পদ্মার ইলিশ কিনতে আসেন। কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে টাকা ছুঁড়ে দিলে ইলিশ মেলে। তবে এবারো সেই অন্যরকম আনন্দ চোখে পড়বে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির আগ পর্যন্ত এই জেলা ভারতের জলপাইগুড়ি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু, দেশ ভাগের কারণে এখানে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজন দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও দু’দেশের নাগরিকরা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাতায়াতের সীমিত সুযোগ পেতেন। কিন্তু, সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার পর থেকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন তারা। উভয় দেশের নাগরিকদের অনুরোধে প্রায় এক যুগের বেশ কিছু সময় ধরে বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সম্মতিতে নববর্ষের দিন তারা কাঁটাতারের দুই ধারে এসে দেখা করার সুযোগ পান। অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে না পারা দু’দেশের মানুষ এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে কুশলাদি বিনিময়ের জন্য। শুধু পঞ্চগড় নয়, আশপাশের কয়েকটি জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ স্বজনদের জন্য নিয়ে আসেন নানা রকমের উপহার।
আলোকিত প্রতিদিন/ ১৪ এপ্রিল, ২০২১/ দ ম দ