প্রতিনিধি, রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ):
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ২নং সোনাখাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপন এর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর দেওয়ার কথা বলে গরিব অসহায় দুস্থদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। টাকা দিয়েও ঘর না পেয়ে বাধ্য হয়ে এর মধ্যে ৮জন ভুক্তভোগী সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। যার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক এর কার্যালয় থেকে বিষয়টি শুনানির জন্য রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে একটি স্মারক প্রেরণ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও ৮জন অভিযোগকারীকে আগামী ২০এপ্রিল উপস্থিত হবার জন্য একটি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক সিরাজগঞ্জ এর কার্যালয় থেকে গত ১৬-০৩-২০২১ তারিখে একটি স্মারকের মাধ্যমে (স্মারক নং ২৬২) রায়গঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি শুনানির মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশনা প্রেরণ করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১২-০৪-২০২১ তারিখে রায়গঞ্জ ইউএনও অফিস একটি শুনানি (তদন্ত) নোটিশ (যার নংঃ ৩৩২ /৯) অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ও ৮জন অভিযোগকারীকে পাঠানো হয়। সেখানে সবাইকে আগামী ২০ এপ্রিল সকাল ১১টায় ইউএনও কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। বিষয়টি আমার সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন ইউএনও রাজিবুল আলম। সরজমিনে অভিযোগকারীদের মধ্যে কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোনাখাড়া ইউপির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ইউনিয়নের দুস্থ গরীব অসহায় ভূমিহীনদের কাছ থেকে জন প্রতি দশ থেকে বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন। এর মধ্যে কিছু লোক দীর্ঘদিন ঘোরাঘুরি করে ঘর পেলেও অনেকের ভাগ্যেই মেলেনি এই নতুন ঘর। সোনাখাড়া ইউনিয়নের গোতিথা গ্রামের বাসিন্দা মৃত মধু মন্ডলের ছেলে মো. আ. মজিদ বলেন, সরকার গরীব মানুষদের ঘর দিচ্ছে শোনার পরে আমি চেয়ারম্যান রিপনের নিকট একটি ঘর চাইলে সে টাকা ছাড়া ঘর পাওয়া যাবে না জানিয়ে দিয়ে ২০হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।
পরবর্তীতে আমি ঘরের আশায় সুদের উপরে ঋণ করে তাকে ১৭হাজার টাকা দেই। ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও পাইনি ঘর বরং ঘর বা টাকা ফেরত চাইলেই পেয়েছি মানসিক নির্যাতন। সেই ঋণকৃত টাকার সুদই দিয়েছি আজ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। একই গ্রামের উপজাতি গোষ্ঠীর নিশি কান্ত মালীর স্ত্রী শ্রীমতী মালীও আ. মজিদের মতো একই রকমের প্রতারণার শিকার জানিয়ে আমার সংবাদকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী গরীবদের ঘর দিচ্ছে শোনার পরে চেয়ারম্যান রিপনের নিকট একটি ঘর চাইলে সে ২০হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরবর্তীতে আমি ঘরের আশায় ঋণ করে তাকে ২০হাজার টাকা দেই। কিন্তু ৩বছরেও ঘর বা টাকা কোনটাই পাইনি। কিন্তু সেই আসল টাকা বাদ দিয়ে ঋণের সুদ দিয়েছি আজ পর্যন্ত ৪০হাজার টাকার বেশি। এ বিষয়ে ২নং সোনাখাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপন বলেন, এগুলো সব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। নির্বাচনকে সামনে রেখে ও আমাকে সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত করতে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে নানা রকমের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। যেহেতু আগামী ২০ এপ্রিল ইউএনও মহোদয় তদন্তের জন্য আমাকে সহ সবাইকে নোটিশের মাধ্যমে ডেকেছেন তাই সেদিনই দেখা যাবে।
এ বিষয়ে রায়গঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাজিবুল আলম আমার সংবাদকে বলেন, জেলা প্রশাসক, সিরাজগঞ্জ মহোদয়ের কার্যালয় থেকে একটি স্মারকের মাধ্যমে আমাকে ২নং সোনাখাড়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগটি তদন্তের জন্য বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ২০ এপ্রিল অভিযোগকারী ৮জন ও চেয়ারম্যানকে রায়গঞ্জ ইউএনও কার্যালয়ে উপস্থিত হতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন / ১৭ এপ্রিল, ২০২১ / দ ম দ