প্রতিনিধি, চকরিয়া (কক্সবাজার):
মাঠ পর্যায়ে প্রতি মণ উৎপাদিত লবণের দাম মাত্র ১৪০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি লবণের দাম মাত্র ৩ টাকা ৫০ পয়সা। অথচ প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে চাষিদের খরচ হয় ৬ টাকা। ১৭ এপ্রিল শনিবার এমন দৃশ্য দেখা যায় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। দেশের প্রধান লবণ উৎপাদন কেন্দ্র কক্সবাজার জেলায় আকস্মিক লবণের দাম এ যাবৎকালের সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। কিছুদিন আগেও লবণের দাম ছিল মণ প্রতি ১৬০ টাকা। চকরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে অপরিশোধিত লবণের ব্যাপক উৎপাদন হচ্ছে। তবে লবণের দাম অনেকাংশে কমে যাওয়ায় হতাশ চাষিরা। বর্তমান বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে প্রান্তিক চাষিদের অভিযোগ।
জানা যায়, দুই বছর আগে লবণ চাষিরা ৪শত থেকে সাড়ে ৪শ টাকা পর্যন্ত লবণের দাম পেয়েছিল। লাভবান হয়েছিল জমির মালিক, প্রান্তিক চাষী, খুচরা ও পাইকারী লবণ ব্যবসায়ীরা। এদিকে চলতি বছরের লবণ মৌসুম শুরুতেই লবণের দাম ১৬০ টাকা পর্যন্ত ছিল। বর্তমানে লবণের দাম মণ প্রতি ১৪০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা। প্রান্তিক চাষিরা প্রতিকানি মাঠ বর্গা নিয়েছেন সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তার পাশাপাশি রয়েছে শ্রমিক,পলিথিন ক্রয়সহ আনুসাঙ্গিক খরচ। প্রতি কানিতে লবণ উত্তোলণ হয় ছয় মাসে প্রায় ১৫০ মণ পর্যন্ত। যার কারণে বর্তমান প্রতিমণে ১০০ টাকা পর্যন্ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন চাষিরা। এ প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, বর্তমান মৌসুমে লবণের দাম অস্বাভাবিক ভাবে পড়ে যাওয়ায় হতাশ চাষিরা। লবণ চাষিরা উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে নানাভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত কওে যাচ্ছেন। আমি লবণ পরিস্থিতির বিস্তারিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। সেই সাথে ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির ব্যাপারে আশ্বস্থ করে চাষিদের যথারীতি উৎপাদনে মনোযোগী হতে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
বদরখালীর লবণ ব্যবসায়ী বাবুল সিকদার জানান, অনেক বছর ধরে তিনি লবণ চাষের সাথে জড়িত। লবণের উৎপাদন এখনো আশানূরূপ হচ্ছে না। বর্তমানে তার জমিতে প্রতি কানিতে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে ৫০ মণ। অথচ গত বছর আগে উৎপাদন হয়েছিল একশত মন। তিনি জানান, ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানায় তিনি প্রতিমাসে লবণ সরবরাহ করেন। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী তিনি লবণ জোগান দিয়ে যাচ্ছেন। তবে তিনি অনেক টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলেও জানান। চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, লবণ চাষীরা এমনিতেই বর্গা নিয়ে লবণ চাষ করে। তার মাঝে দাম কমে যাওয়ায় চাষীরা হতাশ হচ্ছেন। বর্তমান দাম কমে যাওয়ায় চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তারা আরো জানান, কিছু কতিপয় ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে লবণ আমদানী করে এনে দেশীয় লবনের দাম কমিয়ে ফেলছে। বিগত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে লবনের দাম কমে যাওয়ায় বর্তমানে হতাশায় ভোগছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। বর্তমান মৌসুমে লবনের দাম কমেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে চাষী ও ব্যবসায়ীদের আশা হবে গুড়েবালি। চকরিয়া উপজেলার লবণ চাষি জালাল উদ্দিন জানান, আমরা বেশ কয়েকজন চাষি মিলে যৌথভাবে ১০০ কানি (৪০ একর) জমিতে লবণ চাষ করছি। একর প্রতি খরচের হিসাব হচ্ছে, একজন মজুর ৬ মাসের জন্য ৬০ হাজার টাকা, জমির বর্গা বাবদ ৭৫ হাজার টাকা, পলিথিন ও পানির খরচ ৩০ হাজার টাকাসহ মোট খরচ হয় এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অথচ একর প্রতি উৎপাদিত ৬৭৫ মণ লবণ বিক্রি (প্রতি মণে ১৪০ টাকা) করে পাওয়া যাবে ৯৪ হাজার ৫শ টাকা।
চাষিরা এভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে চাষ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। কক্সবাজার তথা চকরিয়ার লবণ চাষিরা ন্যায্য মূল্য বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন পন্থায় অবৈধভাবে লবণ আমদানি করায় সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। লবণের মাঠ পর্যায়ে চাষিরা তাদের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে এখন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। এছাড়াও সোডিয়াম সালফেটের নামে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি বন্ধ করা না গেলে দেশীয় শিল্পটির উপর মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে। এদিকে, চকরয়িার লবণ চাষিরা তাদের স্বার্থ সংরক্ষণসহ লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আলোকিত প্রতিদিন / ১৮ এপ্রিল, ২০২১ / দ ম দ