চকরিয়ায় বেশিরভাগ নলকূপে উঠছে না পানি, দুর্ভোগ চরমে

0
319

প্রতিনিধি, চকরিয়া (কক্সবাজার):

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেশিরভাগ নলকূপে উঠছে না পানি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। কী কারণে নলকূপে পানি উঠছে না, তা স্থানীয়রা এখনো বলতে পারছে না। তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর জানিয়েছে, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায়, চকরিয়ার বেশিরভাগ নলকূপ দিয়ে পানি ওঠানো যাচ্ছে না।

এছাড়াও পরিবেশগত নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। ১৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চকরিয়া উপজেলা। অত্র উপজেলার কৃষিজ অঞ্চল বলে খ্যাত বদরখালী, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী সহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে বেশিরভাগ নলকূপে পানি উঠছে না। এছাড়া বিভিন্নজনের বাড়িতে বসানো গভীর নলকুপ থেকেও উঠছে না কাঙ্খিত পানি। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগ পর্যন্ত এমন অবস্থা থেকে স্থানীয়রা মুক্তি পাবে কিনা সন্দেহ। জমিতে ঠিকমত সেচ দিতে পারছেন না চাষীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের বেশিরভাগ গভীর নলকূপের পানি না ওঠায় মরিচা ধরেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় দূর দুরান্ত থেকে আনতে হচ্ছে খাবার পানিসহ দৈননন্দিন ব্যবহারের পানি। এই ইউনিয়নের কুতুবদিয়া পাড়া, শহরিয়া পাড়া, ছনুয়া পাড়া, নতুন ঘোনা, নিদান তরানী, লম্বাখালী পাড়া, ফুলতলাসহ আশপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে এই অবস্থা।

কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা সাংবাদিক এম, রিদুয়ানুল হক তার বাড়ির গভীর নলকূপ দেখিয়ে বলেন, বিগত ২ মাস ধরে এই নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। নিত্যদিনে দৈনন্দিন জনজীবনে পানির অভাবে দিনযাপন করছেন তার পরিবার। ছনুয়া পাড়ার বাসিন্দা কৃষিকর্মকর্তা নুরুল আলম জানান, প্রায় ২ মাস ধরে আমাদের নলকূপ থেকে কাঙ্খিত পানি উঠছে না। একটি কলসি পূর্ণ করতে প্রায় ১ ঘণ্টার অধিক সময় ব্যয় হয়। তিনি জানান, আশে-পাশের নলকূপেরও একই অবস্থা। বদরখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল বশর জানান, যত্রতত্র বেআইনীভাবে গভীর নলকূপ ও সেচপাম্প বসিয়ে বিদ্যুতের মোটরের মাধ্যমে পানি ঊঠানো হচ্ছে। তাই আশপাশের নলকূপে পানি ঊঠছে না। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির একাধিক স্তর থাকে। সেচ কাজে ব্যবহার করা বড় ব্যাচের পাইপ দিয়ে যখন পানি উত্তোলন করা হয় তখন হাতে পালিত নলকূপে পানির স্তর পায় না। এজন্য নিয়ম নীতি মেনে ও পরিকল্পিভাবে নলকূপ স্থাপন করা হলে ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্কট হবে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মহি উদ্দিন বলেন, আমি বদরখালীর সন্তান। কোথাও কোথাও গভীর নলকূপেও তোলা যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় পানি। তীব্র দাবদাহে এ অবস্থা আরও প্রকট হওয়ায়, দেখা দিয়েছে পানি সংকট। বিশেষ করে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানি সংকট চরমে পৌঁছেছে। সুপেয় পানির সংকট দেখা দেওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এবিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। কহরিয়া পাড়ার বাসিন্দা মাষ্টার জাইদুল হক বলেন, ‘টিউবওয়েল তো দূরের কথা, এখন বিদ্যুৎচালিত পানির পাম্পেও পানি পাওয়া কষ্টকর। ‘কয়েকদিন আগে থেকে পাম্পের সাহায্যেও পানি উঠানো যাচ্ছে না। পানির স্তর এতটাই নীচে নেমে গেছে যে, গভীর নলকূপ ছাড়া পানি পাওয়া সম্ভব নয়।

যোগাযোগ করা হলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, এবিষয়টি আমার নজরে এসেছে। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করব। তিনি আরও বলেন, চকরিয়া কৃষি সমৃদ্ধ একটি উপজেলা। কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলনের প্রয়োজন পড়ে। ফলে পানির স্তর দিনদিন আশঙ্কাজনকভাবে নীচে নেমে যাচ্ছে। তবে নদী খনন এবং ভূ-উপরস্থ পানির দূষণরোধ ও ব্যবহার বাড়ানো হলে, এ সমস্যার অনেকটা সমাধান হতে পারে। এছাড়া বৃষ্টিপাত হলে এ অবস্থা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।’

আলোকিত প্রতিদিন / ১৮ এপ্রিল, ২০২১ / দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here