অক্টোবর বিপ্লবের সফল মহানায়ক, সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান, বিশ্ব ও সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট, শ্রমিক,কৃষক,মেহনতি মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু,শিক্ষক ও নেতা কমরেড ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন- ১৮৭০ সালের ২২ এপ্রিল- আজ থেকে ১৫১ বছর পূর্বে রাশিয়ার সিমবির্স্ক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রধান কীর্তিত -তিনি মার্কসবাদকে আরও বিকাশিত করে বিশ্বব্যাপি পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শোষণ নিপীড়ন, বিকাশমান পুঁজিবাদী রাশিয়ার বাস্তব অবস্থা বিচার বিশ্লেষণ করে তত্ত্ব বিনির্মাণ করেন। এবং তা সফল ভাবে প্রয়োগ করে-সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি ও শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে কৃষক, সৈনিক, মেহনতি মানুষকে নিয়ে শোষক শ্রেণীকে বিপ্লবের মাধ্যমে পরাজিত করে রাশিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদী দর্শনের স্রষ্টা মহামতি কার্ল মার্কস এবং তার প্রধান সহযোদ্ধা কমরেড এঙ্গেলস শিল্পোন্নত পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্সের তৎকালিন অর্থ-সামাজিক- রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও শ্রমিক আন্দোলনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে, দ্বান্ধিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদী তত্ত্ব প্রণয়ন করেন। কিন্ত সেসব পুজিবাদী দেশগুলোতে সমাজতন্ত্র কায়েম হয়নি- কমিউনিস্টরা রাষ্টক্ষমতা দখল করতে পারেনি। বরং সেসব দেশ থেকে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশ যা পূর্ণ শিল্পায়ন হয়নি, যেসব দেশে উপনিবেশিক, আধা- উপনিবেশিক, আধা- সামন্তবাদী ব্যবস্থ বলবত ছিল,
এমন সব দেশে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ প্রয়োগ করে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করে। কমরেড লেনিন -একটি পশ্চাৎপদ বিকাশমান পুঁজিবাদী রাষ্ট্র –
রাশিয়ার অর্থনীতি,রাজনীতি,সমাজ,সংস্কৃতি এর বাস্তবতায় মার্কসবাদকে অধ্যায়ন ও অনুশীলনের মাধ্যমে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদীদের অপতৎপরতা এবং রাশিয়ার সমাজব্যবস্থার বাস্তব অবস্থার বিচার বিশ্লেষণ করিয়া তত্ত্ব নির্মাণ ও প্রয়োগ করেছিলেন। তখনকার সময়ে রাশিয়াতে পুঁজির পূর্ণ বিকাশ হয়নি। রাশিয়াতে তখনও কৃষি ও কৃষকের দৃঢ় অবস্থান বিরাজ করছিল। মহামতি মার্কস পুঁজিবাদী দেশে-প্রথমে বিপ্লব হবে এমন মত পোষণ করছেন। কিন্তু রাশিয়া এবং অনুন্নত কৃষি প্রধাণ দেশে বিপ্লব হবে, শোষক শ্রেণীকে পরাজিত করে -কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করবে, এ ধারনা ও তত্ত্ব সূত্রাবদ্ধ করেন কমরেড লেনিন। অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় কমিউনিস্ট ও শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষমতা দখল, পূর্ব ইউরোপ,
কৃষিপ্রধাণ চীন,ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া,কিউবা সহ অনুন্নত পুঁজিবাদী ও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বিপ্লবের পথ দেখান কমরেড লেনিন।
তাঁর পথ ধরে কমরেড মাও সেতুং এর নেতৃত্বে চীন, কমরেড হো চি মিন এর নেতৃত্বে ভিয়েতনাম, কমরেড কিম ইল সুং এর নেতৃত্বে উত্তর কোরিয়া,
কমরেড ফিদেল কাস্ত্রো ও চে গুয়েভারার নেতৃত্বে কিউবা সহ বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট ও বিপ্লবীরা ক্ষমতা দখল করে। বিপ্লবী পথচলায় শিল্পোন্নত পুঁজিবাদী দেশ ছাড়াও পশ্চাৎপদ বিকাশমান পুঁজিবাদী দেশ -রাশিয়ার সমাজ পরিবর্তনের উপযোগী তত্ত্ব বিনির্মাণ, মার্কসবাদের পথ ধরে,
মার্কসবাদকে সফল ভাবে বিকাশিত ও প্রয়োগ করে কমিউনিস্ট পার্টি ও শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে কৃষক, সৈনিক, নারী, যুবক, জনতাকে সাথে নিয়ে,
তাদের সক্রিয় ভূমিকায় বিপ্লবের মাধ্যমে শোষক শ্রেণীকে পরাজিত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল, এরমধ্য দিয়েই লেনিনের তত্ত্ব – লেনিনবাদ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং রাশিয়াতে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে মার্কসবাদের সাথে বিশ্বে লেনিনবাদও স্বীকৃতি পায়।
এপ্রসঙ্গে ১৯২৭ সালে ৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন শ্রমিক প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাতকারে-কমরেড স্তালিন বলেন-“আমি মনেকরি লেনিন মার্ক্সবাদের কোন নতুন নীতি যোগ করেননি, অথবা তিনি মার্ক্সবাদের কোন একটি পুরানো নীতি বিলোপ সাধন করেননি,— তিনি সমগ্রভাবে ও পরিপূর্ণ রূপে মার্ক্সবাদের
নীতিগুলোর ওপর নিজকে স্থাপিত করেছিলেন।— বিকাশে নতুন অবস্থায়, পুঁজিবাদের নতুন পর্যায় সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে তিনি মার্কস এঙ্গেলস এর শিক্ষা আরও বিকাশিত করেন। –এই অর্থেই আমরা লেনিনবাদকে বলি সাম্রাজ্যবাদ এবং শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবের যুগের মার্ক্সবাদ।”
১৯২৪ সালে ২৮ জানুয়ারি ক্রেমলিন সামরিক স্কুলে লেনিনের স্মরণ সভায় কমরেড স্তালিন বলেন-” –কমরেড লেনিন ছিলেন পর্বতের ঈগল,
যিনি সংগ্রামের ক্ষেত্রে ভয় বলে কোন জিনিসকে জানতেন না, যিনি সাহসের সাথে রুশ বিপ্লবী আন্দোলনের অনাবিষ্কৃত পথ ধরে পার্টিকে নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন।” ১৯০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ফিনল্যাণ্ডে অনুষ্ঠিত বলশেভিক সম্মেলনে লেনিনের সাথে স্তালিনের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। স্তালিন বলেন-
“আমি লেনিনকে চিন্তায়িত করেছিলাম বৃহদাকার জাঁকালো ও কর্তৃত্বময় ব্যক্তি হিসাবে। কিন্তু সবচেয়ে সাধারণ চেহারার একজন লোক,
গড়পড়তা লম্বাও নন, কোন ভাবেই আক্ষরিক অর্থেও কোন ভাবেই সাধারণ মানুষের সাথে প্রার্থক্যপূর্ণ নন।” কমরেড স্তালিন আরও বলেন, ” ‘মহান ব্যক্তিদের’ জন্যে এটা স্বাভাবিক বিষয় বলেই স্বীকৃত যে সভা সমিতিতে তাঁরা দেরিতে উপস্থিত হ’ন যাতে সমবেত লোকজন রুদ্ধ নিশ্বাসে তাঁর আগমনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন, তারপর ‘মহান ব্যক্তিটির’ প্রবেশের প্রাক্কালে সাবধান বাণী উঠতে থাকে,’চুপ চুপ করুন,’ — নিরব থাকুন।
তিনি আসছেন।— কিন্তু যখন জানতে পারলাম যে প্রতিনিধিদের আগেই লেনিন সম্মেলন স্থলে পৌঁছে গেছেন, এক কোনায় অবস্থান গ্রহণ করেছন,
আর নিজকে কিছুমাত্র জাহির না করেই কথাবার্তা বলছেন। — কেবল পরবর্তী কালেই আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে এই সারল্য ও বিনয়, অলক্ষ্যিত থাকার, কমপক্ষে বা নিজকে বৈশিষ্ট্য করে না তোলার এবং নিজের উচ্চ অবস্থানের উপর গুরুত্ব আরোপ না করার এই প্রয়াস প্রচেষ্টা, এই বৈশিষ্ট্যটি ছিল নতুন জনগণের মানবতার ‘সাধারন সারির’ সরল ও সাধারন জনগণের নতুন নেতা হিসাবে লেনিনের সবচেয়ে বড় শক্তিশালী গুণ।”
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
আলোকিত প্রতিদিন