নড়াইলের মাঠে মাঠে দুলছে সোনালি ধান !

0
389
ছবি: আলোকিত ডেস্ক

প্রতিনিধি, নড়াইল:

নড়াইলের মাঠে মাঠে দুলছে কৃষকের স্বর্পেন সোনালি ধান আনন্দে আত্বহারা কৃষকরা। তবে ঘরে তোলা নিয়ে আশংকা দেখা দিয়েছে কালবৈশাখী ঝড় ও ও শিলা বৃষ্টির ভয়ে। আতঙ্কে দিন কাটছে কৃষকের কখন যেন ঝড়বৃষ্টির এসে স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয়। করোনার সংক্রমণে দেশের মানুষ যখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, তখন চাষিরা করোনার ভয়কে জয় করে সোনালি ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর নড়াইলের বোরো চাষিরা। মাঠের পর মাঠ জুড়ে শুধু সোনালি ধান।

ধানের সোনালি রঙ আসায় কৃষকরাও দ্রুত সময়ের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। এরই মধ্যে সোনালি ধান কাটতে ও ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর করোনার মধ্যেই কৃষকরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অতিরিক্ত ৬২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ধান উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা নড়াইলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৭ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ৪৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। নড়াইল সদর উপজেলার আন্ধারকোঠার বিল,ইছামতি বিল, কাড়ার বিল, আউড়িয়া, লস্কারপুর সলুয়ার বিল, কুমড়ির বিল, তারাপুর বিল, পেড়লির বিল, চাচড়ার বিল, চামরুল বিল,ধাড়িয়ার বিল, লোহাগড়া উপজেলার ইছামতি বিল, ইতনা বিল, কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ি বিল, পাটেশ^রী বিল, কলাবাড়িয়ার বিল সহ বিভিন্ন বিলে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।

এসব বিলে হাইব্রিড জাতের হীরা, তেজ গোল্ড, এসএল ৮এইচ, উফসি জাতের ব্রিধান- ২৮, ব্রি ধান-২৯, ব্রি ধান-৫০, ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-৬৩, ব্রি ধান-৬৭, ব্রি ধান-৭৬, ব্রি ধান-৮৪, ব্রি ধান-৮৮, ব্রি ধান-৮৯, ব্রি ধান-৯৬ সহ বিভিন্ন জাতের ধানের চাষ হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় জাতেরও কিছু ধানের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সঠিক পরিচর্যায় এবছর ধানে বাম্পার ফলন আশা করছেন চাষিরা। মাইজপাড়া ইউপির সলুয়া গ্রামের কৃষক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের মাইজপাড়া বিলে এবছর বোরা ধান খুবই ভাল হয়েছে। সম্প্রতি ঝড়ে কিছুটা সমস্যা হলেও ধানের ফলন ভাল হয়েছে। এরই মধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি কাটা শুরু হয়ে যাবে। দেশের মানুষ করোনার ভয়ে ঘরবন্দী থাকলেও কৃষকরা করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে বোরো ধানের চাষ করেছেন। করোনাকে ভয় পাচ্ছি না। তবে ঝড় ও শিলা বৃষ্টিকে ভয় পাচ্ছি। এই মুহূর্তে ঝড় ও শিলা বৃষ্টি হলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে। তখন আমাদের কি অবস্থা হবে আল্লাহ পাকই জানেন। এই ধান চাষের ওপরই আমাদের সংসারের খরচ, সন্তানদের লেখাপড়া। লোহাগড়া উপজেলার হান্দলা গ্রামের কৃষক এসকেন্দার মোল্যা বলেন, আমরা অর্থে কষ্টের মধ্যেই ধান চাষ করি। এ বছর ধান ভালো হয়েছে। গত বছর দাম ভাল পাওয়ায় এবছর আরো বেশি জমিতে ধান চাষ করেছি। আগামী এক মাসের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে। শিলা বৃষ্টি, ঝড় না হলে আল্লাহর রহমতে ভালোভাবে ধান ঘরে তুলতে পারবো।

ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের বোরো চাষি জামাল মোল্যা বলেন, ‘ সরকারীভাবে এবছর বীজ দেওয়া হয়েছে। হাইব্রীড জাতের বীজ লাগিয়েছি। ধান পাকতে শুরু করেছে। আগামী ১০দিনের মধ্যেই কাটা শুরু করবো। আশা করি প্রতি ৩শতক জমিতে ২ মনের অধিক ধানের ফলন পাবো। ধান ঘরে তুলতে পারলে নিশ্চিন্তে একটি বছর পার করতে পারবো। খাবারের কোন চিন্তা করতে হবে না। তাছাড়া এই ধান বিক্রি করে অন্যান্য ফসলের খরচ মেটাতে হবে। সামনে ঈদ। ঈদের আগেই ধান ঘরে তুলতো পারবো ইনশাল্লাহ।’ কালিয়া উপজেলার পিরোলী গ্রামের বোরো চাষি গোলাম মোর্শেদ বলেন, আমাদের এলাকায় ধান খুব ভাল হয়েছে। তবে কিছুদিন আগে একটি স্লুইচ গেট খুলে দেয়ার জন্য ধানক্ষেতে নদীর পানি প্রবেশ করায় কাটার সময় সমস্যা হচ্ছে। আশা করি আগামীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের ধান চাষের ক্ষেত্রে বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।

বেতবাড়িয়া গ্রামের প্রকাশ কুমার সহ অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আমাদের কোন সহযোগিতা করেননা। অফিসে সহযোগিতা বা পরামর্শ চাইতে গেলে ও ভালো আচরন করেননা।অফিসে যেয়ে কোর লাভ হয়না। তাই নিজেদেও ইচ্ছামত আবাদ করি। কৃষি কর্মকর্তারা যদি সহযোগিতা করতেন তাহলে আরো ভালো ফসল হতো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নড়াইলের উপ-পরিচালক দীপক কুমার দে বলেন, ধান উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা নড়াইল। এই জেলায় উৎপাদিত ধান জেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলায় সরবরাহ করা হয়। এ বছর ধান বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৭ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ৪৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অতিরিক্ত ৬২০ হেক্টর জমিতে।

আলোকিত প্রতিদিন / ২৩ এপ্রিল, ২০২১ /

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here