প্রতিনিধি, বগুড়া:
কিছুদিন পর প্রকৃতিতে দেখা দিবে বর্ষাকাল। জলভিত্তিক পেশাজীবীদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই। তাই তো বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় নৌকা তৈরির ধুম পড়েছে। নদীর পাড় এলাকায় কেউ পুরাতন নৌকায় আলকাতরা ও জোড়াতালি দিয়ে নিচ্ছেন। কেউবা নতুন নৌকা তৈরি করছেন। মিস্ত্রিদের ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যমুনা ও বাঙ্গালী নদীবেষ্টিত সারিয়াকান্দি উপজেলা বর্ষাকালে বিশাল এলাকা জুড়ে বন্যা দেখা দেয়। বন্যার এ পানিতে অধিকাংশরা মাছ শিকার করে থাকেন। এক চর থেকে অন্য চরে চলাচল করা ছাড়াও খেয়া পারাপার পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রধান বাহন হয় নৌকা। এরই মধ্যে যমুনা ও বাঙ্গালী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এ জন্য নৌকার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাবে। ফলে এখন নদী পারের মানুষেরা নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০ হাত থেকে ৬০ হাত পর্যন্ত লম্বা নৌকা তৈরি করছেন এ এলাকার বাসিন্দারা। রকমভেদে এসব নৌকা তৈরিতে ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে প্রায় ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মানুষ খরচ করে থাকে। উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের দেবডাঙ্গা গ্রোয়েন বাঁধ এলাকায় গেলে দেখা যায় পাঁচ দিনে ধরে প্রায় ২৬ হাতের একটি নৌকা তৈরি করা হচ্ছে। নৌকা তৈরির সময়টা বেশ উৎসবমুখর হয়। নৌকার মিস্ত্রি, মালিক সবাই একসাথে কাজের সময় উপস্থিত থাকে। অনেক মালিক আছে মেরামত, বানানোর কাজে নিজেও শরিক হন। ২৬ হাত দ্যৈর্ঘের এই নৌকাটির মালিক জাহাঙ্গীর আলম। এই নৌকা নিয়ে যমুনা নদীতে মাছ ধরবেন তিনি। প্রতিবছরই তিনি যমুনায় মাছ ধরেন।
জাহাঙ্গীর বলেন, নৌকা তৈরি করতে আমার মোট খরচ পড়ছে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। এছাড়াও নৌকাতে শ্যালো মেশিন বসানো বাবদ খরচ পড়বে আরো ৩০ হাজার টাকার মত। সবমিলিয়ে নৌকা তৈরি এবং চলাচলের উপযোগী করে তুলতে খরচ হয় ৮৫ হাজার টাকার মত। নৌকা তৈরির মিস্ত্রী ও মথুরাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা টুটুল মিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায় শুষ্ক মৌসুমে নৌকা বানানোর কাজ শুরু হয়। বর্ষার আগে পর্যন্ত এসকাজ চলে। টুটুল বলেন, নৌকা তৈরি করে দেওয়া বাবদ মুজুরি নেবে ১১ হাজার টাকা। গত বর্ষা মৌসুমে ২৫টি নৌকা তৈরি করেছিলাম। এবারও একই পরিমাণ নৌকা তৈরির ও মেরামত করার অর্ডার পেয়েছি।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মথুরাপাড়া গ্রামের নায়েব আলী, ছলেমান, দেবডাঙ্গা গ্রামের রহমত ব্যাপারী, বাগবেড় গ্রামের আমছার আলীসহ আরও অনেকে নতুন নৌকা তৈরি করছেন আসন্ন বর্ষায় ব্যবহার করার জন্য।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম বলেন, সারিয়াকান্দি উপজেলা নদীভিত্তিক এলাকা। বর্ষাকালসহ বিভিন্ন রকমের দূর্যোগে আমরা নৌকা ব্যবহার করে থাকি। নৌকা ছাড়া নদী পাড়ের মানুষের চলাচল অসম্ভব। তাই বর্ষার আগেই এ অঞ্চলের মানুষদের মাঝে নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজ দেখা যায়।।
আলোকিত প্রতিদিন / ২৬ এপ্রিল, ২০২১ / দ ম দ