এসআই আতিকুল ইসলামের রক্তে প্রাণ বাঁচলো প্রসূতি মায়ের

0
347

প্রতিনিধি, ঈশ্বরদী:

সিজারিয়ান অপারেশনের পর প্রসূতি রুনার জীবন বাঁচাতে রক্ত দেয়া জরুরি বলে জানান চিকিৎসক। কিন্তু তার ‘ও’ নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েন তার স্বজনরা। কোথায় যাবেন, কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এ সময় যেন দেবদূতের মত এসে হাজির হলেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুল ইসলাম। তার দেয়া রক্তে প্রাণ বাঁচলো প্রসূতির। শনিবার (১ মে) ঈশ্বরদী উপজেলার শোভন ক্লিনিকে ঘটে এ ঘটনা। এসআই আতিকুল স্থানীয় রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ। প্রসূতি রুনা খাতুন (২৭) ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের কারিগরপাড়া সোহরাব আলীর মেয়ে। শোভন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম শামিম জানান, শনিবার সকালে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। সিজারিয়ান অপারেশনের পর তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। কন্যা শিশুর জন্ম দিয়ে ক্লিনিকের শয্যায় রক্তশূন্যতায় কাতরাচ্ছিলেন তিনি। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জানান, তখন রক্ত না পেলে তাকে বাঁচানো যেত না। প্রিয়জনকে বাঁচাতে দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করছিলেন স্বজনরা। কোথাও রক্তের সন্ধ্যান পাচ্ছিলেন না। সে সময় ঈশ্বরদী থানা পুলিশ সদস্যের একটি দল টহলরত ছিল। তারা বিষয়টি জানতে পারেন। তারা পুলিশের এসআই আতিকুল ইসলামের রক্তের গ্রুপ জানতেন। তিনি নিয়মিতই রক্তদান করেন। এ অবস্থায় এসআই আতিকুল ইসলামকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে দ্রুত ফাঁড়ি থেকে ক্লিনিকে হাজির হয়ে রক্ত দেন তিনি। তার রক্তে হাসি ফোটে নবজাতকের মা রুনার মুখে। তার স্বজনদের অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় ধন্য হন আতিকুল। এ পুলিশ কর্মকর্তাকে সাধুবাদ জানান ক্লিনিকের কর্মরত চিকিৎসক-কর্মচারী ও স্থানীয়রা। আতিকুল ইসলাম শনিবার রাতে জানান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই যোগ দিয়েছিলেন রক্তদাতাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বাঁধন’-এ। তিনি বলেন, বাঁধন থেকে যা পেয়েছি, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা টাকাপয়সা দিয়ে তা পাওয়া যায় না। নিজেকে বাঁধনের কর্মী বলে পরিচয় দিতে আজও গর্ববোধ করি। তিনি বলেন, এই সংগঠনের কর্মীরা স্বপ্ন দেখেন, রক্তের অভাবে বাংলাদেশে আর একজন রোগীও মারা যাবে না। বাংলাদেশে প্রত্যেক মানুষ হবেন একেকটা বাঁধন। ‘রক্ত দিলে হয় না ক্ষতি, রক্ত দেব ৪ মাস প্রতি’ এ স্লোগান তার হৃদয়ে গাঁথা বলে জানান এই এসআই। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তিনি ১৫ জনকে রক্ত দিয়েছেন। রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখার সুযোগ ও আনন্দটা তিনি সর্বশেষ শনিবারও হাতছাড়া করতে চাননি। সে জন্যই খবর পাওয়া মাত্রই তার ছুটে যাওয়া ক্লিনিকে। এসআই আতিকুল জানান, সচেতনতার অভাবে এবং কিছু ভুল ধারণার কারণে অনেকেই রক্তদানের মতো দুর্লভ সুযোগ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেন। অথচ সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হিসেবে প্রতি ১২০ দিন পর কোনো রকম শারীরিক ক্ষতি ছাড়াই রক্ত দিয়ে একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখা যায়। নিয়মিত ব্যবধানে কেটে ফেলা চুল-নখ যেমন কাজে লাগে না, তেমনি নিয়মিত ব্যবধানে ভেঙে যাওয়া রক্তকণিকাও মানব শরীরে কোনো কাজে আসে না। অথচ এই রক্ত অন্যকে দিলে তার জন্য তা হতে পারে মহামূল্যবান সম্পদ বা জীবন বাঁচানোর অনুষঙ্গ। তিনি বলেন, ওই মা ও শিশুটি সুস্থ আছে। এতেই আমি খুশি। ‘রক্ত দিয়ে পেয়েছি স্বাধীনতা, রক্ত দিয়ে বাঁচাব মানবতা’, আর ‘একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন’ এসব মূলমন্ত্র মনে রেখেই আগামীতেও মানুষের জন্য ছুটে যাবো, বার বার যাবো। উল্লেখ্য, আতিকুল ইসলামের বাড়ি লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায়। তিনি ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। তার প্রথম পোস্টিং ছিল পাবনা সদর উপজেলায়। এরপর তিনি ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আলোকিত প্রতিদিন / ০২ মে, ২০২১ / দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here