প্রতিনিধি,রংপুর:
আমের আড়তে থরেথরে সাজানো পাকা আম। শতভাগ কেমিক্যাল মুক্ত আমের আশ্বাসে দামও হাঁকাচ্ছেন বেশ। নির্ধারিত সময়ের আগেই অপরিপক্ব আম সংগ্রহ করে কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। স্বাভাবিকভাবে আম দেখতে পাকা মনে হলেও আমের আঁটি এখনো কাঁচা দেখা গেছে। বিক্রেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা এলাকার গাছপাকা আম এগুলো।
মৌসুম শুরু না হতেই প্রতিবছরের মতো এবারও রংপুর, গাইবান্ধা,লালমনিরহাটসহ এ বিভাগের জেলা, উপজেলাগুলোর বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে ‘অপরিপক্ক’ পাকা আম। ‘সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ’ হিসেবে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে সে আম। যদিও সাতক্ষীরার বাজারেই সে আম এখনো উঠতে শুরু করেনি বলে জানা গেছে। আমের ক্যালেন্ডারের হিসাবে সে আম বাজারে উঠতে শুরু করবে চলতি মে মাসের ১২ তারিখের পর। আবার আমের আমদানিও বন্ধ রয়েছে। তাহলে এই পাকা আমের উৎস কী? রাসায়নিক দিয়ে এসব আম পাকানো হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর রাসায়নিক ব্যবহার করে পাকানো হলে তা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে ওঠা এসব আম ল্যাবে পরীক্ষা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এসব আমে কেমিক্যাল পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় দেখা গেছে, বাজারে পাকা আমের আধিক্য ছিল খুবই কম। রংপুরে পাকা আমে ভরপুর হয়ে উঠে মহানগর ফলের আড়ত। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা যায় হলুদ-সবুজ আম। প্রতিটি ফলের দোকানেই সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ নামে এসব আম বিক্রি হতে দেখা গেছে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটেও একই চিত্র দেখা গেছে। পলাশবাড়ীতেও ছিল একই চিত্র। আর প্রতিটি স্থানেই আম কিনতে ক্রেতাদের মধ্যে বাড়তি আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। ১০ বছর ধরে রংপুরে ফলের ব্যবসা করেন জুয়েল(ছদ্মনাম) । তার দোকানেও বিক্রি হচ্ছিল হলুদ-সবুজ রঙের পাকা আম, তথা ‘সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ’। তিনি বলেন, ‘বাজারে প্রকৃত গোবিন্দভোগ আসতে আরও ১৫ দিন সময় লাগবে। সবাই বিক্রি করছে। তাই বাধ্য হয়ে আর দশ জনের মতো অমাকেও বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুবা ক্রেতা এসে ঘুরে যাবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার এক বিক্রেতা বলেন, ‘সবাই জানে মৌসুম শুরু হয়নি। তারপরও কিনছে। আমরাও বিক্রি করছি। আর বলার সময় বলে বিক্রি করছি যে এখনো আম মিষ্টি নয়।’ উপজেলার আরেক বিক্রেতা বলেন, আড়তে পাকা আমের অভাব নেই। সবাই লাভের জন্য বিক্রি করছে। কাস্টমারও নিয়ে যাচ্ছে। কী আম বিক্রি করছেন? জানতে চাইলে ওই আম বিক্রেতা আমের নামই জানাতে পারেননি। তবে তিনি এগুলোকে সাতক্ষীরার আম বলে দাবি করছিলেন। অন্য এক বিক্রেতা ভারতীয় ‘তোতাহার’ নামের এক ধরনের আম বিক্রি করছিলেন। তার দাবি, সারাবছরই এসব আম বিক্রি হয়। এদিকে, গতকাল সুন্দরগঞ্জ পৌর বাজারের এক ফল দোকানীর থেকে ‘পাকা আম’ কিনছিলেন মামুন । তিনি বলেন, ‘আমের মৌসুম আসেনি এটা জানি। তারপরও আম কিনলাম। রোজার মাস। মহিলারা খেতে চায়।’ এসব আম কী স্বাস্থ্যকর?— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকার বিক্রি করতে না দিলে এসব আম কেনার ক্ষমতা কি আমার আছে? যে বিক্রি করছে, তার কী বিক্রি করার ক্ষমতা আছে? আম বিক্রি বন্ধ করতে হলে সরকারকেই করতে হবে।’
বাজারে ওঠা আমের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন,‘আমরা বাজার মনিটরিং করছি। যদি কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম বাজারে পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা বলেন, দেশের কোথাও আমের চূড়ান্ত ফলন শুরু হয়নি। কিছু কিছু গাছে দুয়েকটি আম পাকতে শুরু করেছে। যে পরিমাণে আম পাকছে, তা কেবল পরিবারের সদস্যদের চাহিদা মেটানোর উপযোগী। সাতক্ষীরার নাম করা হলেও জেলাটিতে এখনো আম উত্তোলন শুরুই হয়নি। আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জেও আমের মৌসুম শুরু হবে এ মাসের শেষ দিকে।
আলোকিত প্রতিদিন / ০২ মে, ২০২১ / দ ম দ