Blessings এর উদ্যোগে পথশিশুর মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ

0
509
প্রতিনিধি, মিরপুর:
প্রতিটি হাসিই যে অমূল্য- তা আবারও প্রমাণ করে দেখালো নিষ্পাপ পথশিশুর দল। Blessings এর উদ্যোগে ও অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষীর সহায়তায় চাঁদের হাটই যেন নেমেছিল মিরপুর দুয়ারিপাড়ার ৫ই মের সন্ধ্যায়। ৩০ জন দরিদ্র পথশিশুর হাতে সেদিন তুলে দেয়া হয় ঈদ আনন্দের উপহার।  শুধু এটুকুই নয়। ঢাকার অনতিদূরে সাভারের বইলারপুর, বন্দে, কোটাপাড়া গ্রামের ৭০ জন অবহেলিত শিশুকেও প্রদান করা হয়েছে ঈদের উপহার সামগ্রী। Blessings আয়োজিত সম্পূর্ণ কার্যক্রমটি যথাযোগ্য স্বাস্থ্যবিধি ও কোভিড প্রটোকল মেনেই সম্পন্ন করা হয়। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনাতেও আছে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নিয়মিত হবার প্রতিশ্রুতি। বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মহামারির কবলে পর্যুদস্ত জনজীবন, দিশেহারা সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। এর সাথে যোগ হয়েছে খাদ্য, চিকিৎসা প্রভৃতি সরঞ্জামের অপর্যাপ্ততা। উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি যখন ক্রান্তিকালের ক্ষতির সাথে কিছুটা মানিয়ে নিয়েছে তখন নিম্ন মধ্যম আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনধারণই পড়েছে সংকটে।  অনেকে হারিয়েছেন কাজ, দুবেলা দুমুঠোর সংস্থান। পরিবারে এক বেলা আহারের ব্যবস্থাই হয়ে গেছে অসম্ভব। ভেবে দেখুন, প্রতিবেলা আপনার টেবিলে শোভা পাচ্ছে তিন চার পদের তরকারি, অন্যদিকে জনা ছয়েকের অজস্র পরিবার দিন কাটছে অনাহার-অর্ধাহারে! শহর ও মফঃস্বলের পথশিশুদের অবস্থা আরও শোচনীয়। ফুল, পত্রিকা বা টুকিটাকি বিক্রি করে যে স্বল্প আয় হতো, তাও কেড়ে নিয়েছে ভয়াল মহামারি। ভাগ্যবিড়ম্বিত এই শিশুর দলের অন্নসংস্থানও হয়ে পড়েছে দুরূহ। গত বছর ‘হাজারো হাসি’র উদ্যোগে ১০০ টি দরিদ্র পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছিল। পাশাপাশি ক্লান্ত, নিরন্ন সংগ্রামী পরিবারগুলোর জীবনে স্বস্তি আনবার লক্ষ্যে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সাহায্য করা হয় বছরব্যাপি। তবে এবার কার্যক্রমে আসে ভিন্ন আঙ্গিক। শিশুদের মানসিক ও বুদ্ধি বিকাশে সহায়ক খেলনার পসরা নিয়ে বাজারে আসে Blessings। এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় এবছরের মার্চ থেকে। শিশুদের মেধা ও সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়ক স্মার্ট টয়েসের জন্য ইতোমধ্যেই ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। তাদের এই সুনামের পেছনে রয়েছে ভোক্তা চাহিদা ও সেবার উপর বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা। শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বার্থেই যেহেতু Blessings এর পথচলা, তাই  এর কর্ণধার তৌকির আহমেদ ও আবু সায়েম ভুলে যাননি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কথাও। আগের ধারাবাহিকতায় ‘হাজারো হাসি’র সাথে যোগ দেয় Blessings. যাত্রার আরম্ভেই দানা বেঁধেছিল পরিকল্পনা। Blessings এর আয়কৃত অর্থের একটি অংশ দুঃস্থ পরিবারের স্বার্থে ব্যয়ের প্রত্যয় ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে। ঈদের মৌসুমে সেই পরিকল্পনা ডালপালা মেলে দাঁড়ায়, সিদ্ধান্ত নেয়া হয় অন্তত ১০০ জন পথশিশুকে ঈদের জামা এবং সেমাই-চিনি-দুধের প্যাকেট দেয়া হবে। পথশিশুদের বর্ণিল আগামীর এই স্বপ্নে সারথি হয় দুজনের ফ্রেন্ড সার্কেলের বাকিরাও। অদম্য একদল তরুণের প্রচেষ্টায় দাঁড় হয় সুচিন্তিত কর্মযজ্ঞের খসড়া। যেই স্বপ্নের শুরু হয়েছিল দুই উদ্যোক্তার ভাবনায়, মানবতার কল্যাণে একরাশ সেবক মিলে যায় নিমিষেই। সেই মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আহবান করা হয় সাহায্যের। অল্প সময়েই অনন্য এই উদ্যোগে পাশে দাঁড়ান Blessings এর শুভানুধ্যায়ি ও ক্রেতা সাধারণেরা। তাদের দান করা অর্থের বদৌলতেই মাসের শুরুতেই ১০০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মুখে অনাবিল প্রশান্তির হাসি ফোটাতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। শিশুদের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক এই ভবিষ্যতেও এই কর্মধারা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে Blessings। এর স্বত্বাধিকারী তৌকির আহমেদ জানান, ‘আমাদের ইচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুদের অধিকার আদায়ে নিরন্তর কাজ করে যাওয়া। এনজিও বা প্রাতিষ্ঠানিক বলয়েই তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে সচেষ্ট আমরা। সমাজের আর দশটি শিশুর মত এই নিষ্পাপ শিশুদেরও শিক্ষা, প্রতিভা বিকাশের অধিকার রয়েছে। সেই দিকগুলোকে মুখ্য রেখেই আমাদের এই প্রচেষ্টা।‘ তরুণ দুই উদ্যোক্তার স্বপ্ন শুধু ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেই আটকে নেই। সমাজের সর্বস্তরের শিশুদের যথাযোগ্য যত্ন ও অধিকার নিশ্চিতে কর্মপন্থা অনুসারে এগিয়ে চলেছেন তারা। শিশুদের মানসিক বিকাশকে সামাজিক পর্যায়ে উন্নীত করে সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণে Blessings প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। সমাজকল্যাণে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে আবু সায়েম বলেন, ‘দুঃস্থ পরিবারের পাশে থাকবার আনন্দই ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। আমাদের বন্ধু মহল, স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা রোদ ঘাম পায়ে ঠেলে অর্থ সংগ্রহ করছে। সেই অর্থের হিসাব রেখে শিশুদের জন্য কেনাকাটা, তাদের সাথে যোগাযোগ করছে। মহৎ হৃদয়ের এই মানুষগুলো না থাকলে কিছুই সম্ভব হতো না। দিনশেষে তাদের পরিশ্রমেই আমাদের এই উদ্যোগটি সফল। করোনাকালীন এবং এর পরেও মানবতার স্বার্থে আরও বেশি মানুষ এর সাথে যুক্ত হবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।‘
আলোকিত প্রতিদিন / ১১ মে, ২০২১ / দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here