ঈদে রশিতে আটকানো পিকআপ বোঝাই মানুষ যাচ্ছে গ্রামে

0
322
নিজস্ব প্রতিনিধি:
করোনার ভয়াল গ্রাস থেকে সুরক্ষায় সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার গণপরিবহন। কিন্তু ঈদের মাত্র বাকি দুদিন। দূরপাল্লার যান বন্ধ থাকলেও নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে ঘরমুখী মানুষ। যথেষ্ট ভোগান্তি ও পরিবহন সংকট উপেক্ষা করে বিকল্প পথ ও বাহন বেছে নিয়েছেন তারা। প্রাইভেটকার, ট্রাক ও পিকআপে বোঝাই হয়ে করোনাভীতি তুচ্ছ করে পরিবারের টানে বাড়ি ছুটছেন তারা। এমনকি রশিতে আটকানো পিকআপ বোঝাই মানুষকেও ঘরে ফিরতে দেখা গেছে। রাজধানীর শিল্পাঞ্চল সাভারের শিল্পকারখানা ছুটি না হলেও যাত্রীর চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে চেক পোস্ট বসিয়ে ঘরমুখো মানুষকে আটকানোর চেষ্টা করছে প্রশাসন। কিন্তু বাড়ি যাওয়া চাই। তাই তো পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ট্রাকে ট্রাকে বাড়ি ছুটছে মানুষ। সোমবার (১০ মে) রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর-চন্দ্রা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক ঘুরে দেখা যায়, মানুষ বোঝাই পিকআপ ট্রাকের সারি। একটার পর একটা মানুষ বোঝাই ট্রাক ও পিকআপ ছুটছে গন্তব্যে। শত ভোগান্তি উপেক্ষা করেই বাড়ি ফিরছে মানুষ। উদ্দেশ্য পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি।  চরম ভোগান্তি ভোগ করে গ্রামের বাড়ি জামালপুর যাচ্ছেন একদল যুবক। দলের সদস্য বেশি হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে মালামালের মতো পিকআপের পিছনে বাঁধা হয়েছে রশি। এভাবেই জামালপুরের মাদারগঞ্জ যাচ্ছেন সাকিল। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রায় তিন ঘণ্টা গাড়ির অপেক্ষায় থেকে এই পিকআপটি ভাড়া করেছি। প্রতিজন ৫০০ টাকা করে ভাড়া দিয়ে রাজি করিয়েছি। তার পরেও যেতে চায় না। অনেক অনুরোধ করে কষ্ট হলেও যেতে হচ্ছে। প্রায় ১ বছর পর একটা ঈদ পাই আমরা। বাবা-মা ও ভাই-বোনের সাথে ঈদ না করতে পারলে এতো শ্রম দিয়ে লাভ কী? তাহলে ঢাকায় এসে এত কষ্ট করি কেন? যেভাবেই হোক বাড়ি যেতেই হবে। পিকআপের অপর যাত্রী আল-আমিন বলেন, প্রতিবারই তো কষ্ট করেই বাড়ি যেতে হয়। ঈদের আগে ভাড়াও হয়ে যায় বেশি। এবার বাসে বসে যানজটে আটকে কষ্ট করতে হবে না। ওই কষ্ট পিকআপে হলে তো দোষ নাই। বাসে টাকা বেশি দিলেও কষ্টে যেতে হয়, পিকআপেও কষ্ট হয় একই। কষ্টে তো যেতেই হয় এবার না হয় পিকআপেই কষ্ট করলাম। পিকআপের চালক হানজালা বলেন, রাস্তায় রাস্তায় চেক পোস্ট। এজন্য রাতে বের হলাম। তবে রাতেও অনেক জায়গায় চেক রয়েছে। এত যাত্রী, বাস তো নেই; আমরা না থাকলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়তো। প্রতিটি যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি ৫০০ টাকা করে। তবে ফিরে আসতে আসতে তেলসহ বিভিন্ন খরচ হয়। টাকা মহাজনকে দিয়ে দেড় দুই হাজার থাকে। দুই দিন কষ্ট করে দেড় থেকে দুই হাজা টাকায়ও পোষায় না। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কে ট্রাকে ট্রাকে দেখা গেছে ঘরমুখী যাত্রী। ট্রাকে করে যাচ্ছেন এনামুল। তিনি বলেন, গাড়ি না থাকলে যা পাবে তাতেই তো যাবে মানুষ। সবাই তো যাচ্ছে। অনেকেই গ্রামে পৌঁছে ফোন দিচ্ছেন তারা ভালোভাবেই পৌঁছে গেছে। আমাদের যেতে দোষ কী? তিনি বলেন, করোনা যদি হয় কেউ ঠেকাতে পারবেন না। আমি এর আগেও বাড়ি গিয়েছি ট্রাকে করেই। করোনা তো হলো না। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম বলেন, করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। এক ঈদের জন্য পরিবার পড়ছে হুমকির মুখে। এভাবে গাদাগাদি করে পিকআপ-ট্রাকে করে মানুষ গ্রামে গেলে গ্রামেও করোনা দ্রুত ছড়ানোর শঙ্কা রয়েছে। আমাদের নিজের থেকে সচেতন হতে হবে। একজনের জন্য পুরো পরিবারকে হুমকির মুখে পড়ছে। আমরা চাই ঈদের ছুটি যাই হোক, এবার ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি হবে সহযোদ্ধাদের সাথে। তাহলেই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। নবীনগর চেক পোস্টের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই হারুন ওর রশিদ সোমবার রাত ১১টার দিকে বলেন, আমরা নবীনগরে চেক পোস্ট বসালে গাড়ির মালিক ও যাত্রীরা নতুন করে স্ট্যান্ড বানিয়েছে পার্শ্ববর্তী নিরিবিলি এলাকায়। চেক পোস্ট এলাকায় গাড়িতে কোনো যাত্রী থাকে না। চেক পোস্ট পার হয়ে আবার গাড়িতে উঠে রওনা করছেন যাত্রীরা।
আলোকিত প্রতিদিন / ১১ মে, ২০২১ / দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here