আমাদের মমিনুল ভাই ও তার চিকিৎসার হালহাকিকত । রকিবুল ইসলাম

0
1124

আমাদের মমিনুল ভাই ও তার চিকিৎসার হালহাকিকত
রকিবুল ইসলাম

১২ মে-২০২১। BSH হাসপাতাল (শ‍্যামলী, ঢাকা), ৮৩৮ কেবিনে এক প্রকার কোমায়, মৃত‍্যুর অপেক্ষায়  যায় যায় দিন পত্রিকার সাংবাদিক,  HSTU এর SSH অনুষদ এর সহকারী পরিচালক এবং  Desh TV’র দিনাজপুরের সাবেক প্রতিনিধি মোমিনুল ইসলাম ভাই। ডাক্তার বলেছেন, এ ধরনের রোগীর বাঁচার অনুপাত খুবই  কম।

গত ১৫ এপ্রিল-২০২১ এর MRI রিপোর্টে মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়লে দিনাজপুর আ. রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জন ডা. শাহারিয়ার মোর্শেদ তার স‍্যার ঢাকা মেডিকেল এবং BSH এর নিউরো সার্জন প্রফেসর  ডা. মো. রাজিউল হক এর নিকট যেতে বলেন। তার কাছে গেলে MRI রিপোর্ট দেখে তিনি দ্রুত সার্জারির পরামর্শ দেন।

গত ২৭ এপ্রিল-২০২১ তারিখে তার অস্ত্রপচার হয়। অপারেশন থিয়েটার থেকে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর বের হয়ে ডা. রাজিউল হক আমাদের জানালেন আমি টিউমার অপসারণ করে আমার কাজ শেষ করেছি, অন্য ডাক্তাররা বাকী কাজ শেষ করবেন। পরবর্তিতে তিন দিন পরেও রোগীর কোনো CGF (অনুভূতি জ্ঞান) না আসায় আমারা রোগীর লোকজন অস্থির হয়ে পড়লে  ডাক্তারের সহকারি  ডা. ফারুক পাটোয়ারী  আমাদের জানান এ ধরনের case-এ রোগীর সম্পূর্ণ টিউমার অপসারণ সম্ভব হয় না।আমরা ৬০-৭০ ভাগ অপসারণ করেছি, বাকিটা রোগী সুস্থ হলে রেডিয়েশনের মাধ্যমে  নির্মূল সম্ভব হবে।  এ কথা শুনে আমরা যারপরনাই অবাক হয়ে যাই। অপারেশন পরবর্তী বায়োপসিতে মিনিগ্লান্ট ক‍্যান্সার-৪ এর রিপোর্ট আসে।

পরবর্তীতে ডা. তৌহিদুজ্জামান (নিউরো সার্জন, পিজি) এর নিকট MRI রিপোর্ট নিয়ে গেলে, অপারেশনের পূর্বেই রেডিয়েশন দিলে তার টিউমার সংকুচিত হলে পরবর্তীতে সার্জারি করলে অপারেশন ফলপ্রসূ হতো বলে তিনি জানান । পরবর্তীতে  একই প্রশ্ন  ডা. রাজিউল হককে করা হলে তিনি বলেন, তার  টিউমার সাইজে বড় এবং ইডিমা বেশি ছিলো। সার্জারির পূর্বেই রেডিয়েশন দিলে ইডিমা বেড়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেত। ডা. রাজিউল হক কিন্তু এ কথা রোগীর অবস্থা খারাপ এবং মিডিয়ার (যায় যায় দিন টিম, বিডি নিউজ, সময় জার্নাল) প্রশ্নের সম্মুখে পড়ার পড়ে বলেছেন। রোগীর মৃত্যুর মুখে এখন কেন এ কথা অমরা শুনবো? অপারেশনের পূর্বে এ কথা কি বলা যেত না? এর সহজ এবং সরল  উত্তরে ডা. তৌহিদুজ্জমান বলেছেন, রোগী এবং ব‍্যবসা হাতছাড়া হওয়ার ভয়েই দ্রুত সার্জারিতে যাওয়া হয়েছে যা অন‍্যায়।

অপারেশন পূর্ব রোগীর অভিভাবকের স্বাক্ষর (বন্ড সই) গ্রহণ না করাই তার প্রমাণ। অপারেশন পরবর্তী বডি ইমিউনিটি এবং CGF বৃদ্ধি হলেই কেবল রেডিয়েশন দেওয়া সম্ভব যা আদৌ কতটুকু বৃদ্ধি হবে তা কারোরই জানা নেই। মমিনুল ভাই হয়ত সবই শুনছেন কিন্তু কিছু বলার ক্ষমতা নেই। মাঝে মাঝে তার চোখের কোণে যে লবণাক্ত পানি আমি দেখেছি তা যেন আমাদের সাস্থ‍্য‍ ব‍্যবস্থার  করুণ অবস্থাকে উপহাস করছে।

ডা. মদন মহন রেড্ডি আমাকে (Attendent of  the patient) বলেছিলেন, ‘You’re The First Doctor Of Your Patient’. আমাদের দেশের ডাক্তারদের কাছে রোগীর Attendent হলো দালাল। সে কেন বোঝাবে? সে কী ডাক্তার? আমি জানি না MBBS পরবর্তী  প্রশিক্ষণগুলোতে কাউন্সিলিং (রোগীর অর্থনৈতিক এবং সুস্থ  হওয়ার পক্ষে) কতটুকু শেখানো হয়? তবে এ বিষয়ে একটি বড় অধ‍্যায় থাকা দরকার।

 

আলোকিত প্রতিদিন/জেডএন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here