টাঙ্গাইলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার ও ওষুধ না থাকায় রোগীরা চরম ভোগান্তিতে

0
298

প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল:
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাকুটিয়ার একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিভিন্ন পদে জনবল না থাকায় গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ গ্রামীণ শিশু, নারী ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জনবল সংকট ও তদারকির অভাবে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। নামে স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সেবার কোন বালাই নেই। নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার থাকলেও কখনোই তাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেখা যায় না। পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার কর্মরত থাকলেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। তাছাড়া প্রায় সময় তাকে পাওয়া যায় না । উপজেলার পাকুটিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে লক্ষাধিক রোগী । স্থানীয় জনতা ডাক্তার চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর দরখাস্ত দিয়েছেন। জানা গেছে, এ ইউনিয়নের পশ্চিমে গোপালপুর পৌরসভার জনগোষ্ঠী ,পূর্বে সংগ্রামপুর ইউনিয়ন, উত্তরে আলোকদিয়া ইউনিয়ন, দক্ষিনে ঘাটাইল ইউনিয়ন এবং মাঝখানে দেউলাবাড়ি ইউনিয়ন। একটি পৌরসভা ও চারটি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সরকার ১৯৯৬ সালে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেউলাবাড়ি ইউনিয়নে পাকুটিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র (সাব-সেন্টার) নামে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গড়ে ওঠে। ইতোপূর্বে সদর হাসপাতালের মতোই রোগী হতো এখানে। ফার্মাসিস্ট আব্দুল খালেকের অবসর আর ডাক্তার আব্দুল হাকিমের মৃত্যুতে চিকিৎসা সেবা একেবারেই ভেঙে পড়েছে ওই সাব-সেন্টারটিতে। বর্তমানে সেই সাব- সেন্টারটি এখন ময়লার ভাগাড়, মাছের বাজার, গাড়ির গ্যারেজ আর মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে শামীম আল মামুন নামে একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার কর্মরত থাকলেও তার বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। ঠিকঠাক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না আসা, রোগিদের সাথে খারাপ আচরণ, রোগীদের ঔষধ না দেয়া, কাটাছেড়া সেলাই ও ড্রেসিং করতে বাড়তি অর্থ আদায়-প্রদান, অন্যান্য ষ্টাফদের সাথে খারাপ আচরণ, সরকারি সম্পদ হাসপাতালের বেশ কয়েকটি গাছ কর্তন সহ ডজন খানেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মাস তিনেক আগে জাকির হোসেন জগু মৃধা নামে এক দিন মজুরকে ভুল চিকিৎসা প্রদানের দরুন তার পায়ে একাংশ কেটে ফেলতে হয়েছে। পরবর্তিতে কাটা পায়ে ইনফেকশন নিয়ে অল্প কিছু দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, তৃতীয় শ্রেণীর এই কর্মচারী স্থানীয় হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম করে বেড়াচ্ছে বলে স্থানীদের অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের হাতে ব্যবস্থাপত্র দেখে এ সব অভিযোগের সত্যতা মিলে। ভুক্তভোগী পশ্চিম পাকুটিয়া গ্রামের রাহেলা বেগম, শিরিনা বেগম, দয়াকান্দি গ্রামের আব্দুল বাছেদ, অনিল ঋষি, হাসমত আলী, পূর্ব পাকুটিয়া গ্রামের মাহাতাব আলী, করিমন বেওয়া, উত্তর খিলগাতী গ্রামের বোরহান উদ্দিন, দেউলাবাড়ী গ্রামের ফাতেমা বেগম, রমিচা বেগম, খাল পাকুটিয়া গ্রামের ছাইফুল ইসলাম, ফুলহারা গ্রামের রাহেলা বেগম, হাসনা বেগম, রমিছা বেগম সহ আরও অনেকেই বলেন, ডাক্তার শামীম এখানে আসার পর আমাদের কপাল পুড়েছে। মাসে একবার ওষুধ নিতে এলে ঔষুধ না দিয়ে খালি হাতে ফেরত দিচ্ছে । দেখার জন্য কেউ নেই। এ বিষয়ে দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শামীম আল মামুন নামে যে ডাক্তার আছে তার পক্ষে এতো বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সম্ভব নয়। তাছাড়া স্থানীয় লোক হওয়ার কারণে অনেকের সঙ্গেই প্রায়ই খারাপ আচরণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনের সাথে খারাপ আচরণের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে মেডিকেল অফিসার চেয়ে আমি ছাড় পত্রও দিয়েছিলাম। সঙ্গত কারণে আজও সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। তাছাড়া হাসপাতালের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা থাকার কারণে মানুষ এখানে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে আসতে চায় না।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৮ মে, ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here