দেশ বাঁচানোর পথ : রোজিনা ইসলামই আলো । আবদুল হাই শিকদার

0
815

দেশ বাঁচানোর পথ : রোজিনা ইসলামই আলো
আবদুল হাই শিকদার

সাংবাদিক রেজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রেখে নির্যাতন ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশ এবং সাংবাদিক সমাজ ।এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাংবাদিক নেতা কারাবন্দী রুহুল আমীন গাজীর মুক্তির বিষয়টিও। পথে নেমেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নও। ১৯ মে (বুধবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছিলো বিক্ষোভ সমাবেশ। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন দিক নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন ।

আমার বক্তব্যে আমি বলেছি, ফ্যাসিবাদ পীড়িত এই দুঃসময়ে, বিশেষ প্রজাতির ভাত ঘুম ও শীত ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলো দেশের সাংবাদিক সমাজের বিরাট অংশ। অন্য অংশ ব্যস্ত ছিলো ক্ষমতা ও অর্থবানদের কদমলেহনে। ফলে মাহমুদুর রহমানের উপর যখন চালানো হ্য় ভয়াবহ দমন পীড়ন তখন তা উপলব্ধি করার সময় তারা পাননি। আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভিসহ শত শত মিডিয়াকে গলাটিপে হত্যা করলেও তারা প্রতিবাদ করার গরজ বোধ করেননি। দৈনিক সংগ্রামের উপর চালানো টর্ণেডোকে তারা উপভোগ করেছেন।

দেশের প্রবীণতম সম্পাদক শফিক রেহমান, আবুল আসাদ, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, ড. কনক সরোয়ার, আবদুস সালাম, ইলি্য়াস হোসেন, শাহাদত হোসেন, অলিউল্লাহ নোমান, শহিদুল কাজলের কষ্ট তাদের কর্ণকূহরে প্রবিষ্ট হয়নি। সাগর রুণির রক্তের উপর পা রেখে তারা ক্ষমতার স্বাদ নিতে লজ্জা পাননি। কত পরিবার যে বিচার না পাওয়ার তান্ডবে ভেসে গেছে তার খবরও তারা নেননি।

সরকার, মন্ত্রী, এমপি, নেতা, পাতি নেতা, সিকি নেতা, ক্যাডার, আমলা, পুঁটি আমলা, নানান রঙের লীগারদের ঘুষ, দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, শেয়ার বাজার লুন্ঠন, অর্থ পাচার, হত্যা, ধর্ষণ তারা দেখেও দেখেননি। তারাই বসুন্ধরার আনভীরের মধ্যে দেখতে পান কলিকালের হাজী মহসিনের আত্মা। আমাদের গণমাধ্যম শরম না পেলেও, দেশের মানুষ সাংবাদিকতার হতদরিদ্র দশা দেখে, মেরুদন্ডহীনতা দেখে হতবাক হয়েছেন। অধোঃবদন হয়েছেন। সাংবাদিক সমাজের অনৈক্য তাদের ব্যথিত করেছে।

এ রকম দুর্গত অবস্থার মধ্যে সামনে চলে এসেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রেখে নির্যাতন, গ্রেফতার ও কুৎসিত মামলা দায়েরের ঘটনা । রোজিনা যেন পুরো সাংবাদিক সমাজের অস্তিত্বের ভিত্তি ভূমিকে নাড়িয়ে দিয়েছেন। রোজিনার যন্ত্রনাকিষ্ট চোখের পানিতে যেন ফুটে উঠেছে গণমাধ্যমের ভবিষ্যত। সঙ্গত কারণেই তারা আজ ফুঁসে উঠেছেন। রোজিনা আমাদের হৃৎগৌরব পুনরুদ্ধার করার একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন।

কিন্তু গণমাধ্যম কর্মীদের ভাত ঘুম, শীত ঘুম ভাঙ্গিয়ে তাদের ইজ্জত সচেতন করেছেন যিনি, তিনি হলেন জেবুন্নিসা নামের ওই নোংরা আমলা। সম্রাট আওরঙ্গজেবের মহিয়সী কন্যার নামকে তিনি অপবিত্র করেছেন বটে কিন্তু তার অপকর্মের কারণেই তো আজ আমরা প্রতিবাদে স্লোগানে পাশাপাশি দাঁড়াতে পেরেছি। তবে জেবুন্নিসা কিন্তু সাপের মাথা নয়।সংঘবদ্ধ দুরাচারীদের সম্মুখ ভাগ মাত্র। তার বিচার আমরা চাই কিন্তু তার চেয়েও বেশি কিছু বলার সময় এখন।

এই জেবুন্নিসা মার্কা শত শত হাজার হাজার দুর্বৃত্তদের লালনকারী পালনকারীদের খূঁজে বের করা অনেক বেশি জরুরী এখন। ধরা ছোঁয়ার অনেক উর্ধ্বে থাকা মূল পাওয়ার হাউসকে জনগণের আদালতে সোপর্দ করার কাজে হাত দিতে হবে আমাদের। পরিষ্কার ভাষায় উচ্চারণ করতে হবে, কে দেশকে দুর্নীতি, অনিয়ম, অআইন, গুম, খুন, ধর্ষণ, লুন্ঠনে সয়লাব করে দিয়েছে। কে বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষা, নির্বাচন ব্যবস্থা, শিষ্টাচার, নীতি-নৈতিকতাকে ধ্বংস করেছে। কে নির্বাসনে পাঠিয়েছে গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। কে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে করেছে অরক্ষিত। — তারপর এগুতে হবে ‘এক দফা এক দাবী’র সহজ, সরল ও সবল পথে।

তাহলেই বাঁচবে দেশ। ফিরে আসবে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র। আইনের শাসন। আর গণমাধ্যম আবার মুক্ত আকাশের নিচে বুক ভরে নিতে পারবে স্বাস্থ্যসম্মত বাতাস । — তবে মনে রাখতে হবে, সিসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্য এবং ব্যাপক জনসম্পৃক্তি ছাড়া চূড়ান্ত বিজয় সম্ভব নয়।

(লেখক : কবি ও সাংবাদিক নেতা
লেখাটি লেখকের অনুমতিক্রমে তার ফেসবুক আইডি থেকে নেয়া।)

 

আলোকিত প্রতিদিন/জেডএন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here