আইনী জটিলতা কাটিয়ে উচ্ছেদ হচ্ছে বরগুনার ভারানি খালের অবৈধ দখল

0
321

প্রতিনিধি, বরগুনা:
অবশেষে যৌবন ফিরে পেতে যাচ্ছে বরগুনা ভাড়ানি খাল। দীর্ঘ আন্দোলন ও আইনি জটিলতার অবসান ঘটিয়ে বরগুনার ভারানি খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে বরগুনা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের সহযোগিতায় সকালে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামিয়া শারমির নেতৃত্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় ভাড়ানি খালের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। রবিবার (২৩ মে) সকালে ভারানি খালের পশ্চিম পাশের খালের পাড়ের ৭৩টি পাকা ও আধাপাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল আদালতে নির্দেশে এ খালের পূর্ব পাশের অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বরগুনা শহরের খাকদোন নদী থেকে পায়রা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালটি স্থানীয়ভাবে ভাড়ানি খাল নামেই পরিচিত। বরগুনা জেলা শহরের প্রধান বাজারের মধ্যদিয়ে বয়ে চলা এই খালটির দু’পাড়ে দীর্ঘ বছর ধরে দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। এর ফলে খালটি সংকুচিত হতে হতে একসময় নাব্যতা হারায়। অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্যের কারণে এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় নৌযোগাযোগ। ২০১৮ সালে খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। মামলা দায়েরের পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ভাড়ানি খালের দুই পাড়ের দু’কিলোমিটার অবৈধ দখল উচ্ছেদের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর বরগুনা জেলা প্রশাসন খাল দখলমুক্ত করার জন্য অভিযান শুরু করা হয়। গত ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার এ আপিল খারিজ করে দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ। এর প্রেক্ষিতে আজ রবিবার এ খাল দখলমুক্ত করার জন্য উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বরগুনা জেলা প্রশাসন। এই বিষয়ে বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ জহিরুল হাসান বাদশা বলেন, ভারানি খালটি একসময় খরস্রোতা ও ব্যস্ততাপূর্ণ একটি খাল ছিল। এই খাল দিয়ে পণ্য এবং যাত্রীবাহী নৌযান এর গন্তব্য ছিল পঁচাকোড়ালিয়া, বগি, তালতলী, চালিতাতলী, জেলখানা, বালিয়াতলীসহ বিভিন্ন এলাকায়। দখলদারদের কবলে পড়ে খালটি এখন একেবারে চলাচল অনুপযোগী। এ খালে এখন পানির প্রবাহ নেই বললেই চলে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আজ স্বার্থক হয়েছে। খালটি দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এর বরগুনার শাখার সভাপতি মুশফিক আরিফ বলেন, ভারানি খাল দখলমুক্ত করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমরা বিভিন্ন মানুষের দ্বারস্থ হয়েছি। সবশেষ আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। তাই আমরা আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, অবৈধ দখলদাররা একটি খাল মেরে ফেলেছিল। আজ থেকে সেই খাল প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে। এটাই আমাদের বড় প্রাপ্তি। বরগুনার দখল হওয়া সকল খাল একই পদ্ধতিতে দখলমুক্ত করা হবে বলেও তিনি জানান। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম বলেন, দখল হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ বছর ধরে এ খালের খননকাজ বন্ধ ছিল। আমরা দ্রুতই এ খালের খনন কাজ সম্পন্ন করব এবং এ জন্য সকল প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়েছে। বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, আদালতের কারণে এতদিন এ খালে উচ্ছেদ অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। যেহেতু এখন এ খালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে আদালতের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। এই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করার আর কোন সুযোগ নেই। তাই যারা এই খাল দখলমুক্ত করার জন্য আন্দোলন করেছেন, বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তাদের আর শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারন নেই। এই উচ্ছেদ অভিযান সম্পন্ন হলে ভাড়ানি খালের কোন পাড়ে আর কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকবে না।

আলোকিত প্রতিদিন / ২৩ মে, ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here