নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাভারের আশুলিয়ায় ভুল বুঝিয়ে সাড়ে সাত মাসের অন্তঃসত্বা নারীর প্রসব করিয়ে নবজাতক বিক্রির দায়ে ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছেন পুলিশ। সোমবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক। এর আগে রোববার আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার নিউ মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বিভিন্ন স্থানে রাতভর অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয় এবং সেই সাথে নবজাতক শিশুটিকে সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার খোসগড় গ্রামের আব্দুল আজিজ খানের ছেলে ক্লিনিকের চিকিৎসক মোস্তফা কামাল (৩৯), টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার হাতরুড়া গ্রামের আব্দুল হামিদ মাস্টারের ছেলে আবু হানিফ (৪০), নওগাঁ জেলার মান্দা থানার বৈলশিং গ্রামের মৃত কুতুবউদ্দিন প্রামানিকের ছেলে হানিফ বিন কুতুব (৪২), শরিয়তপুর জেলার সখিপুর থানার কাঁচিকাটা গ্রামের জালাল উদ্দীনের ছেলে মোহাম্মদ সুমন মিয়া (২৯), এছাড়া নবজাতক ক্রয়ের দায়ে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাহপাড়া থানার নতুন দাতপুর গ্রামের মৃত বরাত আলীর ছেলে অয়েজুলকে গ্রেফতার করা হয়। ভুক্তভোগী দম্পতি হলেন- রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার সূর্যপাড়া গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে মো. আবুল কালাম আজাদ (২৮) ও তার স্ত্রী শিখা বেগম (২৬)। নবজাতকের পিতা আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ১৭ মে আমার স্ত্রীর পেটে অনেক ব্যথা হয়। আমি ওই ক্লিনিকে গেলে ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রামের পরামর্শ দেন। তাদের কথামত আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হলে রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেন, নবজাতক উল্টো হয়ে আছে মা ও শিশুর জীবন সঙ্কটাপন্ন, দ্রুত প্রসব করাতে হবে। ভুক্তভোগী ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কথায় রাজি হলে তাদের এক নারীকর্মী এসে পার্শ্ববর্তী ঘোষবাগ এলাকার একটি বাড়িতে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যায়। পরে সেই বাড়িতে তার ডেলিভারি হয় এবং একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন শিখা। এরপরে ডাক্তার এসে বলেন, আপনাদের মেয়ে খুব বেশি হলে ৩ দিন বাঁচতে পারে। ১৫ দিন বাঁচাতেও অনেক টাকার দরকার। এসব ভুল বুঝিয়ে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে মেয়েকে নিয়ে যায়। পরে সন্তান ফেরত চাইলে তারা ৫৫ হাজার টাকা দাবি করেন। নবজাতকের মা শিখা খাতুন বলেন, আমি গার্মেন্টসে হেলপার হিসাবে কাজ করি। আমি তো অতো কিছু বুঝি না। উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে ওই ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার মিলে আমার মেয়েকে সিরাজগঞ্জে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। পরে থানায় খবর দিলে আমার সন্তানকে ফিরিয়ে আনে পুলিশ। আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক জানান, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমি, এসআই সুদীপ কুমার গোপ, এসআই আসওয়াদুর রহমান ও এএসআই পবিত্র কুমার মালাকার ওই ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করি। সেখানে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িত উপস্থিত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রাতভর অভিযান পরিচালনা করে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে নবজাতককে উদ্ধার করে তার প্রকৃত মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করে আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন / ২৫ মে, ২০২১/ দ ম দ