ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে লণ্ডভণ্ড সাতক্ষীরার ২৪ ইউনিয়ন

0
377
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভাঙলো বাঁধ, ডুবলো সাতক্ষীরার উপকূল (ভেসে গেছে ৫ হাজার মাছের ঘের, আস্ত নেই প্লাবিত এলাকার একটি রাস্তাও, ডুবেছে বাড়িঘর, সুপেয় পানির পুকুরে নোনাপানি, পানিবন্ধি ২০ গ্রামের মানুষ)। জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে জেলার শ্যামনগরে ১২টি, আশাশুনির ৫টি, দেবহাটার ২টি, কালিগঞ্জের ৩টি, সদরের ১টি ও তালা উপজেলার ১টি ইউনিয়নের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নের রাস্তাগুলো ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। প্লাবিত এলাকার একটি রাস্তাও আস্ত নেই। এছাড়া শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় মাছের ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপকূল রক্ষা বাঁধ ভেঙে এবং নদীর জোয়ারের পানি উপচে ভেসে গেছে প্রায় ৫ হাজার মাছের ঘের। এতে সর্বশান্ত হয়েছেন মাছচাষিরা। এছাড়া জেলাব্যাপী প্লাবিত হয়েছে ৭০টির বেশি গ্রাম। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবের পর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করছে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর, কৃষি অধিদপ্তর, ত্রাণ অফিসসহ অন্যন্যা দপ্তরগুলো। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সাতক্ষীরা শ্যামনগরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে আড়াই হাজার মাছের ঘের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ সময়ে উপজেলার ১২টা ইউনিয়নে ৪ হাজার ৮শত কাঁচা ও আধা পাকা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিস থেকে জানা গেছে। শ্যামনগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি মজুমদার জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় বিভিন্ন নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭/৮ ফুট বৃদ্ধি পায়। এতে উপকূল রক্ষিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেঁড়িবাধ ভেঙে ও উপচিয়ে লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এ সমেয় ১২ টি ইউনিয়নের বিশেষ করে উপকূলীয় গাবুর, পদ্মপুকুর, মুন্সিগঞ্জ, কৈখালী, ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আড়াই হাজার মৎস্য ঘের সম্পূর্ণ তলিয়ে একাকার হয়ে যায়। এতে ৫ কোটি টাকার চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ পানিতে ভেসে যায়। অপরদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহিনুর ইসলাম জানান, ঝড়ো হাওয়ায় ১২টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৮ শত কাঁচা ও আধা পাকা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তার মধ্যে ২৬৫টি কাচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধস্ত হয় এবং ৪হাজার ৫শত কাচা ও আধা পাকা ঘরবাড়ি আংশিক বিধস্ত হয়। ৫০ হাজার ৮শত মানুষ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাতক্ষীরা সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এম এ হাসান বলেন, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় ৫টি বন স্টেশন অফিস ও ১২টি টহল ফাঁড়িতে নির্মিত মিষ্টি পানির পুকুর নোনা পানিতে তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম আবুজার গিফারী বলেন, ১২টি ইউনিয়নে নগদ আড়াই লক্ষ টাকা এবং ১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সরকারী সাহায্যে অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, উপকূলীয় বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে ভাটার সময় পানি সরে যাচ্ছে এবং জোয়ারের সময় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি আছে। এদিকে, জেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, জেলার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আশাশুনি সদর, বড়দল ও খাজরা ইউনিয়নের ১৪৫০ হেক্টর জমির ২ হাজার ৫৬০টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় বাঁধ উপচে ও বাঁধ ভেঙে প্রায় ৫ হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি টাকা। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, আম্পানের চেয়েও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। বর্তমানে ঘেরের মাছগুলো সব বিক্রির উপযোগী হয়েছিল। যে কারণে চাষিদের ক্ষতি বেশি হয়েছে। আশাশুনিতে ক্ষতির পরিমাণ কম হওয়ার কারণ হচ্ছে, সেখানে অনেক ঘের শুকনো ছিল। পানি-সংকটের কারণে চাষিরা আগেই মাছ ধরে নিয়েছিল। বাঁধ ভেঙে মাছের ঘের ভেসে যাওয়া ছাড়া জেলার কোথাও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবে উপকূলীয় বাঁধ ভেঙে এবং পানি উপচে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। আশাশুনি উপজেলার নয়টি, কালিগঞ্জ উপজেলার ঘোজাডাঙ্গা, কালিগঞ্জ সদর, বাজারগ্রাম, নাজিমগঞ্জ, বসন্তপুর, হাড়দ্দহ গ্রাম, দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর, ভাতসালা, চর শ্রীপুর, টাউন শ্রীপুর, সুশিলগাতি, বসন্তপুর, নাংলা ও সখিপুর গ্রাম, শ্যামনগর উপজেলার ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মোট ৭০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী জানান, উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কোথাও ঘরবাড়ি ভেঙে প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, সব মিলিয়ে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের তালিকা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে এটি জানানো হবে।
আলোকিত প্রতিদিন / সা হা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here