করোনাকালেও থেমে নেই রাজশাহী চিড়িয়াখানার উন্নয়নের কাজ

0
313
প্রতিনিধি, রাজশাহী:
উন্নয়নের শহর এখন রাজশাহী। একদিকে যেমন বাহারি ফুলে ফুলে শোভা ছড়াচ্ছে রাস্তার লেনগুলো। অন্যদিকে শিল্পীর হাতের তুলিতে রঙ্গিন হয়ে উঠেছে পুরো নগরীর চিত্র। এছাড়াও আধুনিক সড়ক বাতির কল্যাণে রাতে ঝকঝকে আলোর ছড়াছড়ি নগরীর মোড়গুলোতে। সেই সাথে হরেকরকম আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বদলে যাচ্ছে এ বিভাগীয় শহরটি। আর এসব উন্নয়নের চিত্র স্বচোক্ষে দেখতে প্রতিনিয়তই আসছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। নগরীতে পদ্মার পাড়, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান জাতীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, বরেন্দ্র জাদুঘর, জিয়া শিশু পার্কসহ বেশ কিছু বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে। আর এসব বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে প্রতি বছর ঘুরতে আসে নগরবাসীসহ দূর-দূরান্তের বিনোদনপ্রেমি সব মানুষ। তাই নগর উন্নয়নের পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নে এরই মধ্যে বিভিন্ন দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। যার মধ্যে অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান জাতীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা এবং করোনা মহামারির মাঝেও শুরু হয়েছে এর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, “শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার উন্নয়ন প্রকল্প” বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২ কোটি ১২ লক্ষ টাকা ব্যায়ে মাটি ফেলে এর ল্যান্ড ডেভেলপিংয়ের কাজ চলছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ওয়াচ টাওয়ার, পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে কেবল কারসহ আরোও অনেক আধুনিকায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বাকি কাজগুলোর বাজেট এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। রাসিক মেয়র এটা নিয়ে আরোও আধুনিক কিছু ভাবছেন। চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, যদিও করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ৪ এপ্রিল থেকে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান জাতীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবু্ও এই বন্ধের মাঝেও এগিয়ে চলছে এর ল্যান্ড ডেভেলপিং এর কাজ। চিড়িয়াখানার বাইরের মূল সড়ক হতে এর ল্যান্ড ২.৫ ফিট উঁচু করা হবে বলে জানা গেছে। তাই এখন চলছে মাটি ভরাটের কাজ। এরপর এক এক করে এর পুরো অবকাঠামোতে আনা হবে পরিবর্তন। সংযোজন করা হবে অত্যাধুনিক অনেক কিছুই। তবে এতে যে লেকটি রয়েছে তা কেবল সংস্করণ করা হবে এ দিকে দীর্ঘদিন ধরে চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকায় এবং ভেতরে বাইরের মানুষের পদচারণা না থাকায় এর সকল পশু-পাখির মাঝে তৈরি হয়েছে এক নিবিড় মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। একই সাথে বেড়েছে প্রজনন অনুকূল পরিবেশ তাই বন্ধের মাঝেই জন্ম নিয়েছে ১৪টি হরিণ শাবকসহ আরও অনেক পশু-পাখি। এতে করে বাড়ছে চিড়িয়াখানার সৌন্দর্য ও সম্পদ। এবং তাদের নিবিড় পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে পরিচর্যা কর্মীরা। তবে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বর্তমানে যেসব প্রাণী নেই যেমন- বাঘ, সিংহ, ভাল্লুকের মত অন্যান্য সব প্রাণীও খুব শীঘ্রই চিড়িয়াখানায় আনা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়াও চিড়িয়াখানায় রয়েছে বিভিন্ন ফলজ ও ফুলের গাছ যা চিড়িয়াখানার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে যুক্ত করেছে বাড়তি মাত্রা। এখানে রয়েছে বিরল প্রজাতির বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছ। যা নিয়ে চিড়িয়াখানার ভেতরে রয়েছে একটি নার্সারি অংশ। মূলত এখান থেকেই পুরো নগরীতে রোপনের জন্য পাঠানো হয় গাছের চারা। অন্যদিকে এর ভেতরের পরিবেশ নিয়ে ইতিপূর্বের যেসব অভিযোগ রয়েছে তা কঠোরভাবে পরিচালনার মাধ্যমে সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানার উন্নয়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে (এডিসি) পিএস আলমগীর কবির বলেন, উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিনবঙ্গের মধ্যে খুব শীঘ্রই একটি আধুনিক ও মানসম্মত বিনোদনকেন্দ্রে রুপান্তরিত হবে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা। একইসাথে রাজশাহীবাসীর জন্য এটি সুনাম বয়ে আনবে। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের প্রচেষ্টায় ৩২ দশমিক ৭৬ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় এই উদ্যান। ১৯৯৬ সালে উদ্যানটি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) আওতায় দেয়া হয়। তারপর থেকেই চিড়িয়াখানাটির রক্ষণাবেক্ষণে নিজস্ব বরাদ্দ থেকে ব্যয় করে আসছে সিটি কর্পোরেশন। এই উদ্যানে মূল্যবান গাছের চারা রোপণ, ফুল গাছের কোয়ারি ও কুঞ্জ তৈরি, লেক ও পুকুর খনন, কৃত্রিম পাহাড় তৈরি অর্থাৎ সামগ্রিক কাজ শুরু হয়।
আলোকিত প্রতিদিন/৩০ মে, ২০২১/ দ ম দ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here