নিজস্ব প্রতিবেদক: খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি এই ৩ পার্বত্যাঞ্চলেই এখন মানুষের পাশে এসে দাড়িয়েছে সেনাবাহিনী। তারা এসব অঞ্চলে অসুস্থ মানুষকে সহায়তা দিচ্ছে। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে গড়ে তুলছে স্কুল কলেজ। মানুষের পানির ব্যবস্থা করে দেওয়া ছাড়াও সব ধরণের অপরাধ দমনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। পাহাড়ের মানুষরা জানান, সেনাবাহিনীর এসব ইতিবাচক ভূমিকা সুন্দর সম্প্রীতি গড়তে আগামি দিনে বড় ভূমিকা রাখবে। বন্ধন সুদূঢ় করবে সবার। সর্বশেষ বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ৫ নম্বর কুরতকপাতা ইউনিয়নের মাংরতম পাড়া, ম্যানলিউপাড়া এবং সমথং পাড়ায় গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক আকারে কলেরার প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে। বর্তমানে এসব পাড়াসমূহে মুরং জনগোষ্ঠীর শতকরা প্রায় ষাট ভাগ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মূমুর্ষ অবস্থায় জীবন-যাপন করছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কলেরা প্রাদূর্ভাবের শুরু থেকেই আলীকদম সেনা জোনের টহল দলের মাধ্যমে আক্রান্ত পাড়াগুলোতে নিয়মিতভাবে বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ঔষধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এছাড়া গত ১৪ জুন এসব এলাকায় সামরিক ও বেসামরিক চিকিৎসক দল পাঠানো হয় এবং একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়।
এলাকার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়াতে জনসাধারণের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের আওতাধীন সদর দপ্তর ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের উদ্যোগে ১৬ জুন জিএসও-২ (ইন্ট)-এর নেতৃত্বে আবারো ওই দূর্গম এলাকায় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে জরুরী স্বাস্থ্যপরিস্থিতি মোকাবেলায় বিপুল সংখ্যক জীবনরক্ষাকারী ঔষধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, কলেরা স্যালাইন, খাবার স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য ঔষধ এবং শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও দূর্গত এলাকা থেকে তিন জন মুমূর্ষ রোগী- রেং অং ম্রো (১১), মাংলাই ম্রো (৫) ওয়াই চাদ ম্রো (৫৫)-কে হেলিকপ্টার যোগে বান্দরবান সেনানিবাসস্থ হেলিপ্যাড এ নিয়ে আসা হয় এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এখানেই শেষ নয়, খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায় ৫টি পাহাড়ি গ্রামে বিশুদ্ধ পানি সংকট দেওয়ায় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে সুপেয় পানি বিতরণ করে তারা মানুষকে সহযোগিতা করেছে। দীঘিনালা জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তৌহিদুল ইসলাম জানান, শুষ্ক মৌসুম এলেই দীঘিনালা উপজেলার, রিজার্ভ ছড়া, জোড়াছড়া ব্রিজ, নয়মাইল, সীমানা পাডা গ্রামের পানির স্তর নিচে নেমে গেলে ছড়া ঝিরি, ঝরণা শুকিয়ে গেছে। ফলে এসব গ্রামে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এসব গ্রামের পানির কষ্ট দূর করতে গত শনিবার থেকে সুপেয় পানি বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দীঘিনালা জোনের সেনাবাহিনী। সুপেয় পানির ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত সেনাবাহিনীর উদ্যোগে এ সব গ্রামের বিতরণ অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
জোড়াব্রীজ এলাকায় পানি নিতে আসা চিজিবি চাকমা (২৮) জানান, শুষ্ক মৌসুমে এ এলাকায় পানি পাওয়া যায় না। ঝিরি ঝরণাগুলিও শুকিয়ে যায়। অনেক কষ্ট করে দূর থেকে পানি আনতে হতো। এখন সুবিধা হলো। কবাখালী ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার অমিয় কান্তি চাকমা জানান, এ এলাকায় সুপেয় পানির হাহাকার পড়েছিলো। কোথাও খাওয়ার নিরাপদ পানি ছিলো না। সেনাবাহিনীর উদ্যোগে নিরাপদ পানি পেয়ে খুব ভালো লাগছে।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২১ জুন, ২০২১/ এম এইচ সি