মানিকগঞ্জের ঘিওর বাজার ও প্রধান সড়কগুলির বেহালদশা: ভোগান্তিতে এলাকাবাসী

0
611

সৈয়দ এনামুল হুদা:

মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাট- বাজার এবং প্রধান সড়কগুলির বেহালদশা।

অল্প বৃষ্টিতেই বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এছাড়াও বাজারের প্রধান- প্রধান সড়কগুলো খানাখন্ডে ও যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধে বাজারের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে পরেছে।

এ হাট থেকে লাখ- লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করা হলেও বাজারের সমস্ত অলিগলিতে পানি জমে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী।

নানামুখী সমস্যা আর অব্যস্থাপনার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাট বাজারের পরিবেশ। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে।

ঘিওর পুরাতন গরু হাট, মোহাম্মদ আলী সড়ক, বাসষ্ট্যান্ড, মাছ বাজার, ঘিওর বেপারী পাড়া সড়ক ও কফিলউদ্দিন দরজী সড়কে কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতেই কাঁদা জমে চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। এছাড়াও পুরাতন গরুহাটা মমিন বেপারীর দোকানের সামনে, পুরাতন কাপড় হাট, মাছ বাজারের সামনে, বাস টার্মিনালে, ভূমি অফিসের সামনে এবং ঘিওর বাজার সংলগ্ন বেপারী পাড়া সড়কে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করায় এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

জলাবদ্ধতার কারণে মশা, মাছির উপদ্রব বেড়ে গেছে।

লাখ-লাখ টাকার রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি হাট বাজার থেকে নিয়োমিত ট্যাক্স, পাহারার চাঁদা, সুইপার ট্যাক্স আদায় করা হলেও ময়লা আবর্জনা ফেলার কোনো ডাস্টবিন ও গণ শৌচাগার নেই। কয়েকটি নলকুপ থাকলেও এগুলি থেকে পানি পান করা নিরাপদ নয়।

১৯৯৬-৯৭ সালের প্রথম দিকে অধিকাংশ রাস্তাগুলো ইটের সোলিং করা হয়। বর্তমানে সেগুলোর বিভিন্ন স্থানের ইট উঠে খানাখন্ডে পরিণত হওয়ায় যানবাহন চলাচল করা কঠিন হয়ে পরেছে। বাজারের অধিকাংশ বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বাতি নেই। যার দরুন বাজারের ব্যবসায়ীসহ হাজার-হাজার লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

 

সরেজমিন ঘিওর বাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বাজারের সমস্ত অলিগলিতে ময়লা আর্বজনায় ভরাট হয়ে গেছে। পুরাতন গরুহাট বাঁশপট্রি, মাছবাজার, চাউল বাজার ও কসাইখানাটি নোংরা আর্বজনার গন্ধে ব্যবসায়ীরা ঠিকমত দোকান পরিচালনা করতে পারছেনা। মশা, মাছির উৎপাতে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পরেছে। কুস্তা গরু হাট সংলগ্ন ইছামতী শাখা নদীর পাশে প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে গরু, মহিশ, ছাগল জবাইয়ের জন্য দুটি শেড নির্মাণ করা হয়। যার মধ্যে ধলেশ্বরী নদীর ভাঙ্গনে আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এবং শুষ্ঠু তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে শেডদুটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে। এখানকার শেডের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে, চান্দিনা ভিটি বন্দোবস্তে দেবার কারণে বাজারের আয়াতন কমে গেছে। অনেক নিয়মকানুন অমান্য করে পাকা স্থাপনা তৈরি করে অন্য লোকের কাছে ভাড়া দিচ্ছে। এলাকার বিশিষ্টজনরা চান্দিনা ভিটি বরাদ্দ বাতিলের জোর দাবি করেছেন।

অপরদিকে, পুরাতন গরুহাটের বাঁশপট্রিতে কসাইখানা ও মাছবাজার বসার জন্য ১৯৯৮-৯৯ সালে প্রায় ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২টি টিনশেড ঘড় নির্মাণ করা হয়। এগুলো ব্যবহার না করায় এলাকার একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছে।

মধ্য বাজার থেকে মাছবাজার ও কসাইখানাটি দীর্ঘদিনেও সরানো হয়নি। যত্রতত্র গরু, ছাগল, খাসি জবাই করায় বাজারের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম আলোকিত প্রতিদিনকে বলেন, আমি এই উপজেলায় নতুন সবে মাত্র যোগদান করেছি। তবে আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি আসলেই ঘিওর বাজার এবং বেপারি পাড়া সহ বেশ কিছু স্থানে জলাবদ্ধতা এবং খানাখন্ডের কারণে রাস্তার বেহাল অবস্থার আকার ধারণ করেছে। আজকে উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয় মিটিং রয়েছে সেখানে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচলা করে এর একটি সমাধান বের করবো।

ঘিওর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম মিন্টু বলেন, বিষয়টি আমিও লক্ষ করেছি। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাট আজকে চলাচলের অযোগ্য হয়েছে পড়েছে। আমি এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ এবং ঘিওর বাজার কমিটির কর্মকর্তাদের বলবো আপনারা অতিতাড়াতাড়ি এই সমস্যাগুলির সমাধান করে এলাকার মানুষের দূর্ভোগ দূর করেন।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘিওর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, আমি নিজেও সরেজমিন গিয়ে দেখেছি ঘিওর বাজার সহ প্রধান সড়কগুলির বেহালদশা। আসলে বাজারে কাজের জন্য আমরা ৫% বরাদ্দ পাই। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম যার মধ্যে থেক আগেই অনেকটা কাজ করে বরাদ্দ শেষ হয়েছে।

তবে তিনি জানান, ২ বছর পূর্বে ঘিওর বাজারের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর “গ্রাম হবে শহর” এই প্রজেক্টের আওতায় প্রায় ৬ কোটি টাকার নন–মিনিসিবল প্রজেক্ট পাশ হয়। এর মধ্যে দেড় কিলোমিটার ড্রেনেজ সহ আরসিসি ঢালাই রাস্তা এবং দুটি পাইপ ভ্যান কালভার্ট ও দুটি ল্যাট্রিন এর কাজ অনুমোদন হয়। দুর্ভাগ্যবশত টেন্ডার না হওয়ায় সে কাজ এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ তিনি বলেন, আজকে উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয় মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। আশাকরি খুব শিগ্রই ট্রেন্ডার হয়ে ঘিওর বাজারের সমস্যাগুলির সমাধান করা হবে।

এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার মোঃ সাজ্জাকুর রহমান আলোকিত প্রতিদিনকে জানান, ঘিওরের বেপারি পাড়ার রাস্তার কাজের ট্রেন্ডার হয়েছে অচিরেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করবে।

বাজারের সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর “গ্রাম হবে শহর” এর আওতায় নন মিনিসেবল যেই প্রজেক্ট পাশ হয়েছে এর মধ্যে দেড় কিলোমিটার আরসিসি রাস্তার কাজের বেশিরভাগ অংশের সমাপ্তি হয়েছে।

ছাড়া ইন্টারনাল রোড ও ড্রেন এর কাজের প্রক্রিয়া চলমান আগামী মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। তবে দুটি ল্যাকটিন এর জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশাকরি খুব শিগ্রই এটিও পাশ হয়ে যাবে

পাইপ ভ্যান কালভার্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, এই কাজ এই প্রজেক্টের আওতায় নয়।

 

ঘিওর বাজার কমিটির সভাপতি হামিদুর রহমান আলাই বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে আমরাও দেখেছি দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী হাটের আজকে বেহালদশা এ ব্যাপারে আমি প্রশাসনসহ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

আলোকিত প্রতিদিন/২১ জুন-২১/এসএএইচ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here