ক্রাইম রিপোর্টার:
কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ ইউনিয়নের কোকালী গ্রামের ওমান প্রবাসী আবদুল মতিন (খোকন) এর দশম শ্রেণীর এক স্কুল পড়ুয়া মেয়ে ফাতেমা আক্তার সেতু (১৬), কে অপহরণের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে একই গ্রামের দুই বখাটে যুবক আনু মিয়ার ছেলে মোঃ রনি (২১) ও মোঃ নুর মিয়ার ছেলে মোঃ রুবেল (২৭) এর বিরুদ্ধে। ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায় যে, গত ৯জুন বুধবার বেলা অনুমান ১২ ঘটিকায় বক্সগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা আক্তার সেতু (১৬) সাপ্তাহিক এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে বিদ্যালয়ে যান,ফেরার পথে বিদ্যালয়ের গেইটের সামনে পূর্ব থেকে উৎ পেতে থাকা অভিযুক্ত দুই যুবকের সিএনজিতে করে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু সিএনজি গাড়িটি সেতুর বাসায় অর্থাৎ নির্দিষ্ট স্থানে না থামিয়ে জোরে অতিক্রম করলে ফাতেমা অপহরণ হচ্ছে মনে করে চিৎকার দিতে থাকে এবং এক পর্যায়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয়ে সিএনজি থেকে লাফিয়ে পড়ে অপহরণের কবল থেকে রক্ষা পায়। পরে আশে পাশের কয়েক জন লোক এগিয়ে এলে দুই যুবক পালিয়ে যেতে চেষ্টা করলে মটর সাইকেল নিয়ে পেছন থেকে ধাওয়া করে মলংচর মোড় এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। পরে উভয়ের বাসা একই গ্রামে হওয়াই তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ভুক্তভোগীর অভিভাবকেরা ঘটনাস্থল থেকে সেতুকে বাড়িতে নিয়ে যায়। এবং সিএনজি থেকে লাফ দেয়ার কারণে কিছুটা আহত হয় বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রনি (২১) এর বাবা মোঃ আনু মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এটা কয়েক দিন আগের কথা, ঘটনার দিন রফিক মেম্বারসহ এলাকার অনেকে বসে আমাকে ধমকিয়েছে। আমি আমার পোলাকে শাসন করেছি, পোলা বলেছে আর এগুলোতে যাবে না। অভিযোগ এর ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, অভিযোগ করলে করুক তারা, আইন অনুযায়ী বিচার হলে হবে সমস্যা কী! ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে তাৎক্ষণিক ভোক্তভোগীর বাসার একটি রুমে বসেন স্থানীয় ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার রফিক,মীর আহমেদ,সামছুল হক,ছায়েদুল হক,নুরুল ইসলাম,ওমর ফারুক,নুরুল আমিন,আব্দুর রব,জহির,কামরুলসহ অন্তত বিশ জনের মতো স্বাক্ষরিত এটি কাগজ অনুসন্ধানী টিমের হাতে আসে। এ ব্যাপারে স্থানীয় মেম্বার রফিক এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, অপহরণের ঘটনাটি সত্য।অভিযোক্ত দুই জন একে অপরের চাচাতো ভাই।আমরা সবাই মিলে ঘটনার তাৎক্ষণিক ভোক্তভোগীর বাসায় বসেছিলাম তবে সমাধানের উদ্দেশে নয়, অন্যায়ের প্রতিবাদ হিসেবে। সরে জমিনে গিয়ে জানা যায় অভিযুক্ত রনি এবং রুবেল মাদকদ্রব্যের সাথে সংযুক্ত বলে জানা যায়। সমাজের খারাপ, দুষ্টু প্রকৃতির লোকদের দশজনের একজন হলেন তারা অন্যদিকে ঘটনার যথাযথ প্রতিকার না পেয়ে ঘটনার তৃতীয় দিনে ভুক্তভোগীর পরিবার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ফাতেমা আক্তার সেতু (১৬) কে অন্যত্রে বিয়ে দেন রাতের আধারে। ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ ১০ই জুন সেতুর মা আয়েশা আক্তার লিপি,দাদা আবুল খায়ের, চাচা আব্দুর রহমান পলাশ,বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মনোয়ারা আক্তার পাখি ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির কয়েক জন সদস্যসহ থানায় উপস্থিত হয়ে সদ্য যোগদানকারী অফিসার ইনচার্জ আ স ম আবদুর নুর বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন। তিনি তাৎক্ষণিক অভিযোগের আইও হিসেবে সাব-ইন্সপেক্টর মোঃ মফিজুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যথাসময়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংঘটিত ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পান। তদন্তের একদিন পর অর্থাৎ ১২ জুন ভিকটিম ও স্বাক্ষীদের নিয়ে অভিযোগকারীকে থানায় হাজিরের নির্দেশ দিলে অভিযোগকারী যথাসময়ে হাজির হন। সারাদিন বসে থাকার পর থানার ওসি আ স ম আব্দুর নুর তাদেরকে বলেন,আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে। আসামি গ্রেফতার হবার পর মামলা এফআইআর হবে। আপনারা চলে যান। এ ব্যাপারে ওসি আ স ম আব্দুর নুর এর সাথে গত ২০শে জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি আমরা,তদন্ত করেছি, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঘটনা সত্য কি না বা ঘটনার দশ দিনেও এফআইআর হয়েছে কী না জানতে চাইলে অনুসন্ধানী টিমকে তিনি বলেন, ঘটনাটি অপহরণ হয়েছে। কিন্তু অভিযোগকারীরা অপহরণের চেষ্টা উল্লেখ করেছেন এজাহারে তাই এফআইআর করা সম্ভব হয়নি তবে যদি বাদী পক্ষ এজাহার পরিবর্তন করে দেন তাহলে আমরা এফআইআর করে আসামি গ্রেফতার করবো। বাল্য বিবাহের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি সাহেব বলেন, শারীরিক গঠন অনুযায়ী ১৬/১৭ বছর হলে বাল্য বিবাহ হবে না। এদিকে অনুসন্ধানী টিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আ স ম আব্দুর নুর এর সাথে সন্ধা সাড়ে সাতটায় কথা বলার পরেই তাৎক্ষণিক প্রায় আধা ঘন্টা পরে ওসি সাহেব ভোক্তভোগীর দাদাকে ফোন করে ডেকে নেন থানায়। এর পর অভিযোগের তদন্তকারী অফিসার সাব-ইন্সপেক্টর মফিজুল ইসলাম মামলা না করার জন্য পরামর্শ দেন ভোক্তভোগীদেও এর পর রাত তিনটা পযর্ন্ত ভোক্তভোগীদের রেখে পরিবর্তন করে নেন এজাহার। কিন্তু পরিবর্তনকৃত এজাহারে উল্লেখ নেই অপহরণের কোন কথাই। তবে ঘটনার পর থেকে ভিকটিম ও অভিযোগকারীরা আতঙ্কে আছে। বখাটেরা প্রতিশোধের নেশায় বড় ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করছে এলাকার অনেকেই। আর এ জন্য বিষয়টি আমলে নিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২২ জুন, ২০২১/দ ম দ