টাঙ্গুয়ার হাওরে শিশু হামজা ও শরীফের সংসার চলে পর্যটকদের গান শুনিয়ে

0
402
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ- সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা মো.শরীফ মিয়া (১১) ও মো.আমির হামজা (১৩)। যে বয়সে হাতে বই ও কলম থাকার কথা সেই বয়সে ছোট নৌকার পিছনে বসে হাতে বয়টা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়া পর্যটকদের নিজে কন্ঠে টাঙ্গুয়ার গান শুনিয়ে যে টাকা পায় সেই টাকা দিয়ে সংসার চালায় তারা।টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, মো.শরীফ পর্যটকদের মধু কই কই আর বিশ খাওয়াইলা কোন কারনে ভালোবাসা গান ও দিলা আমার আর অন্যদিকে মো.আমির হামজা পর্যটকদের শাহ আব্দুল করিমের বন্দে মাইয়া লাগাইসে পিরিতি শিখাইসে, দেওয়ানা বানাইসে কি যাদু করিয়া বন্দে মায়া লাগাইসে। এই গান গুলো শুনাচ্ছেন আর তাদের কন্ঠে মুগ্ধ হয়ে গান শুনছেন টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক আরমান ও আকাশ সহ তার বন্ধুরা। গান শেষে টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের দুই শিশু শিল্পী সাথে কথা হয়। তাদের জমে থাকা বুকের ভিতর কষ্টের কথা ও নষ্ট হয়ে যাওয়া স্বপ্ন গুলোর কথা। মো.শরীফ মিয়া, পিতা আলিম উদ্দিন, সে টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের গোলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা, রোজ সকাল ৬টার সময় ডাল ভাত খেয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের উদ্যোশে সে ছোট নৌকা নিয়ে রওনা হয়। প্রায় ২৫ মিনিট নৌকা চালিয়ে সে টাঙ্গুয়ার হাওরে এস পৌছে। শরীফ জানায়, তার বাবা অসুস্থ, সংসার চালানোর মত কেউ নেই, কিছু জায়গা ছিল সেগুলো বিক্রি করে বাবার চিকিৎসা করিয়েছে। কিন্তু তার বাবা আগের মত কাজ করতে পারেন না, বাবার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন তাই চড়া সুধে টাকা এনে ছোট এই নৌকাটি কিনেছি, এই নৌকা দিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের আমি নৌকায় তুলে হাওর ঘুরাই এবং তাদের গান শুনাই। সে আরো বলে, আমি ছোট বেলা আমার বাবার মুখ থেকে প্রথমে হাসন রাজা ও আব্দুল করিম রাধারমণ ওআর নানা গান শুনি  পর বাবা কাছ থেকে আমি হাসন রাজার, রাধারমণ,শাহ আব্দুল করিম অনেক গুলো গান শিখি সেই গান গুলো এখন গেয়ে যে টাকা রোজগার করি তা দিয়ে বাবার চিকিৎসা ও আমাদের সংসার চলে তবে সুধে টাকা যে নৌকাটি আমি কিনেছিলাম সেই টাকাও পরিশোধ করে এখন আমি নিজেই এই নৌকার মালিক।
অন্যদিকে আমির হামজা, পিতা মো.কালা মিয়া। সে টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের সিলানী তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা। বাবা, বড় বোন ও মাকে নিয়ে তাদের সংসার।  সে শাহ আব্দুল করিমের গান গেয়ে সংসার চালায়। আমির হামজা জানায়, অনেক স্বপ্ন ছিল আমার, একদিন অনেক বড় একজন শিল্পী হবো, সেই জন্য আমার বাবা, মা আমাকে খুব স্কুলে ভর্তিও করে দিয়েছিল, আমি ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়া লেখা করেছি, দাদুর কাছ থেকে শাহ আব্দুল করিমের গান শিখেছি। এরপর সে কান্না জড়িত কন্ঠে সে বলে উঠে হটাৎ করে একদিন আমার দাদু মারা গেলেন, সেই সাথে আমার গান শিখাও শেষ হয়ে গেল। দাদু মারা যাওয়ার পর আমি আর বিদ্যালয়ে যাইনি, বাবা মা আমাকে অনেক মারধর করেন তারপরও আমি পড়তে বসিনা, বড় বোনকে বিয়ে দেওয়ার সময় বাবা চড়া সুধে টাকা এনেছিলেন, সেই টাকা ফিরৎ দিতে গিয়ে আমাদের সংসার চলছিল না, টিক তখন ওই একটি ছোট নৌকা ভাড়া নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে আসি এবং দাদুর শিখানো গান পর্যটকদের শুনিয়ে যে টাকা পাই তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। সে আরো জানায়, স্যার সবার ভাগ্য সব কিছু থাকেনা। বড় শিল্পী হতে পারিনি তাতে কি জীবনের শিল্পী ত হতে পেরেছি আর এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। গান শুনা পর্যটক আরমান আহমদ বলেন, আজকে অভাবের কারণে দুটি সুন্দর প্রতিভা নষ্ট হয়ে গেল। আমি মনে করি হাওরের প্রতি সরকারকে আরো বেশি করে নজর দেওয়া উচিৎ সেই সাথে হাওর পাড়ের লোকেদের জন্য বিশেষ কোন প্রকল্পের ব্যবস্থা করা যাতে করে কেউ যদি অসুস্থ হলে কোন শিশুকে পড়া লেখা বাদ দিয়ে সংসারের বুজা কাদে না নিতে হয়। গান শুনা আরেক পর্যটক কামরান আহমদ  বলেন, হাওরে এসে এত সুন্দর কন্ঠে গান শুনতে পারব কল্পনাও করতে পারিনী, ধন্যবাদ শরীফ ও আমির হামজাকে এত সুন্দর একটি গান শুনানোর জন্য।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২২ জুন, ২০২১/ এম এইচ সি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here